শারদোৎসবের কটা দিন যে আপামর বাঙালির কাছেও স্পেশাল– তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কমবেশি সবারই লক্ষ্য থাকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই কটা দিন একটু ডিফারেন্ট লুক পেতে। একটু আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে, যাতে পার্টনার নজর না ফেরাতে পারে। সেই জন্যই রইল অনন্য হয়ে ওঠার ৩টি সান্ধ্য মেক-আপ টিপস।
গ্রিন-আইজ অ্যান্ড পিচ লিপস লুকস –
অক্টোবর-এর প্রায় মাঝামাঝি দুর্গোৎসব থাকার ফলে আবহাওয়ায় একটা পরিবর্তন আসবে যার কারণে ত্বকে তার প্রভাব পড়বে। বাতাসে আদ্রতা কমে আসতেই ত্বক ড্রাই হতে আরম্ভ হবে। ড্রাইনেস দূর করার জন্য প্রথমেই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ত্বকের গ্লসি ভাব বজায় রাখতে ফিকশন স্প্রে মাস্ট। এই স্প্রে ব্যবহার করা হয় মূলত বেস শাইনিং-এর জন্য। এরপর অল্প ক্রিম দিয়ে এক কোট প্রাইমার করে নিন। পরে সুপার ব্যালেন্সড্ ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করুন। তারপর স্পঞ্জ দিয়ে অ্যালাবেস্টার কালার নিয়ে কান, ঘাড় আর লাইন এরিয়া-য় অ্যাপ্লাই করে ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এবার টান্সলুসেন্ট পাউডার স্মাজ করে নিন।
তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, কখনওই ফাউন্ডেশন চোখের উপরের পাতায় লাগাবেন না। যদি চোখের চারপাশে কালো ভাব অর্থাৎ ডার্ক সার্কল থাকে সেক্ষেত্রে ম্যাক এর এনসি-৪৫ আর এনসি-৩০ দারুণ কার্যকরী। এরপর প্রথমে লাইট এবং পরে ডার্ক অরেঞ্জ টোন-এর কনসিলার প্রয়োগ করে যথাযথ ভাবে সেট করুন। যদি স্কিন ড্রাই আর বলিরেখা যুক্ত হয়, তাহলে ক্রিম বেসড্ কনসিলার-ই বাছুন। ডার্ক স্কিন-এর উপর অরেঞ্জ আর পিচ কালার একেবারে পারফেক্ট। ফেয়ার স্কিন-এর জন্য ইয়েলো টোন ব্যবহার করুন।
১) আই মেক-আপ করার আগে আই বেস লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না। বেস ফোঁটা ফোঁটা করে লাগিয়ে, তারপর ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে নিন।
২) আইব্রো-র উপর সবসময় ব্রাউন শ্যাডো নীচ থেকে রিজনিং করতে করতে লাগান।
৩) আইব্রো দুটিকে সুন্দর করতে কালো রঙের জেল লাইনার নীচের দিকে অর্থাৎ পয়েন্টিং এরিয়ায় লাগান।
৪) মাইক্রো পাউডার ব্যবহারের জন্য অ্যাঙ্গুলার ব্রাশ-ই যথাযথ।
৫) এবার চোখের উপর ক্রিমি বেসড আইশ্যাডো আঙুলের সাহায্যে লাগান।
৬) চোখ ছোটো হলে বড়ো দেখাতে আইব্রো-র নীচে লাইট শেড-ই পারফেক্ট।
৭) ব্লেল্ডিং ব্রাশের সাহায্যে গ্রিন কালার সকেট লাইনের উপর ব্লেন্ড করে নিন।
৮) এবার ব্রাশ-এর উপর স্প্রে করে প্রথমে ফিক্সিট পরে গোল্ডেন কালারের পিগমেন্ট লাগান।
৯) আইব্রো-র নীচে সিলভার হাইলাইটার লাগিয়ে নিন।
১০) গ্রিন আইশ্যাডো-কে আরও গ্লসি বানাতে এক্সট্রা কালার লাগান। পরে হালকা অরেঞ্জ শেড লাগিয়ে নিন।
১১) মাসকারা লাগানোর আগে আইল্যাসেজ কার্ল করে নিন।
১২) মাসকারা লাগানোর নিয়ম হল নীচ থেকে উপর দিকে স্ট্রোক দেওয়া।
১৩) জেট ব্ল্যাক জেল বেসড্ লাইনার ২ কোট লাগিয়ে নিন।
১৪) এবার কাজল পেনসিল দিয়ে কাজল পরে নিন। তবে মাথায় রাখবেন কাজলটি স্মাজ প্রুফ হওয়াটা আবশ্যক।
১৫) ডার্ক ব্রাউন দিয়ে চিকস কন্টুরিং করে নিন। মুখের ফ্ল্যাবি জায়গাগুলিতে কন্টুরিং করার পর ব্লেন্ড করে নিন।
১৬) শেষে ম্যাট ব্রোঞ্জার আর ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার লাগিয়ে নিন। এতে শাইনি ভাব চলে আসবে।
১৭) চিকস-এর উপর পিংক শেড লাগিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। পরে সফট অ্যান্ড জেন্টল হাইলাইটার লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না।
১৮) লিপ প্রাইমার লাগানোর পরে পিচ কালারের লিপস্টিক লাগিয়ে নিন। তারপর লিপগ্লসের ফাইনাল টাচ-আপ দিন।
এয়ারব্রাশ এবং সিলিকন মেক-আপ লুক –
আপনার সৌন্দর্যে অনন্য মাত্রা যোগ করবে এয়ারব্রাশ এবং সিলিকন মেক-আপ লুক। একটু অন্যরকম লুক পেতে হলে এটি ট্রাই করে দেখতে পারেন। নিরাশ হবেন না বরং প্রয়োজনের থেকে বেশি-ই অ্যাটেনশন পাবেন আপনার পার্টনারের থেকে। সুতরাং দেরি না এই বিশেষ দিনটিতে অ্যাপ্লাই করেই ফেলুন। সবার আগে এয়ারগান-এ সিলিকন প্রাইমার ভরে মুখ, কান, গলায় স্প্রে করুন। দু-চার মিনিট ওই ভাবেই রেখে দিন। তারপর চোখের উপর গোল্ড বেস লাগিয়ে নিন। বেস লাগানোর পরে আঙুলের ডগায় গ্লিটার নিয়ে ভালো করে স্মাজ করুন। এরপর পিগমেন্ট বেস লাগিয়ে নিন। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন– লাইনার লাগানোর আগেই গ্লিটার ব্যবহার করবেন। আইলাইনার সবসময় জেট ব্ল্যাক কালারের হলেই ভালো। কন্টুরিং-এর জন্য চিকস-এর উপর ম্যাট ব্রোঞ্জার-ই এখন চলছে। এই ম্যাট ব্রোঞ্জার দিয়েই ফোরহেড, নোজ আর জ-লাইনেও কন্টুরিং করে ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে নিন। খেয়াল রাখবেন কন্টুরিং এমন ভাবে করবেন যাতে একেবারে নর্ম্যাল মনে হয়। চিকস-এ গ্লসি লুক আনতে গোল্ড গ্লিটার অ্যাপ্লাই করুন। আইব্রো-র নীচেও সোনালির ছোঁয়া দিন। বেশ একটা ট্রেন্ডি লুক চলে আসবে। পিংক কালারের আর এক কোট চিকস-এর উপর লাগিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। শেষে কোরাল রঙের শ্যাডো লাগান। এবার পেল রঙের কনসিলার দিয়ে নাক-বরাবর আইব্রো-র মাঝামাঝি অংশে এবং চিন পর্যন্ত লাগান। শাইনি ভাব আনার জন্য হাইলাইটার লাগিয়ে নিন।
যতই সাজুন না কেন লিপস্টিক ছাড়া কিন্তু তা অপূর্ণ। তাই ঠোঁট রাঙানোর আগে লিপ প্রাইমার ভালো করে লাগিয়ে নিন। তারপর রেড চেরি লিপ লাইনার দিয়ে আউটলাইন করে নিন। এবার রেড বা অরেঞ্জ কালার দিয়ে ঠোঁট ভরে নিন।
উজ্জ্বল বর্ণের জন্য –
উজ্জ্বল বর্ণের ক্ষেত্রে এমন মেক-আপ বাছা উচিত, যাতে শাইনিং এফেক্ট থাকে। কারণ ফরসা ত্বককে আরও ফরসা করতে গেলে সেটা বেশ বেমানান হতে পারে। ফ্যাকাশে গায়ের রং কখনওই কারওর পছন্দ হতে পারে না। সেক্ষেত্রে কতকগুলি ব্যাপার মেনে চলুন।
১) এয়ারব্রাশে স্কিন টোন অনুযায়ী ইয়েলো কালারের প্রাইমার ভরে মুখ, কান এবং ঘাড়ে স্প্রে করুন।
২) আই মেক-আপ যদি ডার্ক টোনের হয় সেক্ষেত্রে লিপস্টিক হবে ডার্ক শেডের আর যদি আই মেক-আপ লাইট হয় তাহলে মেক-আপ হবে ডার্ক টোনের।
৩) মেক-আপ করার ৫ মিনিট পর ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার পাফ করে নিন।
৪) ২ ফোঁটা জোজোবা অয়েল এয়ারব্রাশ মেশিনে ভরে স্প্রে করুন। এতে মুখে একটা শাইনিং ভাব চলে আসবে।
৫) মিড ইয়েলো টোনের কনসিলার ব্লাশার দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন।
৬) এবার ফ্ল্যাট ব্রাশ দিয়ে আই মেক-আপ পাউডার লাগান।
৭) আই পেনসিল ব্যবহার করুন। তবে খেয়াল রাখবেন পেনসিল যেন স্মাজ প্রুফ না হয়। স্মোকি আইজ-এর জন্য স্মাজিং পেনসিল-ই ভালো। এবার চোখের অর্ধেক অংশে ব্লেন্ড করে নিন।
৮) চোখের কোণ পর্যন্ত কাজল লাগান।
৯) আর একবার পেনসিল দিয়ে কোট করে নিন।
১০) চোখের শেষ পর্যন্ত কাজল লাগাবেন না। চোখের অর্ধেক অংশই কভার করুন।
১১) এবার আইব্রো-র নীচে স্মাজ হয়ে যাওয়া কালারের ট্রান্সজ্যাকশন লাগান। এটা একটু ব্রাউন ঘেঁষাই দেখতে লাগে।
১২) জেট ব্ল্যাক রঙের জেল লাইনার লাগিয়ে নিন।
১৩) স্মোকি আইজ-এর উপর আইব্রোজ হাইলাইটার একেবারে বেমানান।
১৪) এবার ব্লু শ্যাডো নিয়ে আইব্রো-র নীচে আর চোখের সাইড পর্যন্ত ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে নিন।
১৫) ব্ল্যাক গ্লিটার দিয়ে ব্ল্যাক রঙের উপর লক করে দিন।
১৬) এবার মুখের উপর ব্রোঞ্জার দিয়ে কন্টুরিং করে নিন। চিকস-এর উপর পিংক শ্যাডো লাগান।
১৭) স্মোকি আইজ-এর সঙ্গে হেভি আই ল্যাশেজ দারুণ যায়। আই ল্যাশেজ লাগানোর পরে ১০ সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে রাখুন।
১৮) শেষে লিপগ্লসের ট্রান্সপারেন্ট কালার লাগিয়ে নিন।
এগুলি মেনে চললে হলফ করে বলা যায় দিনটা কেবলমাত্র আপনার-ই হবে।