মহিলারা বিশেষ করে নিজেদের খাওয়াদাওয়ার বিষয়টিতে নজর দেন কম৷ দীর্ঘদিন সঠিক খাবার গ্রহণ না করার ফলে তাদের শরীরে ভিটামিন এবং খনিজ তত্ত্বের অভাব তৈরি হয়৷ যার কারণে বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও শরীরে দুর্বলভাব অনুভব করেন বহু যুবতি। এই পরিস্থিতি সামলাতে এবং নিজেকে তরতাজা তারুণ্যে ঝলমলে দেখাতে, প্রয়োজন  Nutrients। আসুন জেনে নিই এই প্রযোজনীয় নিউট্রিয়েন্টসগুলি কী?

আয়রন : শরীরে হিমোগ্লোবিন বা লোহিত কণিকা তৈরি করার জন্য, প্রয়োজন হয় আয়রনের। এই আয়রন সঞ্চিত থাকে লোহিত কণিকার মধ্যে এবং শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন বহন করার গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। কিন্তু যখন শরীরে, পর্যাপ্ত মাত্রায় অক্সিজেন পৌঁছোয় না তখন রক্তাল্পতা তৈরি হয়, যার ফলে শরীরের এনার্জির ঘাটতি হয় বিপুল মাত্রায়। সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যার সুরাহা করতে ডায়েটে রাখুন বিনস, সবুজ পাতা-যুক্ত শাকসবজি, পালংশাক, বেদানা, বিট, অ্যাপ্রিকট, কিশমিশ, সামুদ্রিক মাছ৷

ভিটামিন ডি : ভিটামিন ডি, সব বয়সের মানুষেরই প্রয়োজন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রযোজন ৩০ বছরের ঊর্ধ্বের মহিলাদের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। ফলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাবে, এমন খাবার ডায়েটে রাখা জরুরি যাতে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। বিশেষ বিশেষ কাজ করার জন্য শরীরে নির্দিষ্ট ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। এই ভিটামিন ডি, শরীরের ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ক্যালসিয়াম ধরে রাখতেও সাহায্য করে। শরীরকে নানা রোগব্যাধি থেকে দূরে রাখতেও খুবই কার্যকরী এই ভিটামিন ডি। এটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সন্তানসম্ভবাদের ক্ষেত্রে এই ভিটামিনের প্রযোজন আরও বেশি। এগুলি গর্ভস্থ শিশুর হাড়, দাঁত, হার্ট ও নার্ভ সিস্টেম গঠনে সাহায্য করে। এই পরিস্থিতিতে খাবারের মধ্যে দিয়ে ভিটামিন গ্রহণ করা ছাড়াও, মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেটের সাহায্যও নেওয়া যায়।

ভিটামিন বি১২ : ভিটামিন বি ১২, মেটাবলিজম বুস্ট করার কাজে সহায়তা করে। এছাড়া লোহিত কণিকা গঠনেও এর ভমিকা রয়েছে। শরীরে ভিটামিন বি ১২-এর প্রয়োজন মূলত লোহিত কণিকা তৈরির জন্যই, যা অক্সিজেন সংবহনের কাজে লাগে। কিন্তু যখন শরীর এই ভিটামিনের অভাবের কারণে, লোহিত কণিকা তৈরি করতে পারে না, তখনই ক্লান্তি ও দুর্বলতার পাশাপাশি অ্যানিমিয়ার সমস্যাও তৈরি হতে পারে। তাই ডায়েটে অবশ্যই রাখুন চিকেন, মাছ, ডিম, দুধ, দই, পনির।

 

ফলিক অ্যাসিড : এটা মস্তিষ্ক গঠন এবং শিড়দাঁড়ার হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। এটা কোশের বিল্ডিং ব্লক ডিএনএ এবং আরএনএ নির্মাণেও সাহায্য করে এবং ডিএনএ-তে কোনও গঠনগত পরিবর্তন আসতে দেয় না, যার ফলে ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এই ভিটামিনের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় গর্ভবতীদের, যাতে গর্ভস্থ শিশু কোনও শারীরিক খুঁত নিয়ে না ভূমিষ্ঠ হয়। এর জন্য ডায়েটে রাখুন সবুজ পাতা-যুক্ত শাকসবজি, ডাল, ডিম, স্ট্রবেরি, টক ফল প্রভৃতি। এতে মাল্টিভিটামিনও বিপুল পরিমাণে থাকে।

ভিটামিন সি : যে-কোনও ক্ষত দ্রুত নিরাময়ে জন্য ভিটামিন সি-এর প্রয়োজন। এছাড়াও লোহিত কণিকা তৈরিতে এটি বিশেষ ভাবে সক্রিয়। এটা নরঅ্যাপিনেফিন নামক মস্তিষ্কের এক বিশেষ আয়রনের স্তর বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে এটি আপনাকে অতিরিক্ত সজাগ থাকতে এবং একাগ্রতা বাড়াতেও সাহায্য করে।

ভিটামিন : প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা নিরাময়ে ভিটামিন ই-এর গুরুত্ব সর্বাধিক বলে মানা হয়। এর জন্য স্যালাড খাওয়া প্রয়োজন, যাতে প্রজননশীল বয়সে মহিলারা বেশিমাত্রায় ভিটামিন ই-যুক্ত এই খাবার থেকে পুষ্টি পেতে পারেন। ভিটামিন ই, কোশগুলিকে মজবুত করার পাশাপাশি, বয়স বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকেও নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এটি অত্যন্ত কার্যকর। এর জন্য ডায়েটে বাদাম, চিজ, সোয়া এবং অলিভ অয়েল অবশ্যই রাখা উচিত।

ক্যালসিয়াম : হাড় মজবুত করতে এবং হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হলে ক্যালসিয়াম আবশ্যক। শরীরে এর ঘাটতি হলে, অস্টিয়োপোরোসিস-এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া মস্তিষ্ক সঞ্চলনার কাজে এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। কিন্তু মহিলাদের জীবনের নানা চাপে, ঋতুচক্র, প্রেগন্যান্সি, ব্রেস্টফিডিং এবং মেনোপজ-এর পর্যায়গুলি অতিক্রম করতে হয়, যার ফলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এই ঘাটতি মেটানোর জন্য খাদ্যগ্রহণ ছাড়াও, মাল্টিভিটামিন খাওয়াও অত্যন্ত জরুরি।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...