করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে আমাদের দেশের সর্বত্র। সুতরাং করোনা সংক্রান্ত কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি, আসুন এক্সপার্টের মুখ থেকে শুনে নেওয়া যাক।
করোনার সংক্রমণ আজও অব্যাহত। দেশের সর্বত্র নতুন করে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়ে গেছে। রোজই প্রকৃতি বদলাচ্ছে ভাইরাসটি। ইমিউনিটি পাওয়ার কম-বেশি অনুযাযী মানুষের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। কারও ক্ষতি বেশি হচ্ছে, কারও বা কম। লকডাউন এখন, ট্রাম-বাস-মেট্রো অর্থাৎ পরিবহণ ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ। অধিকাংশ সরকারি অফিস এবং সমস্ত বেসরকারি অফিস বন্ধ। এই অত্যধিক গরমেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রবল ভাবে আছড়ে পড়েছে আমাদের জনজীবনে। তাই নিজেদেরই সাবধান হতে হবে।
দ্বিতীয় দফায় কোভিডের ফিরে আসার কারণ
- আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং বাড়তে থাকা দূষণ
- লকডাউনের পর ব্যাবসা এবং বাজার সব খুলে যাওয়া
- উৎসব এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু থাকায়
- বহুদিন নিয়ম-শৃঙ্খলা মানার পর স্বাধীনতা পেয়ে নিয়মকে তুচ্ছ করার মানসিকতা।
আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে গত নমাসের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ নয়তো করোনায় আক্রান্ত হয়েছে আর নয়তো করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছে। কেউ সামান্য লক্ষণ বুঝলেই করোনার টেস্ট করাচ্ছে আবার অনেকে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ার পরও সামাজিক বয়কটের ভয়ে কোনওরকম টেস্ট করাচ্ছে না। অনেকে আবার অন্যদের হাসপাতালে কী ট্রিটমেন্ট করা হয়েছে জেনে নিয়ে করোনা পজিটিভ দেখিয়ে নিজেরাই দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছে। এর ফলে শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে।
সুতরাং রিপোর্ট পজিটিভ হোক কিংবা নেগেটিভ, হাসপাতালে ঘুরে এসেছেন কিংবা কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন, কিছু ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখা খুব জরুরি।
পোস্ট কোভিড কেয়ার
- পুষ্টিকর, বাড়ির তৈরি খাবার, চিকেন, কম মিষ্টি, প্রোটিন, ফল, স্যালাড, ফলের রস, টাটকা শাকসবজি, ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমোনো জরুরি
- ব্যায়াম অবশ্যই করা উচিত। ১৫ মিনিটের জন্য হলেও সূর্যের আলোয় হেঁটে আসা অথবা ঘরের মধ্যে অ্যারোবিকস করাটা আবশ্যক।
এই ধরনের অ্যাক্টিভিটি, মাংসপেশিতে রক্তসঞ্চার বাড়িয়ে হাড়েরও ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি-এর প্রবাহ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীরের স্ট্যামিনা বৃদ্ধি পায়।
গত ৩-৪ মাসের মধ্যে ক্লিনিকে যেসব রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের মধ্যে বেশির ভাগই কোভিড থেকে সেরে উঠেছে তাও প্রায় ১ মাস আগে অথবা পরিবারে কেউ কেউ পজিটিভ হয়ে থাকলেও তার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষের মনে ভয় এমন ভাবে চেপে বসেছে যে তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
কী কী রোগের শিকার হচ্ছে বেশি
প্যানিক ডিসঅর্ডার : হঠাৎ করে খুব ঘাবড়ে যাওয়ার লক্ষণ যার ফলে বুকে ব্যথা হওয়া, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, মাথাঘোরা, বমি ভাব, অজ্ঞান হয়ে পড়ব এরকম মনে হওয়া ইত্যাদি হয়ে থাকে কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষায় সব রিপোর্ট নর্মাল আসে।
ইনসোমনিয়া : ঘুম না আসা, ঘুমের মধ্যে অঘটন ঘটে যাওয়ার ভয়ে ঘুম না আসা, ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে ঘুম ভেঙে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, ঘাম হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
সোমেটাইজেশন ডিসঅর্ডার : সবসময় নিজেকে অসুস্থ মনে হওয়া, ছোটো ছোটো কারণে ভয় পেয়ে যাওয়া, বেশি চিন্তা করা, নেটে অসুখের লক্ষণগুলো খুঁজতে থাকা, বারবার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং টেস্ট করানো, রিপোর্ট নর্মাল এলেও কিছুতেই সেটা বিশ্বাস না করা।
ডিপ্রেশন : অবসাদের কারণে উদাস হয়ে পড়া, চুপচাপ হয়ে পড়া, নেগেটিভ চিন্তায় ডুবে যাওয়া, কাজের ইচ্ছা চলে যাওয়া, শিগগিরি ক্লান্ত হয়ে পড়া, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি।
এছাড়াও কোভিডের কারণেও আরও নানা ধরনের মানসিক সমস্যাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেখা দিচ্ছে।
মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে পোস্ট-কোভিড কেয়ার
- শারীরিক দূরত্ব মানুন সামাজিক দূরত্ব নয়
- ৬ ফুট দূরত্বে থেকে সকলের সঙ্গে কথা বলুন
- সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন
- একলা এবং আইসোলেটেড থাকবেন না।
১৫ মিনিট অন্তর অন্তর অক্সিমিটারে অক্সিজেন চেক করা, আধা ঘন্টা অন্তর জ্বর চেক করা, গুগল-এ কোভিড সম্পর্কিত নিউজ দেখতে থাকা ইত্যাদি ছেড়ে সারাদিনের দৈনন্দিন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।