শ্যামলা ত্বককে উজ্জ্বল করতে নানারকমের উপচার রয়েছে। কিন্তু কোন ত্বকের উপর কী ধরনের রূপটান ব্যবহার করলে তা কার্যকরী হবে, তার পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার ত্বকের প্রকৃতির উপর। তাই সবার আগে জানা জরুরি আপনার ত্বকের প্রকৃতি সম্পর্কে। যদি ত্বকে ট্যান পড়ে গিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে উপচার হবে আলাদা, আবার গ্লো-হীন ত্বকের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ঘরোয়া উপাদান।

ট্যান ফ্রি ত্বক পেতে

১) পাকা পেঁপে অথবা পাকা কলা ভালো ভাবে ম্যাশ করে নিয়ে ট্যান পড়ে যাওয়া অংশে লাগান। ট্যানের পাশাপাশি এটি শুষ্ক ত্বকের জন্যও দারুণ রেমিডি।

২) যদি ট্যানের সাথে সাথে পিম্পল-এর সমস্যাতেও ভোগেন, সেক্ষেত্রে আলু আর টম্যাটোর রস একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। তবে, শুষ্ক ত্বকের জন্য এই রূপটান একেবারেই উপযুক্ত নয়। কারণ এগুলির ব্যবহারে ত্বক আরও বেশিমাত্রায় রুক্ষ হয়ে উঠবে। দিনের যে-কোনও সময় এমনকী রাতেও ব্যবহার করতে পারেন এই রূপটান।

৩) বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির অক্সিজেন-যুক্ত লাইটনিং মাস্ক পাওয়া যায়। যেগুলি খুব দ্রুত শ্যামলাভাব দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে। এগুলি ত্বকের টেক্সচার অনুযায়ী বানানো হয়ে থাকে। শুধু খেয়াল রাখবেন সেটি অবশ্যই যেন ব্র্যান্ডেড হয়।

৪) ১ চামচ দুধ, ১ চামচ ক্রিম আর ১ চামচ ওট্স পাউডার একসাথে মিশিয়ে মুখের উপর হালকা হাতে রাব করুন। ১০ মিনিট রেখে দিন। তৈলাক্ত ভাব দূর করতে দইও ব্যবহার করতে পারেন। এতে শুধুমাত্র ট্যান দূর হয় তাই নয়, ত্বকের জন্যও এটি ভালো এক্সফোলিয়েশন।

একটা বিষয় মাথায় রাখবেন কোনও কিছুর বিনিময়েই কারওর কপ্লেকশন বদলানো সম্ভব নয়, তবে এগুলির ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল, টানটান, মোলায়েম এবং দাগমুক্ত।

ত্বক উজ্জ্বল করতে

ত্বক উজ্জ্বল রাখার প্রথম ধাপটি হল প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।

১) প্রতিদিন স্নানের আগে বেসনের মধ্যে সামান্য কাঁচা হলুদবাটা মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি মুখে, হাতে, গলায়, পায়ের খোলা অংশে লাগান। হালকা হাতে রাব করুন। পাঁচ মিনিট রেখে একটা টানটান ভাব তৈরি হলেই ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলুন।

২) ত্বক শুষ্ক হলে হলুদের পরিবর্তে মধু সহযোগে বেসনের প্রলেপ লাগাতে পারেন।

৩) ক্লিনজার হিসাবে দুধের সরের বিকল্প নেই। কাজেই এই হোমরেমিডি দিনে দুবার ব্যবহার করতেই পারেন।

৪) বাজার চলতি টোনার ব্যবহার না করতে চাইলে গোলাপের কিছু পাপড়ি ঈষদুষ্ণ জলে কিছুক্ষণ ফেলে রাখুন। তারপর ঠান্ডা হয়ে গেলে একটা পাত্রে ঢেলে রাখতে পারেন। এটি  দিনের মধ্যে একবার ব্যবহার করলেই ত্বক টানটান থাকবে।

৫) প্যাক হিসাবে দই, মধুর মিশ্রণ দারুণ কার্যকরী। এতে ত্বকের কালোভাব দূর হবে পাশাপাশি ত্বককে উজ্জ্বলও করে তুলবে।

৬) প্যাক হিসাবে ডিমের কুসুমকে কাজে লাগাতে পারেন। ডিমের কুসুমের সঙ্গে খানিকটা মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন একটা সিল্কি ভাব চলে আসবে।

৭) ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরাতে কালো আঙুরের জুড়ি মেলা ভার। ৬-৭টা কালো আঙুর মধু সহযোগে মুখে, গলায় লাগিয়ে হালকা হাতে মাসাজ করুন। মিনিট পনেরো-কুড়ি রেখে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিনদিন এটি ব্যবহার করলে তফাতটা নিজেই বুঝতে পারবেন।

৮) গুঁড়ো করে রাখা কমলালেবুর খোসার সঙ্গে সামান্য চালেরগুঁড়ো অথবা ওট্স মিশিয়ে মুখে, গলায় হালকা হাতে রাব করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন এই স্ক্রাব ব্যবহার করবেন। এতে ত্বকের মরা কোশ দূর হবে এবং ত্বকের দাগছোপও হালকা হবে।

৯) ম্যাড়মেড়ে, শুষ্ক ত্বকের জৌলুস ফেরাতে অ্যালোভেরা জেলও ব্যবহার করতে পারেন। এটি বাজারেও পেয়ে যাবেন। চাইলে টবেও বসিয়ে রাখতে পারেন। মাথার ত্বকেও এটি লাগাতে পারেন।

১০) তেলের মধ্যে কয়েকটা কেসর ফেলে ফুটিয়ে রাখুন। এই তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের শ্যামলাভাব দূর হবে। ত্বক হয়ে উঠবে, উজ্জ্বল, টানটান।

১১) খাবারের তালিকা থেকে ভাজাভুজি একেবারে বাদ দিয়ে দিন। তেলের সঙ্গে সঙ্গে চেষ্টা করুন মশলাও কম খেতে। গরমে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে টকদই খান। আর রোজ একটা করে মরশুমি ফল খেতে ভুলবেন না। দেখবেন ভিতর থেকে একটা উজ্জ্বল ভাব চলে আসবে আপনার ত্বকে। পারলে দিনে একটা করে আমলকী খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটা যেমন আপনার হজমশক্তি বাড়াবে তেমনই ত্বকেরও কালোভাব দূর করতে সাহায্য করবে।

১২) কোল্ডড্রিংকস্ এড়িয়ে চলুন। এটি ত্বকের মারাত্মক ভাবে ক্ষতিসাধন করে।

১৩) রোদে বেরোনোর আগে এফপিএফ ৩০যুক্ত সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না।

১৪) রাতে শুতে যাওয়ার আগে মেক-আপ অবশ্যই তুলে নেবেন। এর জন্য ভালো কোনও ক্লিনজিং মিল্ক ব্যবহার করতে পারেন। নারকেল তেলও ভালো ক্লিনজার। মিনিট পাঁচেক মুখে লাগিয়ে রাখার পর তুলো দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিতে পারেন। তারপর জল দিয়ে ধুয়ে নেবেন। দুটির ক্ষেত্রেই কার্যকারিতা সেই একই।

১৫) রাতে শুতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ব্র্যান্ডেড কোনও নাইটক্রিম অথবা ময়েশ্চারাইজার মুখে, হাতে, গলায় লাগিয়ে নিন। এতে ত্বক হয়ে উঠবে নরম তুলতুলে।

১৬) ত্বক ভালো রাখার আরও একটি সহজ উপায় হল হাসিখুশি থাকা। মন খুলে হাসুন। দেখবেন আপনার ত্বকও হাসবে।

১৭) সর্বোপরি প্রচুর পরিমাণে জল খান।

১৮) পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমটাও জরুরি।

অনেক সময় ব্রণ-র কারণেও ত্বক শ্রী-হীন হয়ে পড়ে। তাই ব্রণ-র থেকে বাঁচতে কয়েকটি টিপস নীচে দেওয়া হল–

ক) অয়েলি ত্বকের ক্ষেত্রে ব্রণ-র সমস্যা বেশি মাত্রায় লক্ষ্য করা যায়। তাই প্রথমেই ত্বক থেকে অয়েলি ভাব দূর করা প্রয়োজন। সপ্তাহে ৩ দিন মুলতানি মাটির ফেস প্যাক লাগান। এতে ব্রণ-র আধিক্য খানিকটা হলেও কমবে।

খ) স্নানের সময় বেসনের মধ্যে নিমপাতাবাটা মিশিয়ে মুখে লাগান। মিনিট কুড়ি রেখে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ সারানোর জন্য এর থেকে ভালো ওষুধ আর হয় না।

গ) ব্রণ-র উপর সাদা টুথপেস্ট লাগাতে পারেন। এটাও ভীষণ কার্যকরী।

ঘ) সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন তেতো খাওয়ার চেষ্টা করুন। ভাজাভুজি, ক্রিমজাতীয় কোনও খাবার, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংকস্ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রচুর জল খান। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম প্রয়োজন।

ঙ) অয়েল বেসড ক্রিম এড়িয়ে চলুন।

চ) শুতে যাওয়ার আগে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।

ছ) বাজারে নিম বেসড অনেক ধরনের প্যাক পাওয়া যায়। পছন্দ অনুযায়ী যে-কোনও একটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

এগুলি মেনে চললে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত আর টানটান।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...