উৎসবের দিনগুলিতে আনন্দে মেতে ওঠা কিংবা অন্যকে আনন্দে মাতিয়ে রাখা ভীষণ জরুরি। করোনা ভাইরাস-এর আতঙ্ক নিয়ে দিন গুনতে গুনতেই, এসে গেল জীবনকে বর্ণময় করে তোলার উৎসব দীপাবলি। ভিতর-বাইরের সমস্ত অন্ধকার দূর করে আলোর বন্যা বইয়ে দেওয়ার এও এক সুবর্ণসুযোগ। Society বা সমাজ গড়ে তোলে মানুষই , তাকে বাসযোগ্য করে তোলার দায়্ত্বও মানুষেরই৷
তবে, এই সুযোগকে হাতের মুঠোয় পেতে হলে, ভাবতে হবে একটু অন্য ভাবে। এই করোনার আবহে থেকেও, একটু অন্যরকম করে উৎসব উজ্জাপন করতে পারলে, পাওয়া যাবে নির্ভেজাল আনন্দ। আর এই আনন্দ পাওয়া যাবে দুঃস্থ এবং অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করার মাধ্যমে। তাই আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে আরও উদার, আরও দয়ালু হয়ে উঠুন। ভেবে দেখুন, গরিব, অসহায় মানুষগুলোর মুখের হাসি দেখে যে-মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায়, তা কি আর কিছুতে পাওয়া সম্ভব? অতএব, সেবা ও দানের মাধ্যমে সার্থক করে তুলুন এবারের আলোর উৎসবকে এবং আপনার মনুষ্য জীবনকে।
এই সেবাদান শব্দটিকে ইংরেজিতে পোশাকি ভাষায় বলা হয় Caregiver। বিশ্বের বহু দেশে, অনেক মানুষ এই শব্দটিকে সার্থক করে তুলেছেন। নিজেদের কাজের অবসরে, অসহায় এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন অনেকে। এখন আমাদের দেশেও Caregiver-এর সংখ্যা বাড়ছে।
নিজের আর্থিক সামর্থ্য, শিক্ষা, মেধা, পেশাগত দক্ষতা, অবসর এবং বিশেষ প্রশিক্ষণকে অবলম্বন করে, আপনিও হয়ে উঠতে পারেন কেয়ারগিভার। ব্যক্তিগত কিংবা সমবেত উদ্যোগে কীভাবে আপনি অন্যের অসহায়ত্ব কাটাবেন, সেই বিষয়ে রইল বিস্তারিত পরামর্শ।
সময়দান : নিজের ব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা সময় বাঁচিয়ে রাখুন অন্যদের জন্য। এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা হাসপাতাল কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে থেকে একাকিত্বে ভোগেন। কারণ, হয় তাঁদের কেউ নেই অথবা আত্মীয়স্বজনরা খুব বেশি খোঁজখবর রাখেন না। তাই, ওঁরা আপনার রক্তের সম্পর্কের কেউ না হলেও, আত্মীয়স্বজনহীন ওইসব মানুষগুলোর জন্য একটু সংবেদনশীল হতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত দুবার এক-দুঘন্টা সময় কাটান ওঁদের সঙ্গে। কথা বলুন, ওষুধপথ্যের ব্যবস্থা করুন, সুখদুঃখ শেয়ার করুন। আর যদি সম্ভব হয়, তাহলে ওঁদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় হাতে নিয়ে যান একগুচ্ছ ফুল বা চকোলেট। দেখবেন, উৎসবের দিনে ওঁদের মুখে এমন সরল হাসি ফুটে উঠবে, যা দেখে আপনিও এক অন্যরকম ভালোলাগা অনুভব করবেন।
শিশুদের শিক্ষাদান : আর্থিক ভাবে দুর্বল বাবা-মায়ের সন্তানদের কিংবা অনাথ শিশুদের যদি শিক্ষাদান করা যায়, তাহলে সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা সহজ হবে। কারণ, অশিক্ষা-ই তরুণ সমাজকে কুপথে চালিত করে। তাই আমরা যদি প্রত্যেকে অন্তত দুজন বাচ্চার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে পারি, তাহলে আমাদের সমাজ তথা দেশ আরও উন্নত হবে। বিশেষ করে, মেয়েদের শিক্ষাদান জরুরি। কারণ, মেয়েদের শিক্ষাদান মানেই পরিবারকে শিক্ষিত করা, পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষিত করা। অতএব, যদি সত্যিই আলোর উৎসবকে সার্থক করে তুলতে চান, তাহলে শিশুশিক্ষার দায়িত্ব নিন। এতে শুধু দীপাবলির দিনগুলিতেই নয়, সমাজ আলোকিত হবে আগামীতেও। এর ফলে আপনি, আমি, সব্বাই পরোক্ষে লাভবান হব।
বস্ত্রদান : একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই আপনার এলাকার গরিব অসহায় মানুষগুলোকে চিহ্নিত করতে পারবেন। ওরা যাতে শীতে কষ্ট না পান, সেই উদ্যোগ নিন। শাল, সোয়েটার, কম্বল, জামা-প্যান্ট প্রভৃতি কিনে ওদের হাতে তুলে দিন। কিংবা যে-সব শীতবস্ত্র আপনি আর ব্যবহার না-করে ফেলে রেখেছেন, নিদেনপক্ষে সেইসব পোশাক দিয়ে শীতে ঠান্ডা লাগার হাত থেকে ওদের বাঁচান। এই সামান্য উদ্যোগটুকু নিতে পারলে দেখবেন, আপনিও ভালোলাগার উষ্ণতা অনুভব করতে পারবেন।
অন্নদান : এ প্রসঙ্গে কবীর সুমনের একটি গান মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে- কেউ যদি বেশি খায়, খাওয়ার হিসেব নাও, কেন–না অনেক লোক ভালো করে খায় না। সত্যিই তো, কত মানুষ প্রযোজনের অতিরিক্ত খেয়ে অসুখ বাধিয়ে বসছেন কিংবা খাবার অপচয় করছেন অথচ অনেক লোক দুবেলা দু-মুঠো ঠিকমতো খেতে পায় না। তাই, ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর মুখে কিছু অন্ন তুলে দিন। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের হাতে তুলে দিন কিছু পুষ্টিকর খাবার। এই তালিকায় থাক দুধ, ডিম, মাছ, মাংস আর থাক কলা, আপেল, কমলালেবু, পেয়ারা, কাজুবাদাম ইত্যাদি।
অবশ্য শুধু মানবসেবাই নয়, আপনি মানবিক হতে পারেন অবলাদের খাইয়েও। রাস্তার সারমেয়রাও ঠিকমতো খাবার না পেয়ে খুব কষ্ট পায়। তাই, দিনে-রাতে যখন পারবেন, যতটা পারবেন কিছু খাবার বরাদ্দ করুন সারমেয়দের জন্য। যদি সত্যিই আপনি পশুপ্রেমী হয়ে থাকেন, তাহলে কুকুর-বিড়ালকে আদর করার ছবি শুধু ফেসবুক-এ পোস্ট করে বাহবা না নিয়ে, রাস্তায় এসে খাইয়ে যান পশু-পাখিদের।
আর্থিক সাহায্য : কোনও দান-ই তুচ্ছ নয়। তাই গরিব, অসহায় মানুষগুলোকে সামর্থ্যমতো দান করুন। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের কিনে দিন স্কুলের বই, খাতা, পেনসিল, জলের বোতল, স্কুল ইউনিফর্ম এবং ব্যাগ। দিতে পারেন স্কুলের ফিজ এবং পুষ্টিকর খাবারের জন্য টাকা। অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার জন্য কিংবা গরিব কোনও মেয়ের বিয়ের জন্যও আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে, তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারেন।এভাবেই আমাদের মনকে একটু উদার, প্রশস্ত করে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে দেখবেন, আনন্দের প্লাবন বয়ে যাবে মনে-প্রাণে। এতে দীপাবলির উৎসবও হয়ে উঠবে আরও সুখময়।