গ্রীষ্মের মরশুমে শরীরের যে-কোনও অংশের ত্বকে ফাটার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে তবে যে অংশগুলি সূর্যের রশ্মির সংস্পর্শে বেশি উন্মুক্ত সেই অংশগুলি চোখে বেশি পড়ে এবং তার প্রতি মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।

ফাটা ত্বক সাধারণত দৃশ্যমান হয় যখন যে-কোনও ধরনের ত্বকের সঙ্গে আপস করা হয়। শুষ্ক এবং ইরিটেটেড ত্বকের লক্ষণ হল ফাটা ত্বক। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাও বৃদ্ধি পায়। হাত, পা, এবং ঠোঁট গরমকালে শরীরের যে-কোনও অংশের তুলনায় বেশি ফাটার সম্ভবনা থাকে। যখন কোনও ব্যক্তির ত্বক ড্রাই এবং ইরিটেটেড হয়ে পড়ে তখন ত্বকে ফাটল, কাটা দাগ পরিষ্কার ভাবে ফুটে ওঠে। এতে চুলকানির সমস্যাও বৃদ্ধি পায়। ফাটা ত্বকের জন্য কোনও স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহার করার সময় আপনি অপ্রীতিকর সংবেদনশীলতা অনুভব করতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে জলের তাপমাত্রা এবং বাড়ি পরিষ্কারের পণ্যগুলির প্রতি, ত্বক আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।

শরীরের যে-কোনও অংশের ত্বক গরমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তবে সূর্যের রশ্মিতে উন্মুক্ত জায়গাগুলির প্রতি মনোযোগ দেওয়া বেশি দরকার। এই সময় ত্বকের সাধারণ সমস্যাগুলির মুখোমুখি হতে হয়। অতিরিক্ত জলের ব্যবহার হাত এবং পায়ের ত্বক রুক্ষ করে তোলে। এই সমস্যা রোধ করতে হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করার পরেই ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করা উচিত। এগজিমা এবং সোরিয়াসিস এর মতো রোগের কারণেও ত্বকে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

স্মুথ এবং হাইড্রেটেড ত্বকের স্তরে প্রাকৃতিক তেল বজায় থাকে ফলে ত্বক নিজস্ব স্বাভাবিক আদ্রতা বজায় রাখতে পারে এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে না। কিন্তু ত্বকে যদি পর্যাপ্ত তেল না থাকে তবে এটি আদ্রতা হারায়, যা ত্বককে শুষ্ক ও সঙ্কুচিত করে তোলে যার ফলে ফাটা ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়।

সমস্যা গুরুতর হওয়ার আগেই বাড়িতে বসেই ফাটা ত্বকের সমস্যা এড়াতে পারেন।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর অজয় রানা (প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক, ইলামেড) আমাদের জানালেন কী ভাবে ফাটা ত্বক থেকে মুক্তি পেতে হয়।

 

ফাটা ত্বক থেকে মুক্তি পেতে এই টিপসগুলি ব্যবহার করতে পারেন :

১) ময়েশ্চরাইজিং মলম বা ক্রিম – শুষ্ক ত্বকে যেহেতু ফাটার সম্ভবনা অধিক থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও বাড়াবাড়ির পর্যায় চলে যায়, তাই ত্বক হাইড্রেটেড রাখাটা খুব জরুরি। ফাটা ত্বকে সবসময় ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করুন।

২) স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস ব্যবহার করুন যেমন জোজোবা অয়েল, নারকেল তেল, অলিভ অয়েল এবং শিয়া-বাটার।

৩) গরমজল দিয়ে হাত ধোবেন না। খুব গরম জলে স্নান করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়বে এবং ত্বক ফাটার সমস্যা তৈরি হয়।

৪) টপিকাল হাইড্রোকার্টিসোন ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন যা কিনা ফাটা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। ফাটা ত্বকে চুলকানি এবং লাল লাল চাকা চাকা দাগের জন্য এই ক্রিম খুবই লাভজনক। এতে থাকা করটিকোস্টেরয়েডস যে-কোনও ফোলা বা জ্বালা ভাব দূর করতে সক্ষম।

৫) ত্বক নিয়মিতভাবে এক্সফলিয়েট করা জরুরি। জেন্টল এক্সফলিয়েশন ত্বকের স্তর থেকে মৃত এবং শুষ্ক কোশ হটিয়ে দিতে সাহায্য করে। পা এবং গোড়ালির জন্য এই উপায়টি অবলম্বন করলে উপকার পাবেন।

৬) গরমে ফাটা ত্বক এড়াতে চাইলে অ্যানটিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।

৭) এছাড়া ফাটা ত্বক খুব মাইল্ড সেন্টেড ক্লিনজার ইউজ করেও ধুয়ে নিতে পারেন।

৮) অনেক সময় পোশাকের মেটেরিয়াল ত্বকের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এই ক্ষেত্রে স্মুদ এবং ব্রিদেবল সুতির বা সিল্কের পোশাকই পরুন। কোনও রকম হাইপোআলার্জিক ডিটারজেন্ট এবং ফ্যাব্রিক সফটনার ব্যবহার করলেও ফাটা ত্বকে প্রদাহর সমস্যা থেকে আরাম পাবেন।

৯) ফাটা ত্বকের সমস্যা যদি খুব গম্ভীর হয়ে ওঠে তাহলে লিকুইড স্কিন ব্যাণ্ডেজ খুব ভালো অপশন। এই ওটিসি ট্রিটমেন্ট ক্র্যাকড স্কিনকে খুব তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এর মধ্যে ছোটো একটি ব্রাশ দেওয়া থাকে যার সাহায্যে লিকুইড-টি ফাটা ত্বকে লাগিয়ে নেওয়া যাবে। লিকুইড শুকিয়ে গেলেই ফাটা জায়গাটা সিল হয়ে যাবে।

১০) পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বক কে সিল এবং প্রোটেক্ট করে ফাটা ত্বকের যত্ন নিতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের আদ্রতা ধরে রেখে ত্বককে তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...