অন্যান্য বছরের তুলনায়, এই দেড় বছরে পরিবেশ, নিয়ম-কানুনে অনেক পরিবর্তন এসেছে সারা বিশ্ব জুড়ে। সোশ্যাল গ্যাদারিং বলুন, উৎসব অনুষ্ঠান বলুন বা ঘোরাফেরা সবকিছুতেই কিছু নিয়মকানুন মেনে আমাদের চলতে হচ্ছে। ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও কোনও আলাদা নিয়ম নেই। তবে অন্য বছরের তুলনায় এখন ফ্যাশন নিয়ে নতুন ভাবনা উদ্ভাবন হলেও সেটাকে বাস্তবাযিত করতে একটু সময় লাগছে বেশি।

বাড়ির বাইরে মানুষের আনাগোনা অনেক কমে গেছে। অফিসেও হাজিরা অর্ধেক হয়েছে কারণ ওয়ার্ক ফ্রম হোম ট্রেন্ডটাই চলছে। বিয়ে অনেকে সারছেন বাড়িতেই সীমিত আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে। পোশাকের বাহুল্য একেবারেই বর্জন করছেন। টুরিস্ট-এর সংখ্যাও অগের তুলনায় হাতে গোনা বলা চলে। এসবের মধ্যেও মেইনটেন করতে হচ্ছে সোশ্যাল ডিস্ট্যানন্সিং এবং মাস্ক। কারণ পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে মাস্ক থেকে নিয়ে নানা ধরনের ফ্যাব্রিকের মাস্ক-ও ফ্যাশন-এ ইন এখন। যেমন সুতি তো আছেই সঙ্গে সিল্ক, জ্যাকুয়ার্ড, বেনারসি সবই চলছে।কিন্তু প্রথমে সার্জিকাল মাস্ক পরে তার উপর এই ডিজািনার মাস্ক পরাই ভালো৷

 

করোনাকালীন ফ্যাশন ট্রেন্ড

ক) মুখ ঢাকা পোশাক নিয়ে ডিজাইনাররা এবছর বেশি কাজ করছেন। এতদিন জ্যাকেটের সঙ্গে হুডস চলত। এবার সেখানে সংযোজন হয়েছে অর্ধেক মুখ ঢেকে রাখার ব্যবস্থাও। এছাড়াও টুপি বা হেডগিয়ার-এর সঙ্গেও থাকছে মুখ ঢেকে রাখার বিকল্প। অবশ্য মুখে মাস্ক পরাটা অত্যাবশকীয়।

খ) ফ্রিঞ্জ-এর চল এবছর বেশ লক্ষণীয়। ড্রেস ব্লেজার, পেনসিল স্কার্ট, পঞ্চো, স্টোল এমনকী ক্লাচ ব্যাগেও ফ্রিঞ্জ ডিজাইন-এর ট্রেন্ড চলছে।

গ) পোশাকে নেট-এর ব্যবহার এখন ফ্যাশন। নেটের শাড়ি থেকে শুরু করে টপস, গাউন, সালোয়ার সুট সবেতেই নেট এবছরের সবথেকে পছন্দের ফ্যাব্রিক।

ঘ) নিটেড গাউনস ট্রেন্ড হতে চলেছে। হাঁটু ছোঁয়া এই লং-নিটেড পোশাকে, বাড়িতে আরাম করে বসে অফিসের কাজ সারতে পারবেন। এগুলি যেমন স্টাইলিশ তেমনই আরামদায়ক।

ঙ) সিংগল ব্রেস্টেড জ্যাকেটস, ব্লেজার, সুট কিছুটা ফেলে আসা সময়ের কথা মনে করায়। নব্বইয়ের দশকের এই স্টাইল স্টেটমেন্ট এখন নতুন মাত্রা নিয়েছে ক্লিন লুক এবং সঙ্গে কমফর্ট-এর ব্যাপারটা মাথায় রেখে।

চ) ইযং জেনারেশনের মেযেরা স্টাইল নিয়ে অনেক বেশি সচেতন এবং সাহসী। পিক আ বু কাট-আউটস ফ্যাশন, বহু মেযেরাই এখন ট্রাই করছেন। আমরা সাধারণত বলিউডের অভিনেত্রীদের পোশাক দেখেই ফ্যাশনের ট্রেন্ডটা ফলো করি। এক্ষেত্রে সোনম কপূর, ঐশ্বর্য্য রাই বচ্চন, কঙ্কনা রানাওয়াত ফিল্ম-এর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানগুলোতে বা ল্যাক্মে ফ্যাশন উইক-এ কী পোশাকে র‌্যাম্প-এ হাঁটলেন তা নতুন প্রজন্ম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে এবং সেই ধরনের পোশাকের প্রতি আকর্ষিত হয়। সাইড স্লিটস-ই বলুন বা পোশাকের বিভিন্ন জায়গা উন্মুক্ত রাখার ফ্যাশন এখন বেশ ইন।

ছ) ওয়ার্কিং মেয়েদের জন্য শার্ট এবং টাই সবসময়ে ফ্যাশনে রয়েছে। নিটেড স্কার্ট অথবা ট্রাউজার্স-এর সঙ্গে পেয়ার আপ করে স্মার্ট লুক নিয়ে আসতে পারেন। পোশাকটি আরামদায়কও বটে। লেদার জ্যাকেটের স্থান সবসময় ফ্যাশান-এর উপরে থাকে। যারা ফ্যাশন কনশাস তাদের কাছে লেদারের তৈরি প্যান্ট, জ্যাকেট, ফ্যাশন ফ্লন্ট করার একটা মাধ্যম। এই ফ্যাশন কোনও দিনই পুরোনো হবে না।

ভারতীয় ফ্যাশনে এই ইন্ডো-ওয়েস্টর্ন পোশাকের চাহিদা যেমন রয়েছে, তেমনি ভারতীয় পোশাকও ফ্যাশন জগতে বেশ খানিকটা সুনাম অর্জন করেছে। এথনিক ইন্ডিয়ান পোশাকের বিশেষত্ব হল সারা বছর ধরেই এই স্টাইল অব্যাহত থাকে।

(ক) ফয়েল প্রিন্টেড কুর্তার স্টাইল বছরের যে-কোনও সময়ে চলতে পারে। বাড়ির কোনও অনুষ্ঠান হোক বা বন্ধুর বিয়ে। ম্যাচিং ওড়না এবং লোয়ার-এর সঙ্গে পরে হয়ে উঠুন ফ্যাশনিস্তা।

(খ) ক্রপ টপ অনেক রকম ফ্যাব্রিকের হয়। কটন, সিল্ক, ব্রোকেড, ভেলভেট ইত্যাদি। এই ফ্যাব্রিকগুলি খুবই আরামদায়ক। ম্যাচিং লোয়ারের সঙ্গে পরুন অথবা শাড়ির সঙ্গে পেয়ার-আপ করুন। সবার চোখ থাকবে আপনার উপর।

(গ) ম্যাক্সি স্কার্টস পরুন কুর্তি বা কটন টপস-এর সঙ্গে।

(ঘ) সিল্ক সিগারেট প্যান্টস-এর ফ্যাশন পুরোনো হবার নয়। পেয়ার-আপ করুন টিউনিক, কুর্তা বা ক্রপ টপস-এর সঙ্গে।

(ঙ) পালাজো এবং কনটেম্পেরারি ধুতি প্যান্টস ক্যাজুয়াল লুক-কেই ফ্যাশনেবল করে তোলে।

(চ) লেহেঙ্গা-চোলির এথনিক বিউটি, ফ্যাশনের জগতে বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করার বিষয়। এর ফ্যাব্রিক, ডিজাইন, এমব্রয়ডারি, জরির কাজ, গোটার কাজ এইসব নিয়ে সারাক্ষণই এক্সপেরিমেন্ট চলতেই থাকে এবং নতুন নতুন ট্রেন্ড ফ্যাশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...