শিলিগুড়ি থেকে গাড়িতে চলেছি। জায়গাটার নাম Ravangla৷ খুবই প্রশংসিত এর সৌন্দর্য আর নির্জনতার জন্য৷West Sikkim –এর অন্তর্গত এই জায়গায় পৌঁছোনোর জন্য গাড়িতে চড়াই উঠতে হবে প্রায় ৮০০০ ফিট। ঘন্টা চারেকের রাস্তা।নামচি বাজার হয়ে রাস্তা গেছে উপর দিকে। পাহাড়ের পাকদণ্ডি বেয়ে যখন পৌঁছোলাম গন্তব্যে, দেখলাম ছোট্ট এক চৌমাথা। গাড়িওলাদের ব্যস্ত হাঁকডাক, হোটেল, রেস্তোরাঁ, বাজারহাট মিলে– ওটাই এই জনপদের প্রাণকেন্দ্র। দুপুর হয়ে গেল পেৌঁছোতে। তাই হোটেলে পেৌঁছেই গরম ‘থুকপা’-য় উদরপূর্তি করলাম। জানলার শার্সির ওপারেই পিকচার পোস্টকার্ড ল্যান্ডস্কেপ আর ঢেউ খেলানো পাহাড়। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যেতে হয় রাবাংলার।

‘সুপ্রভাত’ জানিয়ে হাসিমুখে এগিয়ে এল ড্রাইভার, সেই-ই নিয়ে যাবে রাবাংলার় ইতিউতি। দ্রুত ব্রেকফাস্ট সেরে তাই বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমেই গেলাম শহর থেকে কয়েক কিমি দূরে রালং হট স্প্রিং। প্রকৃতির কোলে মন কেড়ে নেওয়া এক আশ্চর্য মায়াময় স্পট, ছেড়ে আসতে মন চায় না। কিন্তু হাতছানি দিচ্ছে পরের গন্তব্য মাংব্রুয়ে গোমফা, এক অসাধারণ ভিউ পয়েন্ট। সেখানে দাঁড়ালে পাখির চোখে দেখা যায় গোটা শহর। সিকিমের সবচেয়ে প্রাচীন মনাস্টারি তাশিডিং-এর দিকে গাড়ি ছুটল।

 

travel Ravangla

শহর থেকে ২৬ কিমি দূরে এর অবস্থান। সিকিমের বার্ষিক উৎসব ‘বুমচু’ অনুষ্ঠিত হয় এখানেই।রাবাংলায় ফিরে লাঞ্চ সেরে এবার আমাদের অন্য রাস্তায় যাত্রা। প্রথমে টেমি চা-বাগিচা। পাহাড়ের ঢালে চা-গাছের কার্পেট আর চারপাশে নীল-সবুজ পাহাড়ের সারি ঘেরা এই Temi Tea garden । কোনওটার ঢালে পশ্চিম সিকিমের জনবসতি, কোনওটা উত্তর সিকিমের প্রাণকেন্দ্র।

Temi Tea gardens Ravangla

নামচির দিকে গাড়ি এগোল, গন্তব্য সামড্রুপসে। পাহাড়ের চূড়ায় গুরু পদ্মসম্ভবের অতিকায় মূর্তিটা বহু দূর থেকে চোখে পড়ে। এখন এই বৌদ্ধ মন্দির তথা উপাসনা ক্ষেত্রে পৌঁছে যেন চোখ জুড়িয়ে গেল। ভক্তের সমাগম এখানে চোখে পড়ার মতো। এক অদ্ভুত প্রশান্তি মাখা পরিবেশ।

ফেরার পথে ড্রাইভার দেখিয়ে দিল একটা ছোট্ট গ্রাম যার কেন্দ্রে একটি ছবির মতো স্টেডিয়াম– নাম বাইচুং ভুটিয়া স্টেডিয়াম। এই গ্রামেই বেড়ে উঠেছেন আজকের সুখ্যাত এই ফুটবলার।

পরের দিনটা একটু অ্যাডভেঞ্চারাস। এদিন ট্রেক করব তেনডং পাহাড়। এই পাহাড়েই অবস্থিত মইনাম ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি। লোকাল গাইড-কে সঙ্গে নিয়ে এগোলাম ডামথাং-এর উদ্দেশে। এখান থেকেই শুরু হবে আমাদের হাঁটা।শুনেছি প্রায় ৯০-টি প্রজাতির পাখি, রেড পান্ডা, চিতা, হিমালয়ান বেয়ার প্রভৃতি পশুর বাস এই পাহাড়ি অরণ্যে। রাস্তা এতটাই চড়াই যে,৩কিমি হাঁটা সম্পূর্ণ করলেই পেৌঁছে যাওয়া যায় ৮০০০ ফিট উচ্চতায়।

 West Sikkim Ravangla

অপূর্ব এই জায়গাটি। ৩৬০ ডিগ্রি প্যানোরামায় হিমালয়  আপনাকে সাদরে স্বাগত জানাবে। পূর্বে চোলা রেঞ্জ, পশ্চিমে কাঞ্চনজংঘা-সহ গোটা সিংগালিলা রেঞ্জ আর উত্তরপূর্ব কোণে বারহুনরি পিক। এই নৈসর্গিক শোভায় অনন্তের মহিমায় বিহ্বল হয়ে, আরও একবার যেন মনে হয়– বড়ো সুন্দর এই বেঁচে থাকা, সার্থক এই মানব জন্ম।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...