এমন বহু দম্পতি রয়েছেন যাঁরা পরস্পরের ই-মেল, সোশাল মিডিয়া এমনকী, ফোনের পাসওয়ার্ডও পরস্পরের সঙ্গে শেয়ার করেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সম্পর্ক যতই গভীর হোক না কেন, একটা সম্মানজনক Privacy কি থাকা উচিত?

মনোবিদদের মতে Privacy জরুরি একটি জিনিস।ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা এমনই একটি স্পর্শকাতর বিষয়,যা ভুল মানুষের সঙ্গে শেয়ার করলে জীবনে জটিলতা বাড়তে পারে।অনেকেই আবার মনে করেন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে কোনও গোপনীয়তা থাকা উচিত নয়। আদর্শ দাম্পত্য সম্পর্ক বলতে এরকমই একটা ছবি, অনেকের চোখের সামনে ভাসে।বিশ্বাসটাই যেখানে মূলধন, সেখানে কোনও আড়াল-আবডাল কেন থাকবে! আবার ভিন্ন মতটা হল, দুজন মানুষ যখন দেহে মনে পৃথক– তখন এটুকু প্রাইভেসি থাকবে না-ই বা কেন?

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে অন্তত ৭০ শতাংশ স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের পিন নাম্বার, পাসওয়ার্ড তো জানেনই, এমনকী তাঁরা ফিঙ্গারপ্রিন্টও অদলবদল করেন। স্বামীর ব্যাংক-এর এটিএম, ক্রেডিট কার্ড ডিটেইলস সবই স্ত্রীয়ের নখদর্পণে। উলটোটাও অনেক সময় ঘটে। সমীক্ষায় এও দেখা গেছে, এই পাসওয়ার্ড বা পিন জানিয়ে দেওয়া নিয়ে দম্পতিদের তেমন কোনও আপত্তিও নেই।

কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় তখনই, যখন পারস্পরিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।তখন একে অন্যের প্রাইভেসির অপব্যবহার করেন। সন্দেহের বশে পার্টনারের ফোন চেক করা কখনওই রুচিসম্মত নয়।আবার সম্পর্ক খারাপ বলেই স্বামীকে ধনেপ্রাণে শেষ করতে রাতারাতি তার ব্যাংক-এ জমা টাকা তুলে নেওয়াও কাজের কথা নয়।

স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার এই পাসওয়ার্ড শেয়ার করার বিষয়টি যদিও একান্ত ব্যক্তিগত চয়েস, তবু কোথাও যেন এর আড়ালে রয়েছে এক ধরনের দখলদারি মানসিকতা। নিজের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলো অপর একজন মানুষের কাছে কতটা খুলে দেওয়া উচিত, তা অবশ্যই একবার ভেবে দেখা উচিত।

মনোবিদরা বলেন সম্পর্কের মধ্যে আস্থা থাকাটা যেমন একান্ত জরুরি, ততটাই জরুরি কিন্তু পরস্পরকে স্পেস দেওয়া।এই ব্যক্তিগত স্পেসটা নির্ধারণ করে দুজন মানুষ পরস্পরের প্রতি কতটা সম্মানসুচক মানসিকতা রাখেন।কিছুটা Privacy রাখলে প্রকারান্তরে সম্পর্কটাকেই সম্মান জানানো হয়।

বিশ্বাস গড়ে উঠতে বহু বছর সময় লাগে। সেই সময়টা দিতে হবে এবং তারপরেও সচেতন থাকা দরকার।নতুন সম্পর্কে পাসওয়ার্ড শেয়ার না করাই ভালো। সদ্য প্রেমে পড়ে থাকলে আবেগে ভেসে গিয়ে নিজের যাবতীয় গোপন তথ্য দিয়ে বসবেন না। কারণ এই সম্পর্ক কতদিন টিকবে আপনি  নিজেও জানেন না৷  কোনও কারণে সম্পর্ক ভেঙে গেলে আপনার পাসওয়ার্ডগুলোও কিন্তু বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এমনকী, লং টার্ম সম্পর্কেও পাসওয়ার্ড শেয়ার করা যায় কিনা, তা নির্ভর করে ওই দম্পতির পারস্পরিক রসায়নের উপর। দশ বছর একসঙ্গে থাকলেও সেই কেমিস্ট্রিটা না-ও থাকতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড শেয়ারের প্রশ্নই ওঠে না! সম্পর্কে সুস্হতা জরুরি। পাসওয়ার্ড নয়। ব্যাক্তিগত ডিটেইলস শেয়ার করলেই যে ঘনিষ্ঠতা বাড়বে, নাহলে নয়– এমন ভুল ধারণা মনে পুষে রাখবেন না।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...