বছরের কয়েকটা মাস বাদ দিয়ে বেশিরভাগ সময়টাই এখানকার আবহাওয়া থাকে ভ্যাপসা। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ থাকে অত্যন্ত বেশি। এর সঙ্গে যোগ হয় প্যাচপ্যাচে বৃষ্টি। পোকামাকড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার এক আদর্শ আবহাওয়া নিঃসন্দেহে। এছাড়াও অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্নতাও বিশেষ কারণ। যেসব জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না, অন্ধকার ঘুপচি জায়গা, ময়লা জমা হয়ে থাকা, ড্যাম্পধরা দেয়াল, কোণ প্রভৃতি স্থানে পোকামাকড় বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

পোকামাকড়ের উপস্থিতি যেমন বিরক্তিকর, তেমনি স্বাস্থ্যের পক্ষেও হানিকারক। সুতরাং এর হাত থেকে নিস্তার পেতে হলে কিছু টিপ্স আমাদের মেনে চলা উচিত।

স্যাঁতসেঁতে আর্দ্র আবহাওয়ায় প্রধাণত আরশোলা, উই, পিঁপড়ে, মশা, মাছি, ইঁদুর ইত্যাদি নানা ধরনের পোকামাকড়ের অস্বস্তিকর উপস্থিতিতে আমাদের জীবন উত্যক্ত হয়ে ওঠে। বছরে বারো মাসই আরশোলার উৎপাত, উপদ্রব লেগেই থাকে। প্রথম থেকেই যদি এর বৃদ্ধি রোধ করা না যায়, তাহলে টিবি, ডিসেন্ট্রি, মাঝেমধ্যেই জ্বর, অ্যাজমার মতো অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। সুতরাং নালি, অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে জায়গা, ডাস্টবিন ইত্যাদি জায়গায় যেখানে আরশোলা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, সেখানে বেগন, হিট স্প্রে করে রাখা উচিত।

রান্নাঘরের বেসিনে অথবা বাড়ির অন্যান্য ওয়াশবেসিনের নালিতে ফিনাইল এবং ন্যাপথলিনের বল্স ফেলে রাখা উচিত যাতে নালি দিয়ে আরশোলা বা অন্যান্য পোকামাকড় বাড়িতে প্রবেশ করতে না-পারে। মিক্সি অথবা অন্যান্য ইলেকট্রিকের সরঞ্জামের মধ্যে যাতে আরশোলা ডেরা না-বানায়, তাই তার প্যাঁচ খুলে ন্যাপথলিনের কয়েকটা বল্স ওর মধ্যে রেখে দেওয়া উচিত।

এ ছাড়াও আরশোলার উৎপাত থেকে বাঁচতে, বোরিক অ্যাসিড পাউডারের সঙ্গে সমপরিমাণে সাধারণ কাচার সাবান কুরে নিয়ে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ থেকে ছোটো ছোটো বল বানিয়ে বাসনের তাক, চাল-ডালের কৌটোর আশেপাশে ফেলে রাখুন। মাইক্রোওয়েভ আভেন, ইলেকট্রিক আভেন ইত্যাদির নীচেও বলগুলি একটু ভিজিয়ে আটকে রাখুন। আরশোলা পালিয়ে যাবে।

বাড়িতে পিঁপড়ের উপদ্রব নেই, এমন দাবি হয়তো কারও পক্ষেই করা সম্ভব নয়, বিশেষকরে আমাদের এখানকার মতো আবহাওয়ায়। লাল, কালো পিঁপড়ে শীতকাল ছাড়া প্রায় সবসময়েই চোখে পড়ে। শুধু মাত্র মিষ্টি খাবারের প্রতি যে এরা আকৃষ্ট হয় এমন নয়ঃআটা, সুজি, রান্না করা খাবার, রুটি ইত্যাদি আঢাকা থাকলেই পিঁপড়ে তাতে ভরে যায়। লাল পিঁপড়ে এমনই বিষাক্ত যে, শরীরের যেখানে কামড়াবে চুলকানি হয়ে সেখানটা লাল হয়ে ফুলে যাবে। জ্বালাও করবে।

পিঁপড়ের হাত থেকে বাঁচতে, রান্নাঘরের শেল্ফ এবং ফ্লোর পরিষ্কার রাখতে হবে। মাটিতে খাদ্যসামগ্রী কিছু পড়ে গেলে তৎক্ষণাৎ মুছে নিতে হবে। খাবার আঢাকা রাখা যাবে না। এছাড়া যেখানে পিঁপড়ে বেশি হচ্ছে সেখানে ক্রেজি লাইন অথবা লক্ষ্নণ রেখা দিয়ে গোলাকৃতি রেখা বানিয়ে রাখলে পিঁপড়ে মরে যাবে। এরা যেখানটায় বাসা বানায়, সেখানে ক্রেজি পাউডার খানিকটা ঢেলে দিন অথবা সিমেন্ট দিয়ে জায়গাটা সিল করে দিন।

মাঝেমধ্যে রান্নাঘরের বাসনপত্র বাইরে বার করে স্প্রে (বেগন অথবা হিট) মেরে রাখুন এবং কিছুক্ষণ সব বন্ধ রেখে তারপর রান্নাঘর পরিষ্কার করে বাসন রাখুন। জলে কেরোসিন তেল মিশিয়ে মাঝেমধ্যেই শেল্ফ এবং ফ্লোর মুছে নেবেন। বোরেক্স পাউডারে হলুদ মিশিয়ে পিঁপড়ে বেরোবার জায়গায় যদি দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও উপকার পাওয়া যাবে। জানলায় গন্ধক-এর (সালফার) টুকরো রেখে দিলে বাইরে থেকে রান্নাঘরে পিঁপড়ে ঢুকবে না। আটা, চিনি ইত্যাদির কৌটোর পাশেও যদি লক্ষ্মণ-রেখা টেনে দেওয়া হয়, পিঁপড়ে ধারেকাছে আসতে পারবে না।

মশা, মাছির উপদ্রব বাড়িতে রোগের জীবাণু বহন করে আনে। মাছি থেকে কলেরা, ডায়ারিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগ হয় আর মশা বহন করে আনে ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গুর মতো ভয়ংকর রোগের জীবাণু।

এগুলি যাতে বাড়িতে না-হয় তার জন্য কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। ঢাকনা বন্ধ ডাস্টবিন ব্যবহার করা, মশা, মাছি যেখানে হচ্ছে সেখানে ডিডিটি ছড়ানো, ঘরবাড়ি ফিনাইল দিয়ে মোছা ইত্যাদি। একটি ছোট্ট পেঁয়াজে লোবানের তেল (বেনজইন) ঢেলে ঘরে ঝুলিয়ে রাখুন মশা পালিয়ে যাবে। এছাড়া বাজারে মশা তাড়াবার কয়েল এবং শিশিবন্দি লিকুইড-ও পাওয়া যায়। নিমপাতা, লোবান, কর্পূর জ্বালালেও মশা, মাছি ঘর থেকে পালিয়ে যাবে।

রান্নাঘরে মশা মাছি তাড়াতে গরম তাওয়ায় এক চামচ কফি পউডার ঢেলে জ্বালিয়ে ধোঁয়া করুন। খাবার টেবিলের ঠিক মধ্যেখানে এক গুচ্ছ টাটকা পুদিনাপাতা রাখলে মাছি আসা বন্ধ হবে। বাড়ির পাপোশ, কার্পেট ইত্যাদি ফিটকিরি এবং ফিনাইলের জল দিয়ে পরিষ্কার করুন। বাড়িতে মশা, মাছি হবে না।

বাড়ির ভিতর স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কাঠের আসবাবপত্র যদি বহুদিন রাখা থাকে তাহলে উই লাগার সম্ভাবনা থাকে। জামাকাপড়, কাগজেও উই লাগতে পারে। কাপড় এবং কাগজে নিয়মিত রোদে দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া শুকনো নিমপাতাও রেখে দিতে পারেন। কাঠের আসবাবপত্রে উই লাগলে চুন ছড়িয়ে দিন। বাজারেও উই মারার ওষুধ পাওয়া যায়।

টিকটিকির উপস্থিতিও খুবই বিরক্তিকর সব গৃহস্থের কাছেই। দেয়ালে, ছবির পিছনে, দরজার পাল্লায় হামেশাই টিকটিকির দেখা মেলে। খাবারে পড়ে গেলে, খাবার বিষাক্ত হয়ে যায়। টিকটিকির সমস্যা দূর করতে হলে দেয়াল পরিষ্কার রাখতে হবে। এর উপর কীটনাশক স্প্রে করে ঝাড়ু দিয়ে মেরে বাইরেও ফেলে দিতে পারেন। বাড়িতে যাতে টিকিটিকি না ঢোকে তার জন্যে অনেকে দেয়ালে ময়ূরের পালক লাগিয়ে রাখে।

 

মাকড়সা-র উপদ্রব কমাতে হলে, একটা কাপড়ের টুকরো কেরোসিন তেলে ডুবিয়ে লম্বা লাঠির মুখে লাগিয়ে নিন। লাঠির সাহায্যে তেল লাগানো কাপড়টা সিলিং-এর গায়ে বুলিয়ে দিলে মাকড়সা জ্বাল বানাবে না। একই উপায়ে দরজা, ঘরের কোনা, আলমারির ভিতরেও কোরোসিন তেলে ডোবানো কাপড় বুলিয়ে রাখুন।

বাড়িতে ইঁদুর মারার জন্যে, ইঁদুর মারার ওষুধ অথবা ইঁদুর ধরার খাঁচা ব্যবহার করুন। এছাড়া ন্যাপথলিন বল্সও ব্যবহার করতে পারেন। কাঠের আসবাবে ছারপোকা হলে ফুটন্ত গরমজল ঢালতে হবে। কীটনাশক ওষুধ এবং কেরোসিন তেলও ছড়াতে পারেন। শোবার তোশক পুরোনো হয়ে গেলে ছোটো ছোটো পোকা তাতে বাসা বানায়। তোশকের নীচে গোলমরিচের দানা ফেলে রাখলে পোকা চলে যাবে এবং আপনাকেও বিরক্ত করবে না।

এই টিপ্সগুলি মেনে চললে বাড়িঘর পোকামাকড় থেকে মুক্ত রাখতে পারবেন এবং শরীরকেও রোগমুক্ত করতে পারবেন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...