ব্যস্ততার যুগ। মানুষের কছে সময় কম। ঘুমচক্ষু খুলেই কাজে লেগে পড়া। পুরুষ, মহিলা নির্বিশেষে ব্যস্ততায় কেটে যায় সময়। তাই সময়কে মূল্য দিতেই হয়।
সংসারের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকাটা মেয়েদের তুলনায় কম। তবে সকলের ক্ষেত্রেই যে কথাটা প্রযোজ্য এমনটা নয়। অথচ পুরুষের সমান দায়িত্ব নিয়েই কিন্তু মেয়েদের একশো শতাংশ ইনভলভ্ড হতে হয়, সংসারে এবং দফতরে। তাই বাড়ি এবং অফিস, এই দুই জায়গাতেই পারফরমেন্স বেস্ট রাখতে মেয়েদের সময়ের হিসেব বেশি কষতে হয়। বাড়িতে স্বামী, সন্তান, অফিসের দায়িত্বপূর্ণ কাজের প্রেসার উপরন্তু সমাজের চহিদা—এই তিনের সমন্বয়ে মেয়েদের উপর চাপ সৃষ্টি হয় বেশি। টাইম ম্যানেজমেন্টে তাই মেয়েদের জুড়ি মেলা ভার। সব জায়গায়ই তারা এক্সপার্ট আর তা না হলেই পিছিয়ে পড়ার ভয় মনে উঁকি মেরে যায়। আপনিও সহজেই সময়কে বশ করতে পারবেন। এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু ফরমুলা এখানে দেওয়া হল, যা আপনার কাজে লাগতে পারে।
দফতরের নিয়ম, সংসারের এই নিয়মের কিন্তু বাইরে নয়। অফিস মানেই সময়ের সীমাবদ্ধতা আছে, স্পেসিফিক কাজের চাপ রয়েছে। নিজের ক্যাপাবিলিটি প্রমাণ করার এর থেকে ভালো জায়গা আর নেই। পারফেক্ট টাইম ম্যানেজমেন্ট-ই হল খ্যাতির শিখরে পৌঁছোবার মারণাস্ত্র। সঠিকভাবে সময়কে ব্যবহার করতে চাইলে কয়েকটি পয়েন্ট মনে রাখা জরুরি।
জীবনে কী করতে চান তার একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই
মানুষ বেশিরভাগই কনফিউশন-এর শিকার হয় কারণ কী কাজ তার করা উচিত তার কোনও সুস্পষ্ট ধারণা তার থাকে না। সময় নষ্ট হওয়ার এটা একটা প্রধান কারণ। সেজন্য প্রথমেই উচিত একটা সুস্পষ্ট গোল অথবা দিশা তৈরি করে নেওয়া– কী করতে চাই এবং তার জন্য কতটা সময় দেওয়া উচিত? একটা পদক্ষেপ নেওয়ার আগেও প্ল্যানিং-এর দরকার। প্ল্যানিং ছাড়া এগোলে বন্যার জলে খড়কুটোর মতোই ভেসে যেতে হবে। দফতরে কী কাজ রয়েছে, আপনার আলটিমেট লক্ষ্য কী, সেটা বিবেচনা করে এগিয়ে যেতে পারলে সাফল্য হাতের মুঠোয় এসে আপনিই ধরা দেবে।
জেগে মিথ্যে স্বপ্ন দেখবেন না
একবার নিজের পথের দিশা ঠিক করে ফেললে বারেবারে তা পরিবর্তন করবেন না। মানুষের মন স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। কোনও লক্ষ্যে স্থির ধৈর্য রেখে এগিয়ে চলা মানুষের জন্য কষ্টকর।মস্তিষ্কের ইচ্ছেয় নিজেকে সবসময় পরিচালিত হতে দেবেন না। কোনও কাজ করতে মনস্থ করেন, তাহলে সংকল্প দৃঢ় করুন এবং কাজটা অবশ্যই শেষ করুন। থমাস অ্যালভা এডিসন সারাজীবনে বহুবার ব্যর্থ চেষ্টা করে শেষে ইলেকট্রিক বাল্ব বানাতে সফল হয়েছিলেন। উনি যদি চেষ্টা করাই বন্ধ করে দিতেন তাহলে হয়তো ইলেকট্রিক বাল্ব-এর আবিষ্কারই হতো না। সুতরাং আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন এবং লক্ষ্য স্থির রেখে সফল হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।
প্রায়োরিটি সেট করুন
অফিসের বহু কাজের মধ্যে কয়েকটা কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। কাজগুলির একটা সরাসরি প্রভাব পড়ে যে-মানুষটি কাজটা সম্পাদন করছে তার সফল হওয়ার উপর। সুতরাং সব কাজকেই একসঙ্গে একই গুরুত্ব দিয়ে মাপা অনুচিত। কোন কাজটার গুরুত্ব বেশি এবং কোনটা সময় নিয়ে করা যাবে এই বিচারে প্রথমেই কাজের মধ্যে বিভাজন করে নেওয়া উচিত। দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোই আগে শেষ করে নিন। একেই বলে ‘গুড টাইম ম্যানেজমেন্ট’।
ডেডলাইন অবশ্যই রাখুন
আপনি কাজের প্ল্যানিং করতে করতে হয়তো দেখলেন, বাস্তবে আপনার জীবনে অন্য কিছু ঘটে যাচ্ছে। মানুষের জীবন অনিশ্চয়তার দোলায় সবসময় দোদুল্যমান। পরমুহূর্তে জীবনে কী ঘটতে চলেছে সেটা প্রেডিক্ট করা অসাধ্য। এই অনিশ্চয়তার পরিবেশ যদি এড়াতে চান, তাহলে উচিত, যে-কাজ করবেন ঠিক করেছেন সেটা শেষ করার একটা ডেডলাইন মনে মনে ঠিক করে নেওয়া। কাজের গাম্ভীর্য এবং গুরুত্ব বুঝে কিছু ঘণ্টা অথবা কয়েকটা দিন-ই শুধু সময় হিসেবে বরাদ্দ রাখুন। দেখবেন সময়সীমা বেঁধে দিলেই কাজটি শেষ করার জন্য আপনি নিজেই ব্যাকুল হয়ে পড়বেন এবং সময়ের মধ্যে কাজটা শেষও করে ফেলতে পারবেন। সুতরাং আপনার মহামূল্য সময় অপচয় হবে না।
বন্ধু বাছুন ভেবেচিন্তে
দুঃসময়ের বন্ধু সত্যিকারের বন্ধু। তারা আপনাকে ভালোবেসে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে, আপনাকে সব দিক দিয়ে সাহায্য করাই তার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা বন্ধুত্বের মুখোশের আড়ালে আপনার প্রতি ঈর্শাপরায়ণ। অফিসে এই দুই ধরনের মানুষেরই দেখা মেলে। দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষেরা গল্পগুজবের অছিলায় আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই সবসময় এই ধরনের মানুষদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবেন কিন্তু তাই বলে এই নয় যে, অফিসে সকলের থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখবেন। আপনাকেই সকলের মধ্যে, নিজের শুভকাক্ষী-কে খুঁজে নিতে হবে।
এছাড়াও পারিপার্শ্বিক নানা ধরনের মনোরঞ্জনেরও হাতছানি অনেক সময় আকর্ষণের প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। সিনেমা, থিয়েটার, কম্পিউটারে গেম এবং নেট-এর মাধ্যমে অশালীন সাইটগুলির আকর্ষণ আপনাকে আপনার মূল উদ্দেশ্য থেকে ব্যহত করতে পারে। এতে মানুষের চিন্তাও কলুষিত হয়। তাই যথাসম্ভব এগুলি এড়িয়ে চলুন।
কাজ ভাগ করে নিন
যে-কোনও কাজের ভালো ফলাফলের যদি আশা থাকে, তাহলে সেটা নিজে করে নেওয়াই সব থেকে ভালো। কিন্তু একটা মানুষের পক্ষে নিজে সমস্ত কাজ সঠিকভাবে করে ওঠা সম্ভব হয় না। খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছেড়ে বাকি সাধারণ কাজগুলি তাই নিজের অ্যাসিস্ট্যান্ট, কলিগ অথবা সেক্রেটারির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া উচিত। কোনও দরকারি কাগজের ফোটোকপি করাবার দরকার হতেই পারে। সেটা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয় যে আপনাকেই করতে যেতে হবে। অফিস বয়-কে পাঠালেই আপনার কাজ সুষ্ঠু ভাবে পালন হতে পারে।
আপনাকে শুধু নিজের কাজের প্রতি প্যাশনেট হতে হবে এবং কয়েকটি পয়েন্ট মাথায় রাখতে হবে।
টাইম ম্যানেজমেন্ট টিপ্স
- গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য সময় বেশি দরকার হয়। সকালে তাড়াতাড়ি উঠুন যাতে সময় কম না পড়ে
- সাকারাত্মক মনোভাব রাখুন, তাহলে বিপদের সম্মুখীন হলেও স্থির থাকতে পারবেন
- কোনও কাজ শুরু করার আগে, আপনার যা-কিছুর প্রয়োজন সব ঠিকমতো আছে কিনা পরীক্ষা করে নিন
- কোনও কাজ নিয়ে গড়িমসি করবেন না
- নিজেকে আহেতুক আড্ডায় জড়াবেন না
- কী করতে চান এবং সেটি বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনা করুন
- চট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকা চাই
- শরীর সুস্থ রাখুন। শরীর সতেজ থাকলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে
- জেগে স্বপ্ন দেখবেন না, মূল্যবান সময় নষ্ট হবে। হাওয়ায় দুর্গ গড়ে তুলতে চাইলে তা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে, গড়ে তোলার সময়টাই শুধু নষ্ট হবে।