দূর আকাশের গায়ে পাখা মেলে উড়ে বেড়াবার স্বপ্ন দেখে অনেকেই। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হতে পারে না সকলের। তবুও কেউ যদি নানা-জায়গায় ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে চায়, জীবনে রিস্ক নিতে ভয় না-পায় তাহলে Career হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে বিমান-সেবিকার কাজ। পেশাটিতে দুটি উপরি পাওনাও আছে। গ্ল্যামার এবং হাই পে-প্যাকেট।
এয়ার হোস্টেস শুনলেই ছিপছিপে চেহারার সুসজ্জিতা, হালকা মেক-আপের অন্তরালে মিষ্টি হাসির ইমেজ চোখের উপর ভেসে ওঠে। হাসির মধ্যেই সযত্নে রাখা আছে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মন। বিমান-সেবিকার কাজ হল বিমানযাত্রীদের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের সম্পূর্ণ খেয়াল রাখা। নিজেদের সুরক্ষার থেকেও বেশি, যাত্রীদের সুরক্ষা ও সুবিধা দেওয়াই তাদের পেশার মূল চাহিদা। তাই আত্মবিশ্বাসই হল তাদের যুদ্ধের প্রধান অস্ত্র।
বিমানবন্দরে দাঁড়ানো বিমানের, গন্তব্যে রওনা হওয়ার কিছু আগে থেকেই এয়ারহোস্টেস অর্থাৎ বিমানসেবিকার ডিউটি শুরু হয়। বে-তে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানে ইঞ্জিনিয়র এবং ক্যাটারার-এর কাজ শেষ হওয়ার পর, কাজ শুরু হয় এয়ার-হোস্টেস-এর। যাত্রীদের জন্যে রাখা খাবার উপযুক্ত স্থানে রাখা, প্লেনের ভিতরটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে কিনা দেখা, সিটবেল্ট ও সিটের কোনও সমস্যা আছে কিনা চেক করা। এসব সারা হলে প্লেনের দুটি দরজায় যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানাতে হাসিমুখে দাঁড়াতে হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং সুবিধা, দুটি দিকেই এয়ার হোস্টেসদের সবসময় সজাগ থাকতে হয়। নিরাপত্তার জন্য যা-যা সরঞ্জাম প্রয়োজন, তা সব প্লেনে লিস্ট অনুযায়ী মজুত করা হয়েছে কিনা সেটা দেখাও এয়ার হোস্টেস-এরই ডিউটি। কোথাও যদি কোনও সমস্যা থেকেও থাকে তা প্রয়োজন মতো পাইলট এবং কর্তৃপক্ষকেও জানাতে হতে পারে।
যাত্রীরা বিমানে উঠতে আরম্ভ করলে প্রয়োজনে সিট দেখিয়ে দেওয়া এবং বেল্ট বাঁধার নিয়মাবলীও জানিয়ে দিতে হবে। নিরাপত্তা সম্পর্কে যাত্রীদের ওয়াকিবহাল করাটা বিমান সেবিকার কাজেরই অন্তর্ভুক্ত। হ্যান্ড-লাগেজ কীভাবে রাখলে যাত্রীরা কমফর্টেবল বোধ করবেন সেটাও দেখাটা এদের কর্তব্য। কে কী ধরনের খাবার এবং পাণীয় নেবেন, যাত্রীদের কোনওরকম শারীরিক অসুবিধার ক্ষেত্রে যথাসম্ভব সাহায্য করা সবই বিমান সেবিকার ডিউটির অন্তর্গত। বিমানে স্মোকিং জোন থাকে, সেখানে যাত্রীদের সুবিধার্থে স্মোক ডিটেকটর ঠিকমতো কাজ করছে কিনা সেটারও খেয়াল রাখতে হবে। এমনকী প্লেনে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে কারও মৃত্যু হলেও, দক্ষতার সঙ্গে সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করার ট্রেনিংও থাকে এয়ার হোস্টেসদের। হাইজ্যাকিং-এর মতো ভয়ানক ঘটনাও যদি ঘটে, তাহলেও যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কিছু অংশে এয়ার হোস্টেসের উপরেই বর্তায়।
উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরেই এই Career-এ ট্রেনিং নেওয়া যায়। ১৭ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে এই পেশায় আসা সম্ভব। উচ্চতা হওয়া উচিত ১৫২ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৫০ কেজির বেশি নয়। ২৫ থেকে ৩০ বছরের এয়ার হোস্টেসদের জন্যে ৫৫ কেজি অবধি কোনও কোনও বিমান সংস্থা কনসিডার করে। নিজের মাতৃভাষা ছাড়া ইংরেজি এবং অন্য কয়েকটি ভাষা জানা থাকলে আরও ভালো হয়। এছাড়া কম্পিউটার রিজার্ভেশন সিস্টেম (সিআরএস) জানাটাও জরুরি, যাতে দ্রুততার সঙ্গে টিকিট এবং হোটেল বুকিং করা যায়।
যে ট্রেনিং সেন্টার থেকে কোর্স করতে চান, তার ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে ফর্ম ডাউনলোড করে ফর্ম ভরে নেটের মাধ্যমেই পাঠিয়ে দিতে পারেন নির্দিষ্ট সেন্টারে। সিট খালি থাকলে আপনি ভর্তির সুযোগ পাবেন।
এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং-এর বেসিক কোর্সগুলি হল পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট, দক্ষতার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলা ও কম্পিউটারের বেসিক নলেজ, বিমান ও যাত্রীদের নিরাপত্তা রক্ষার নিয়মাবলি, হসপিটালিটি, কীভাবে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, কীভাবে এবং কীরকম পোশাক পরা উচিত, মেক-আপ ও ত্বকচর্চা, টিম-ওয়ার্ক, এভিয়েশন-এ ব্যবহূত বিশেষ কোড এবং সিমবল, প্লেনে ওঠার পর যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বিশেষ কী কী শর্তাবলি অ্যানাউন্স করা দরকার ইত্যাদি শেখানো হয়ে থাকে।
এছাড়াও এয়ারলাইন কোর্সের অন্তর্ভুক্ত হল এভিয়েশনের ইতিহাস, প্লেনের প্রতিটি পার্ট ভালো করে জানা, এয়ারলাইন টার্মিনোলজি, কর্তব্য এবং দায়িত্ব, টেকনিক্যাল এভিয়েশন, নিরাপত্তা ও জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে কী করতে হবে, ফার্স্ট এড ট্রেনিং, ফ্লাইটে কাজের দায়িত্ব, প্লেনের পক্ষে হানিকারক বিভিন্ন দ্রব্যের সঙ্গে পরিচয়, কাস্টমার সার্ভিস এবং ফ্লাইটে অ্যানাউন্স করার রীতি।
এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং শেষ করে চাকরিতে ঢোকা যাবে মোটা স্যালারির বিনিময়ে। মাইনের রেঞ্জ ৩০,০০০ টাকা থেকে ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত। সিনিয়রিটি বেসিসে মাইনে ৫০,০০০ টাকা থেকে ৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বিদেশি এয়ারলাইন সংস্থাগুলি থেকে ডোমেস্টিক সংস্থায় স্যালারির অঙ্কটা একটু কম। এই পেশায় ডিউটি আওয়ারস খুব বেশি হয় এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।
এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলির মধ্যে ফ্র্যাংকফিন, ডলফিন ইনস্টিটিউট, অ্যাপটেক এভিয়েশন, অ্যাভালন অ্যাকাডেমি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ৩ থেকে ৬ মাসের শর্ট টার্ম কোর্সও যেমন করা যায় তেমনি ১ বছর, ২ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করারও অপশন রয়েছে। যে-ইনস্টিটিউটগুলি কোনও এয়ারলাইনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, সেখানে ট্রেনিং পিরিয়ডে হাতে-কলমে কাজ শেখারও সুবিধা রয়েছে। সপ্তাহে ৫-৬ দিন ক্লাস করানো হয়।
দেশি-বিদেশি মিলিয়ে এয়ারলাইন্সের সংস্থা সংখ্যায় আজ প্রচুর, সুতরাং বিমান-সেবিকার Career-এ আজ অনেকেই এগিয়ে আসছেন। বেছে নিচ্ছেন গ্ল্যামার এবং স্বাধীনতার জীবন। তাই আপনি কী করতে চান জীবনে, সেটা কিন্তু নির্ভর করছে সম্পূর্ণ আপনারই মানসিকতার উপর।
স্কিল টিপস
১) বয়স ১৭ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে
২) কমকরে উচ্চমাধ্যমিক পাশ। স্নাতক হলে আরও ভালো। ট্র্যাভেল বা ট্যুরিজমের উপর অথবা হসপিট্যালিটির ওপর ব্যাচেলার ডিগ্রি এই পেশায় Career আসার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
৩) স্পোকেন ইংলিশে দক্ষ হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যান্য বিদেশি ভাষা জানা থাকলে সুবিধা হবে।
৪) কম্পিউটার নলেজ থাকা বাঞ্ছনীয়।
৫) গুড লুকিং এবং প্লিজেন্ট পার্সোনালিটি হওয়া দরকার।
৬) উচ্চতা ১৫২-১৫৭ সেন্টিমিটর (মেয়েদের ক্ষেত্রে) হওয়া দরকার। হাইট অনুযায়ী ওজন ৫০ কেজির মধ্যে থাকা উচিত।
৭) সুস্থ শরীর-স্বাস্থ্য এবং লম্বা সময় টানা কাজ করার মতো মনোবল থাকা উচিত।