সদ্য মা হওয়ার পর যারা ভেবে ভেবে অস্থির হচ্ছেন যে কবে এবং কী ভাবে আবার আগের মতো রূপলাবণ্য ফিরে পাবেন, তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি আমরা। নতুন মায়েদের বলছি, একদম অস্থির হবেন না। বিউটি পার্লার না গিয়ে নিজের সৌন্দর্যের খেয়াল রাখা সম্ভব ঘরোয়া উপায়ে। গর্ভাবস্থার পরবর্তী পর্যায়ে আপনারা কী করে নিজেদের ত্বকের যত্ন নেবেন সেটাই জানাচ্ছি আমরা।

বাচ্চার ধকল সামলাতে গিয়ে যেহেতু খাওয়াদাওয়া ও ঘুমের সময়ের ঠিক থাকে না, ফলে চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে। তাই প্রথমেই নজর দিন খাবারে।New Moms-দের জন্য রইল পরামর্শ৷

চুলের জন্য ম্যাজিক খাদ্য-তালিকা

বাদাম, আমন্ড, আখরোট, কুমড়োর বীজ, নারকেল এবং চিনেবাদাম চুলের জন্য বিশেষ উপকারী খাদ্য। কারণ এদের প্রতিটিই ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর। আযুর্বেদ অনুযাযী সন্ধের দিকে বাদাম খাওয়া উচিত কারণ ওই সময়ই শরীরের ক্ষয়ক্ষতি সারিয়ে তোলার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি শুরু হয়।

মশলার গুণাগুণ

প্রতিটি ভারতীয় গৃহস্থবাড়িতে-ই হলুদ, গোলমরিচ, কারিপাতা, সরষের মতো সাধারণ কিছু মশলাপাতি মজুত থাকে। চুলে শক্তি পৌঁছে দেওয়ার জন্য এইসব মশলা বিশেষ কার্যকরী। রান্না নামিয়ে ফেলার আগে তাতে কিছু কারিপাতা দিয়ে দিন। তাতে পাতার তরতাজা ভাব বজায় থাকবে, রান্নাতে আলাদা স্বাদ আসবে আর আপনার তরিতরকারি ও সবজির পুষ্টিগুণও অনেকটাই বেড়ে যাবে।

সবুজ শাকসবজি

ঝলমলে সুন্দর ত্বক আর চুল চাইলে সবুজ শাকসবজিকে খাদ্য-তালিকায় রাখতেই হবে। সবুজ শাকসবজিতে পর্যাপ্ত আয়রন, ভিটামিন এ এবং সি থাকে যা শরীরে এনার্জির জোগান দেয় এবং স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যও খুবই প্রয়োজন। আয়রন চুলের ফলিকল-এ অক্সিজেন পৌঁছে দেয় এবং ভিটামিনের অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস দ্রুত চুলের ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করে। ফলে চুল ভঙ্গুর ও দুর্বল হয়ে যেতে পারে না। বাচ্চাকে ফিড করানোর ক্ষেত্রেও এই পুষ্টি আপনার শরীরে বিশেষ প্রয়োজন।

ত্বকের সমস্যায়

সন্তানের জন্মের পরে মায়ের শরীরে হরমোনজনিত যেসব পরিবর্তন ঘটে, তাতে ঠোঁটের চারপাশে, গালে আর কপালে পিগমেন্টেশন দেখা দিতে পারে। এটিকে বলা হয় মেলাস্মা। দ্বিতীয় যে-পরিবর্তনটি সন্তানের জন্মের পরে মায়েদের ত্বকে প্রায়ই দেখা যায়, তা হল অ্যাকনে। এটির কারণ হল, সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে পরেই হরমোনের ভারসাম্যে তারতম্য হয় বলে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে শরীরের তৈলগ্রন্থিগুলি থেকে আর ত্বকের বন্ধ ছিদ্রগুলি থেকে তৈলাক্ত পদার্থের ক্ষরণ বাড়ে।

হ্যালিউরনিক অ্যাসিড-যুক্ত ভালো গুণমানের ময়শ্চারাইজ়ার নিয়মিত ব্যবহার করলে স্ট্রেচ মার্ক তৈরি হওয়া কমাতে সহায়তা করে। সানস্ক্রিন আর ডিমেলানাইজ়িং ক্রিম হাইপারপিগমেন্টেশনের মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।

আপনি ত্বকের সুরক্ষার জন্য নিয়ম করে ১০ মিনিট সময় খরচ করুন। উদ্দেশ্য একটাই ত্বক যেন হয়ে ওঠে তরুণতর, উজ্জ্বল, স্বাস্থ্যের দীপ্তিতে ভরপুর আর কোনও সমস্যা যেন তাকে স্পর্শ করতে না পারে। ত্বকের যত্নে যে-নিয়মই অনুসরণ করুন না কেন, তা কিন্তু নিয়মিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে ত্বকে তার সুফল ধরা পড়বে না। এর জন্য আপনাকে প্রচুর টাকা খরচ করে নানা ট্রিটমেন্ট করাতে হবে না, বা দামি দামি স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টও কিনতে হবে না। পুরোনো, পরিচিত কিন্তু নির্ভরযোগ্য সামগ্রী, যেমন ভেসলিন পেট্রোলিয়াম জেলিও সময়ে সময়ে আপনার ত্বকের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট। বিশেষ করে সরু সরু বলিরেখা বা ত্বকের কুঞ্চনের মতো কিছু নাছোড় সমস্যার ক্ষেত্রে তা দারুণ কার্যকর।

ভেসলিন তৈরি হয় মিনারেল অয়েলস আর মোম দিয়ে তার ফলেই এর ঘনত্ব জেলির মতো হয়। এই ধরনের টেক্সচার ত্বকে জল আর আর্দ্রতা ধরে রাখার পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী। এটি নাইট ক্রিম হিসেবে দারুণ কাজ করে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে মুখে লাগিয়ে নিন ভেসলিনের পাতলা স্তর, তাতে জল আর আর্দ্রতা ত্বকেই ধরা থাকবে, বাইরে আসতে পারবে না। তাই সারা রাতে ত্বক শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যাতেও ভুগবেন না।

ভেসলিন ত্বকে ব্রণ হতে দেয় না বা অ্যাকনের বাড়বৃদ্ধিতে সহায়তা করে না। এটি ব্যবহার করলে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় না আর ত্বকে কোনও অবাঞ্ছিত সমস্যাও সৃষ্টি হয় না। তবে যদি আপনার ত্বকে আগে থেকেই অ্যাকনে থাকে, তাহলে ভেসলিনের ব্যবহার এড়িয়ে চলাই ভালো।আপনার চোখের নীচের ত্বকে ভেসলিনের প্রলেপ দিয়ে রাতে ঘুমোতে যান। সকালে উঠে দেখুন, চোখের চারপাশের ত্বক কেমন স্বাস্থ্যে ঝলমল করছে!

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...