বেশ কিছু বছর আগে গুরগাঁও এলাকায় বন্ধ গাড়ির মধ্যে দুই বোন দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে দুই বোন ভুলবশত নিজেদের লক করে ফেলে। তাদের একজনের বয়স ২ এবং অপরজনের বয়স ছিল ৪। কয়েকঘণ্টা পর নিঃশ্বাস না নিতে পেরে দুজনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আশেপাশে খোঁজ করে যখন গাড়িতে ওদের সন্ধান পাওয়া গেল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। হাসপাতাল ওদের মৃত বলে ঘোষণা করল।

এইরকমই আর একটি ঘটনায় ৩ জন ব্যবসায়ী গাড়ির কাচ বন্ধ করে এসি চালিয়ে গাড়ির মধ্যেই ব্যাবসা সংক্রান্ত আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। এরই মধ্যে এসি-র মাধ্যমে কোনও বিষাক্ত গ্যাস গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ায় ৩ জনেরই একসঙ্গে গাড়ির মধ্যেই মৃত্যু হয়।

গত কয়েক বছর ধরে এই ধরনের ঘটনা প্রায়শই ঘটতে দেখা যাচ্ছে। গাড়ির ভেতরে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন সতর্কতা এবং সাবধানতার।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মা-বাবা যখন নিজেদের বাচ্চাদের সঙ্গে করে গাড়িতে কোথাও নিয়ে যান, তখন রাস্তায় পাঁচ-দশ মিনিটের কোনও কাজ থাকলে বাচ্চাকে গাড়িতে বসিয়েই তাঁরা দরজা লক করে বেরিয়ে যান। কখনও কখনও বাচ্চাদের সুরক্ষার কথা ভেবে তাঁরা জানলার কাচও বন্ধ করে দেন। অথচ ছোটো বাচ্চারা অল্প সময়ের জন্যও অধিক তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। প্রচণ্ড রোদ্দুরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে, জানলার কাচ তুলে দিয়ে যদি কেউ বাচ্চাকে ওই বদ্ধ গাড়িতে রেখে যাওয়ার কথা ভাবেন, তাহলে সাবধান car ride precautions হোন। কারণ এটা একটা মারাত্মক বিপদকে আমন্ত্রণ জানানো ছাড়া আর কিছুই নয়।

ভেন্টিলেশনের রাস্তা ছাড়া কোনও বন্ধ গাড়ি, গ্রিনহাউসে পরিণত হয়। প্রচণ্ড রোদ্দুরে ১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধ গাড়ির তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার তুলনায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। শীতকালেও কিন্তু তাপমাত্রা এতটাই বেড়ে যায়। গাড়িতে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা না থাকলে গাড়ির পিছনের সিট-ও গাড়ির সামনের অংশের মতোই গরম হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পেরিয়ে যাওয়ার পর তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। সেজন্য গাড়িতে বাচ্চাকে বসিয়ে গাড়ির কাচ তুলে দিয়ে পাঁচ মিনিটের জন্যও কোথাও যাওয়া উচিত নয়।

উচ্চ তাপমাত্রার বিপদ

শরীরের তাপমাত্রা ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার করলেই আমাদের মস্তিষ্ক, হার্ট, কিডনি এবং লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা না করা গেলে, ওই ব্যক্তির মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এমনকী ওই ব্যক্তি কোমা-তেও চলে যেতে পারেন। বাচ্চাদের জন্য এই স্থিতি আরও অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বাচ্চাদের শরীর বড়োদের তুলনায় অনেক বেশি কোমল হয়। ওদের উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা বয়স্কদের তুলনায় অনেক কম হয়।

অন্যান্য বিপদ

ছোটো বাচ্চারা সাধারণত প্রচণ্ড জিজ্ঞাসু এবং চঞ্চল প্রকৃতির হয়। সমস্ত জিনিস খুলে দেখার একটা ইচ্ছে সবসময় ওদের মনের মধ্যে থাকে। পার্কিং-এ গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার সময় বড়োদের অনুপস্থিতিতে বাচ্চারা পার্কিং ব্রেক রিলিজ করে দিতে পারে। ইঞ্জিন অন হলে গাড়িকে গিয়ারে দিতে পারে অথবা গাড়ির দরজা হঠাৎ খুলে ওইদিকের পথচারী, বাইক আরেহী যে-কোনও কাউকে আহত করতে পারে। কারণ ছাড়াই হর্ন বাজিয়েও লোককে বিব্রত করতে পারে। গাড়ির ভিতরেও দুষ্টুমি করতে গিয়ে কোনও ভাবে তাদের চোট-আঘাতও লাগতে পারে। হঠাৎ করেই যে-কোনও একটা বিপদ ঘটে যেতে পারে সুতরাং গাড়িতে বাচ্চাদের একা ছেড়ে যাওয়াটা কখনওই সঠিক ডিসিশন নয়।

খেয়াল রাখুন, Car ride precautions.

১)   অনেকের ভুলে যাওয়ার রোগ থাকে। গাড়ি লক করে যাওয়ার সময় সবসময় পিছনের সিট চেক করে নেওয়া জরুরি যাতে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়। বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে ট্র্যাভেল করার সময় অনেকেই ভুলে যান সঙ্গে কেউ রয়েছে। পাশের সিটে বসলে অতটা চিন্তা থাকে না কিন্তু পিছনের সিটে বাচ্চাকে একা বসিয়ে রাখলে বাচ্চা ঘুমিয়েও পড়তে পারে। বাচ্চার কথা ভুলে লক করার সময়, বাচ্চা ঘুমিয়ে থাকলে সাড়া দেওয়ার মতো অবস্থায় থাকবে না। সুতরাং নিজেই সাবধান হওয়া ভালো। পিছনের সিট না চেক করে গাড়ি লক করবেন না, এই অভ্যাস যদি গড়ে তোলা যায় তাহলে ভয়ের কিছু থাকবে না।

২)   ওয়েদার ভালো থাকলে অথবা শীতকালেও বাচ্চাকে গাড়িতে একা ছাড়া উচিত নয়, কারণ যে-কোনও মরশুমেই বন্ধ গাড়ির ভিতর একইরকম সাফোকেশন হয়।

৩)   বাড়িতে গাড়ি পার্ক করার সময় দেখে নেওয়া উচিত গাড়ি ঠিকমতো লক হয়েছে কিনা। গাড়ির চাবিও এমন জায়গায় রাখা উচিত যেখানে বাচ্চাদের হাত পৌঁছবে না। বাচ্চারা অল্প বুঝতে শিখলেই তাদের বোঝানো উচিত যেন কোনও অবস্থাতেই গাড়িতে উঠে তারা নিজেদের লক করে না ফেলে, কারণ তাতে ওদেরই বিপদ বাড়বে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...