মা হওয়ার motherhood অনুভূতি এক ঐশ্বরিক অনুভূতি। সমাজের চোখে, গর্ভধারণ এবং মাতৃত্বে উপনীত হওয়া চাঁদ, সূর্য ওঠার মতোই খুই সাধারণ ব্যাপার– কিন্তু যে-নারী সন্তানের জন্ম দিচ্ছে, তার কাছে কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটি প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জিং এবং মনে গেঁথে থাকার মতো একটা ঘটনা। অনেক দম্পতির কাছে এটা একটা দীর্ঘ পরীক্ষা ও প্রতীক্ষারও বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

সমাজ পরিবর্তনশীল। সুতরাং জীবনের মূল্যবোধের রোজই পরিবর্তন ঘটছে। একজন ভালো অভিভাবক হয়ে ওঠার সম্পূর্ণটাই নির্ভর করছে পরিবর্তনটা বোঝার, তাকে মেনে নেওয়ায় এবং সেই মতো নিজেকে পরিচালনা করায়।

প্রকৃতির দুটি আশীর্বাদ– গর্ভধারণ এবং মাতৃত্ব motherhood। এই দুটো ছাড়া পৃথিবী জনমানবশূণ্য হতো। জীবনের সৌন্দর্য ভাগ করে নেওয়া এবং তাকে প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করার মতোই কেউ থাকত না এই বিশাল পৃথিবীতে। এইজন্যেই নারী সবার শীর্ষে। তারাই ধারক এবং বাহক। সকলের কাছ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধার সে হকদার। তার ত্যাগ স্বীকারকে কোনওভাবেই অবহেলা করা চলে না। জীবনের মূল্যবোধের প্রতিমূর্ত্তি হিসেবেই নারীকে দেখা হয়। আর এই কারণেই সন্তানের প্রথম শিক্ষা শুরু হয় তার মায়ের কাছেই।

একটি মেয়ে যখন পৃথিবীতে জন্মায় মাতৃত্বের অধিকার নিয়েই পৃথিবীর আলো দেখে সে। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পার করে তার শৈশব উপনীত হয় যৌবনে। নানা ধরনের মানসিক, শারীরিক পরিবর্তনের স্তরও তাকে পেরোতে হয়। এই সময় মা-ই পারে সন্তানের দুশ্চিন্তা মেটাতে যেটা স্বাভাবিক ভাবেই জেনেটিকাল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের মনে বাসা বাঁধে। অন্যদিকে মেয়ের মনের ইচ্ছা, উচ্চাকাঙক্ষা-কে সঠিক পথে চালিত করতে অভিভাবক হিসেবে বাবার অবদান অনস্বীকার্য। মা এবং বাবা, এই দুই অভিভাবকের মিলিত চেষ্টায় মেয়েটির, ফ্যামিলি ভ্যালুজ, ট্র্যাডিশন, সংস্কৃতি, বড়োদের সম্মান করা, দায়িত্ব নিতে শেখা ইত্যাদির শিক্ষাপ্রাপ্তি ঘটে।

তবে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঠিক এমনটাই ঘটে বা ঘটবে এমন আশা রাখা ভুল। সঠিক পথে সন্তানকে চালনা করতে হলে মা-বাবাকেও প্র্যাকটিক্যাল এবং ম্যাচিওর হতে হবে। জীবনের ভালোমন্দের মধ্যে যে সূক্ষ্ম ব্যবধান রয়েছে, সেটার সঙ্গেও সন্তানকে পরিচিত করাতে হবে। একই বাড়িতে পুত্র-সন্তান এবং কন্যা-সন্তানের বেড়ে ওঠার মধ্যে কোনও তফাত রাখা ঠিক নয়। পরিবেশগত কিছু বিষয়ও মেয়েটির বেড়ে ওঠার উপর প্রভাব ফেলতে পারে যেমন, মেয়েটি শহরের পরিবেশে বড়ো হয়েছে নাকি মফসসল অথবা গ্রামের পরিবেশে বড়ো হয়েছে? এত কিছুর উপর নির্ভর করে একটি মেয়ে বড়ো হয়। এরপর বিয়ে হয়ে আসে স্বামীর সংসারে। স্বাভাবিক ভাবেই মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করার জন্যে তার প্রস্তুতি শুরু হয় মানসিক ভাবে। গর্ভধারণ করার আগেই দম্পতিকে ভেবে নিতে হয়, সন্তানকে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন দিতে তারা সক্ষম কিনা। সুতরাং বিয়ের কত পরে একটি মেয়ে গর্ভধারণ করতে প্রস্তুত, সেটা ঠিক হয় স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে।

দুটি বিষয় এখানে আলোচনায় রাখতে হয়– প্রথম, বিবাহিত দম্পতিরা সময় প্ল্যান করে প্রথম সন্তান নেওয়ার কথা ভাবেন এবং তাতে সাফল্যও পান। এটি ওই দম্পতির কাছে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। দ্বিতীয়, বিবাহিত দম্পতি সময় প্ল্যান করে প্রথম সন্তান নেওয়ার কথা ভাবেন কিন্তু বহু চেষ্টা সত্ত্বেও স্ত্রী গর্ভধারণ করতে অক্ষম হন। নানারকম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে স্ত্রীকে পেরোতে হয়, প্রকৃতির এখানে কিছু করার থাকে না। শেষমেশ অনেক ক্ষেত্রেই দত্তক নেওয়ার কথা ভাবতে হয় সন্তানহীন দম্পতিকে।

এই দুটি কেস আলাদা হলেও লক্ষ্য কিন্তু এক– মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করা এবং সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানো। অথচ দুটি ক্ষেত্রে দুই নারীর মানসিক অবস্থা সম্পূর্ণ আলাদা হয়।

গর্ভাবস্থায় মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তন

বিবাহিত নারীমাত্রেই মাতৃত্বের স্বাদ আস্বাদন করতে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং সকলেই প্রকৃতির এই অপার্থিব দানকে সাগ্রহে অভ্যর্থনা জানায়। গর্ভাবস্থার এই সময়কালটা সব স্ত্রী-ই বিশেষ আনন্দে কাটানো পছন্দ করে। বিশেষ মনোযোগ এবং সতর্কতাও তারা অবলম্বন করে। স্বামীদেরও এই সময় কিছু কর্তব্য থাকে যেমন সারাদিনে স্ত্রীয়ের সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটানো, স্ত্রী-র কষ্ট এবং আনন্দ ভাগ করে নেওয়া, স্ত্রী-র কী দরকার, কী মনের ইচ্ছে সবকিছুর খেয়াল রাখা ইত্যাদি।

বাড়িতে যদি বড়ো কেউ থাকেন তাহলে দম্পতির উপর ন্যস্ত দায়িত্ব অনেকটা ভাগ হয়ে যায়। গর্ভাবস্থার শুরু থেকে সন্তান জন্মানো অবধি পরিবারে সেই স্ত্রী বিশেষ আদরে লালিত হন। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভধারণের শুরুতে, অনেক মহিলাই সামান্য ডিপ্রেশনেরও শিকার হন। পরবর্তী সময়ে যত দিন যেতে থাকে মানসিক এই স্থিতিরও পরিবর্তন হতে থাকে। গর্ভধারিণীর খাবার খাওয়ার ইচ্ছারও তারতম্য ঘটে। অনেক প্রিয় খাবারও তখন বিস্বাদ মনে হয় এবং অন্য কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হতে থাকে যা পরিবারের লোকেরা আনন্দে মেনেও নেয়।

সন্তানের জন্মের দিন যত ঘনিয়ে আসে

সন্তানের জন্মের দিন যত কাছে আসতে থাকে মাতৃত্বের motherhood অনুভূতি ততই একজন নারীকে ঘিরে ধরে। সন্তানের নড়াচড়া গর্ভবতী স্ত্রী নিজের শরীরে অনুভব করে আনন্দ পান। আবার মন শঙ্কিত হয়ে পড়ে যত দিন এগিয়ে আসতে থাকে। সকলেরই কাম্য থাকে সুস্থ সুন্দর একটি নতুন জীবন। কোনও অবস্থাতেই একজন গর্ভবতী নারীর আনন্দের তুলনা কিছুর সঙ্গে করা যায় না এবং কোটি টাকার বিনিময়েও এই আনন্দ কেনা যায় না।

সামাজিক তারতম্যের শিকার

আমাদের মানুষের ধর্ম-ই হল, যা চিরাচরিত প্রক্রিয়ায় চলে আসছে, তাই নিয়ে আমাদের খুব একটা মাথাব্যথা থাকে না। কোনও স্ত্রীয়ের গর্ভধারণ, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সুস্থ, সবল বাচ্চার জন্ম ইত্যাদি নিয়ে কোনও হইচই, বা বক্রোক্তি কেউ করে না। অথচ যেই কোনও গর্ভধারণের সমস্যা জটিল হয়ে ওঠে, অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্যে অথবা বাচ্চার জন্ম হয় কোনও সমস্যা নিয়ে– তখনই পাড়াপ্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনের মধ্যে শুরু হয় কানাঘুষো। সম্পূর্ণ দোষ গিয়ে পড়ে সদ্য হওয়া মায়ের উপর– মা প্রয়োজনমতো যত্ন নেয়নি, ডাক্তার এবং বড়োদের কথা অগ্রাহ্য করেছে ইত্যাদি নানা ধরনের সমালোচনা।

কর্মরতা অন্তঃসত্ত্বা এবং গৃহে থাকা অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীয়ের মধ্যে পার্থক্য

বাড়িতে থাকেন যে-স্ত্রী, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তিনি অনেক বেশি সুবিধা লাভ করে থাকেন, কর্মরতা মহিলার থেকে।

কর্মরতা মহিলাদের দু’টো দিকই সামলাতে হয়। কর্মক্ষেত্র এবং নিজের গর্ভাবস্থা। আমাদের দেশের সরকার, গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে অবশ্য এখন অনেক সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সন্তান জন্মাবার আগে এবং পরে গর্ভবতীর ছুটির ব্যবস্থা সঙ্গে ফুল পে। এর সঙ্গে স্বামীকেও ছুটি দেওয়া থাকে দরকারে স্ত্রীয়ের পরিচর্যায় থাকার জন্য। এই সময়ে স্বামী এবং স্ত্রীয়ের একত্রে থাকাটাও উভয়ের মধ্যে এমন একটা বন্ধনের সৃষ্টি করে যে, ভবিষ্যতে নবজাত সন্তান ভালোবাসায় সিক্ত হয় পৃথিবীর আলোয় চোখ মেলে।

সন্তান জন্মাবার আগে (গর্ভাবস্থায় ৭ মাস হয়ে যাওয়ার পরই) নিজের এবং শিশুর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস মেটারনিটি ব্যাগে গুছিয়ে রাখা বাঞ্ছনীয় যাতে পরে গিয়ে মুশকিলে না পড়তে হয়। দুটি ব্যাগ করা উচিত। একটি মায়ের এবং অপরটি শিশুর।

বাচ্চার জন্মের সময় মায়ের দরকার

১)   বেডশিটস

২)   ন্যাপকিনস

৩)   ফ্লাস্ক

৪)   ড্রেসিং গাউন (সামনে বোতাম)

৫)   ঘরে পরার চপ্পল

৬)   পুরোনো নাইটড্রেস অথবা লম্বা টি-শার্ট

৭)   পাউডার, ক্রিম, লোশন ইত্যাদি

৮)   অবসর সময় রিল্যাক্স করার জন্যে বই, গান শোনার যন্ত্র

৯)   ডিসপোজেবল প্যান্টিস

১০) ঠিকানার বই, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের খবর দেওয়ার জন্যে

ডেলিভারি হয়ে যাওয়ার পর

১)   নাইট গাউন

২)   হেয়ার ব্রাশ

৩)   বাড়ি যাওয়ার জামাকাপড়

৪)   ফিডিং ব্রা

৫)   স্যানিটারি ন্যাপকিনস্

৬)   কাগজের কিছু প্লেট ও গ্লাস

৭)   ৩-৪টি মোটা কাপড় বাচ্চার দোলনায় পাতার জন্য

৮)   বাচ্চার নাভি পরিষ্কার করার জন্যে ক্যালেনডুলা

৯)   বাচ্চার বাড়ি ফেরার জামাকাপড়

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...