বর্তমানে বিনিয়োগ করার জন্য সরকারি থেকে বেসরকারি বহু প্রকল্প রয়েছে। যার মধ্যে Mutual Fund অন্যতম। কিন্তু এই ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে বিনিয়োগকারীদেরও জেনে রাখা প্রয়োজন যে, এই খাতে লাভের অঙ্কও যেমন বেশি, তেমন লগ্নী করা টাকা লোকসান হওয়ার ভয়ও কি থাকে? এমতাবস্থায় মিউচুয়াল ফান্ড কেনার আগে বিনিয়োগকারী যদি সঠিক তথ্য জানতে পারেন, তাহলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এবিষয়ে ফিন্যান্স এক্সপার্ট অরবিন্দ সেন বলেন, এই প্রকল্পে কম সময়ের জন্য বিনিয়োগ করা হলে, তাতে মুনাফা কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে বিগত বেশ কয়েকবছরে লক্ষ্য করা গেছে, অধিক সময়ের জন্য বিনিয়োগ করলে, তাতে লাভের পরিমাণ বেশ ভালো।

মিউচুয়াল ফান্ড আসলে কী

মিউচুয়াল ফান্ড এমন একটি ফান্ড, যাতে বহু লোকের টাকা একসঙ্গে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে। মূলত এই প্রকল্পে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর টাকা একত্রিত করে শেয়ার মার্কেট আর বন্ডে নিবেশ করা হয়। অরবিন্দ বলেন, বিনিয়োগকারীদের প্রদেয় অর্থ কিছু ইউনিটে ভাগ করা হয়ে থাকে। সেই ইউনিটের অনুপাতে শেয়ার অথবা বন্ড কেনাবেচা করার পর, যে-লভ্যাংশ বা মুনাফা হয়, সেটা মিউচুয়াল ফান্ড হাউসেজ ফান্ডের বিভিন্ন খাতে চলে যায়।

সাধারণত অন্যান্য স্কিমের মতোই Mutual Fund-ও সময়ে সময়ে লঞ্চ করা হয়ে থাকে। চাইলে আপনি নিজেই এই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারেন, তবে যদি প্রথম এই স্কিমে বিনিয়োগ করেন, তাহলে অবশ্যই ব্রোকারের সাহায্য নিন।

এই ফান্ডে ইনভেস্ট করার জন্য সবার প্রথমে ব্যাংক-এ ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ওই অ্যাকাউন্ট-এর মাধ্যমেই আপনি মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচা করতে পারবেন।

মিউচুয়াল ফান্ডে সাধারণত দু’রকমের স্কিম রয়েছে। ওপেন এন্ডেড ফান্ড এবং ক্লোজ এন্ডেড ফান্ড

আসুন, এই দুটি যোজনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ওপেন এন্ডেড ফান্ড

ওপেন এন্ডেড ফান্ড-এর অর্থই হল, আপনি যে-কোনও সময়ে আপনার প্রয়োজন সাপেক্ষে ইউনিট কেনাবেচা করতে পারেন। এই ফান্ড, বিনিয়োগকারীদের নন-ফ্লেক্সিবল রিটার্ন দিয়ে থাকে। অরবিন্দের কথায়, যারা বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে রাজি নন, তাদের জন্য ওপেন এন্ডেড ফান্ড একেবারে পারফেক্ট। কারণ এই ফান্ড কেনার সময়ই বিনিয়োগকারীকে নির্দিষ্ট অঙ্কের কথা বলে দেওয়া হয়, যেটা তারা ভবিষ্যতে পাবেন।

ক্লোজ এন্ডেড ফান্ড

ক্লোজ এন্ডেড ফান্ড-এর ইউনিট একটি নির্দিষ্ট সময় অবধি লাগু হয়ে থাকে। এই ফান্ডে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। যদি আপনি জমাকৃত অর্থ ম্যাচিওর হওয়ার আগেই তুলতে চান, তাহলে রিটার্ন তো পাবেনই না উলটে পেনাল্টিও দিতে হবে। আপনি ব্রোকারের সাহায্যে এই ইউনিট কেনাবেচা করতে পারবেন। তবে ওপেন এন্ডেড ফান্ড-এর তুলনায় ক্লোজ এন্ডেড ফান্ড-এ মুনাফা বেশি কারণ, এতে ফ্লেক্সেবল রিটার্ন পাওয়া যায়, ফলস্বরূপ লাভের মাত্রাও অধিক থাকে।

কীভাবে বাছবেন সঠিক ফান্ড

সঠিক ফান্ড বাছার আগে ভালো করে ভেবে নিন যে, আপনার প্রয়োজনের ভিত্তিতে কোন ফান্ড আপনার জন্যে উপযুক্ত। এছাড়াও নীচে দেওয়া ব্যাপারগুলিও খেয়াল রাখা উচিত

১)  সবার প্রথমে বিনিয়োগকারীরা কতটা ঝুঁকি নিতে পারবেন সেটা বোঝা উচিত। এটার জন্য বয়স, আয় আর লক্ষ্যই মূল কথা।

২)  বিনিয়োগকারীদের এমন ফান্ড হাউসেজ-এর মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা উচিত, বাজারে যাদের দীর্ঘদিনের সুনাম রয়েছে, আর যেটাকে প্রফেশনালি ম্যানেজ করা সম্ভব।

৩)  মিউচুয়াল ফান্ডে কিছু করেরও ব্যাপার থাকে। সুতরাং সেগুলিও খেয়াল রাখা দরকার।

মিউচুয়াল ফান্ড-এর সুবিধা

১)   কিছু বিনিয়োগকারী সঠিক তথ্য না জানার কারণে, আবার কেউ কেউ ঝুঁকির ভয়ে শেয়ার মার্কেটে অর্থ লগ্নী করতে ভয় পান। ফলে তাদের ডিভিডেন্ট লাভ থেকেও বঞ্চিত হতে হয়। মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা খাটিয়ে খুব কম ঝুঁকিতেই তারা ডিভিডেন্ট লাভ ওঠাতে পারেন।

২)   যারা কম সময়ে অধিক মুনাফা করতে চান, তারা Mutual Fund-এ টাকা ইনভেস্ট করতে পারেন।

৩)   ধরা যাক ইচ্ছানুযায়ী বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ আপনার নেই, সেক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ডের ডায়ভার্সিফায়েড ইনভেস্টমেন্ট পোর্টফোলিয়-র মাধ্যমে আপনার ইচ্ছেপূরণ করতে পারেন। কারণ যে কোম্পানির মিউচুয়াল ফান্ড আপনি কিনছেন, সেই কোম্পানি আপনার বিনিয়োগ করা অর্থ অন্যান্য বিকল্পেও বিনিয়োগ করে থাকে, যার লভ্যাংশ আপনি পাবেন।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...