অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছিল না অহনা কুমরার। কিন্তু তাঁর সিবিআই অফিসার মায়ের মনে হয়েছিল, যথেষ্ট অভিনয় প্রতিভা আছে মেয়ের মধ্যে। তাই মায়ের পরামর্শ মতো হুইসলিং উড ইন্সটিটিউট-এ দুবছরের অভিনয় শিক্ষা নেন অহনা। এরপর নাসিরুদ্দিন শাহ-র সঙ্গে নাটকে অভিনয় করেন এবং পরপর দশটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে অভিনয় করে পরিচিতি পান তিনি।
২০১৪ সালে অনুরাগ কাশ্যপ তাঁর টিভি সিরিয়াল যুদ্ধ-এ অভিনয়ের সুযোগ দেন অহনাকে। এই ধারাবাহিকে তিনি অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চনের মেয়ের চরিত্রে। এরপর আবার একটি টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেন তিনি। এই ধারাবাহিকটির নাম ছিল এজেন্ট রাঘব।
নাসিরউদ্দিন শাহ-র সঙ্গে নাটকে অভিনয়ের পর দ্য ব্লু বেরি হান্ট ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান অহনা। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালে অহনার সাফল্যের পথ আরও মসৃণ হয়ে ওঠে লিপস্টিক আন্ডার মাই বোরখা ছবিতে অভিনয়ের পর। এই ছবিতে লীলার চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নজর কেড়েছিলেন তিনি।
ওয়েব সিরিজ ইনসাইড এজ-এ শাহানা বরিষ্ট-র চরিত্রে অভিনয় করেও যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছেন অহনা। এছাড়া তাঁর অভিনয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে অফিসিয়ালি সিইওগিরি, রংবাজ প্রভতি পাঁচটি ওয়েব সিরিজ। এরপর অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার ছবিতে প্রিযংকা গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি, মিটু ছবির নির্দেশক সাজিদ খানের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুলেও হইচই ফেলে দেন। ওই সময় অহনা জানিয়েছিলেন, সাজিদ খান তাঁকে শারীরিক ভাবে কোনও কিছু না করলেও, অন্ধকার জায়গায় নিয়ে গিয়ে অ্যাডাল্ট জোকস শুনিয়েছিলেন।
এই ঘটনার পর গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছিল যে, জনপ্রিয় নির্দেশকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি ভুল করেছেন, তাঁর কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এর ঠিক উলটোটা ঘটেছিল তাঁর জীবনে। ২০১৯ সালে তিনি একাধিক ওয়েব সিরিজের শুটিং-এ অংশ নেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওয়েব সিরিজ ছিল বেতাল, মরজি, স্যান্ডউইচ ফর এভার প্রভতি। এছাড়া, ২০২০ সালের শুরুতে খুদা হাফিজ ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। তাঁর এই ছবিটি করোনার আবহের মধ্যে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম-এ রিলিজ হয়েছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কমেডি চরিত্রেও অভিনয় করেছেন অহনা।
স্যান্ডউইচ ফর এভার ওয়েব সিরিজ, কমেডি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছিল প্রথম। তবে এই ওয়েব সিরিজে কমেডি চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করতে পারেননি অহনা। তবে তিনি থেমে নেই। বর্তমানে তিনি অভিনয় করছেন বাওরি ছোরি এবং সামসেরা ছবিতে। এই সামসেরা-য় অহনা অভিনয় করছেন রণবীর কপূর এবং সঞ্জয় দত্ত-র সঙ্গে। এছাড়াও নেটফ্লিক্স এর জন্য একটি ওয়েবসিরিজ এও কাজ করছেন সোনি রাজদান এবং রজত কপুরের সঙ্গে, নাম কল মাই এজেন্ট:বলিউড। সম্প্রতি অহনার সঙ্গে কথা হল Interview তাঁর ফিল্মি সফর প্রসঙ্গে।
আপনার মা সিবিআই অফিসার কিন্তু আপনার ওইরকম কোনও কাজে আগ্রহ জন্মায়নি কেন?
আমিও ইউপিএসসি পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। আমারও ইচ্ছে ছিল মায়ের মতো কোনও চাকরি করি কিন্তু ভাগ্য আমার অন্য পথে হেঁটেছে। তবে স্কুলে পারফর্মিং আর্ট-এ ঝোঁক ছিল আমার। অনেক স্টেজ প্রোগ্রামে অংশও নিয়েছি। এই দিকটি দেখে, আমার মায়ের মনে হয়েছিল, আমার জন্য পারফর্মিং আর্টস-ই ঠিকঠাক ফিল্ড। তাই তিনি আমাকে মাত্র ১৪ বছর বয়সে থিযেটার ওয়ার্কশপ-ও করিয়েছেন। আর তারপর থেকে কখন যে অভিনয়কে ভালোবেসে ফেলেছি জানি না। প্রথম দিকে আমি ব্যাকস্টেজ-এর কাজ করতাম। আসলে আমার মনে হয়, ভাগ্যচক্রে যার যা হওয়ার আছে, তাই হবে।
আপনার কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট কী ছিল বলে মনে হয়?
‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বোরখা’ ছবিতে অভিনয়-ই কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল বলে মনে হয় আমার। কারণ এই ছবির বিষয়ভাবনা এবং আমার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল দেশে এবং বিদেশে। আর এই প্রশংসা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, নিজের অভিনয় প্রতিভার উপর আস্থা বেড়ে গেছে। অবশ্য এর আগেও আমি সাফল্য পেয়েছি। আমার প্রথম ছবি দ্য ব্লু বেরি হান্ট-এ নাসিরুদ্দিন শাহ-র সঙ্গে অভিনয় করে সবার নজর কেড়েছিলাম কিন্তু লিপস্টিক আন্ডার মাই বোরখা আমাকে আরও অনেক বেশি সাফল্য দিয়েছে।
ওয়েব সিরিজ ‘স্যান্ডউইচ ফর এভার’-এ কমেডি চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করতে পারেননি। কী বলবেন এ প্রসঙ্গে?
খুব ফ্লপ হয়নি কিন্তু। মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। অনেকের যেমন মন জয় করতে পারিনি, ঠিক তেমনই অনেকেই তারিফ করেছেন। অতএব, এই কমেডি চরিত্রে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে মনে হয় না আমার। আসলে, অনেকদিন ধরে কমেডি চরিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছে নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু কেউ আমাকে সেই সুযোগ দিচ্ছিলেন না। সবার হয়তো মনে হতো, আমি শুধু গম্ভীর চরিত্রে অভিনয় করতে পারি। তাই দেরিতে হলেও যাঁরা আমাকে কমেডি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছেন, তাঁদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কাজে কতটা সন্তুষ্ট আপনি? কতটা সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন?
শুধু আমি কেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সুবিধে পাচ্ছেন অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী। প্রচুর কাজের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। পরিচিতিও বাড়ছে সমস্ত মাধ্যমে। তবে সবার হয়তো ভালো লাগছে না এই মাধ্যম কিন্তু কী আর করা যাবে! আমারও একসময় মনে হচ্ছিল আমি সিরিয়ালে অভিনয় করতে পারব না কারণ বড়ো একঘেয়ে।
অনেক টিভি সিরিয়ালের নির্দেশক তো আমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছেন। তাঁদের মনে হয়েছে, আমি ঠিক ধারাবাহিকের উপযুক্ত অভিনেত্রী নই। ঠিক বউমা বউমা লুক নেই আমার। তখন এইসব তুচ্ছতাচ্ছিল্যে খুব মন খারাপ হয়ে যেত কিন্তু ভেঙে পড়িনি, কাজ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেছি।
আসলে আমার মনে হয়, সব ক্ষেত্রেই প্রথমে কিন্তু কিন্তু থাকে, দ্বিধা থাকে কিন্তু এক সময় আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়, গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। যেমন এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম-এ এমন কিছু কাজ হচ্ছে যা এতটাই রিয়েলিস্টিক যে, দর্শকরা দারুণ রিলেট করছেন এবং ওটিটি-র কাজ জনপ্রিয় হচ্ছে।
আপনি নাকি নানারকম চ্যালেঞ্জিং চরিত্র ছাড়া অভিনয় করতে আগ্রহী নন?
ঠিক-ই। একইরকম চরিত্রে অভিনয় করতে বড়ো বিরক্তিকর লাগে আমার। তাছাড়া, চরিত্র চ্যালেঞ্জিং হলে বড়ো সাফল্য পাওয়ার সুযোগও বেড়ে যায়। তাই, চিত্রনাট্য পড়ার পর আগে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি, এই চরিত্রে অভিনয় করা উচিত হবে কিনা? উত্তর হ্যাঁ এলে তবেই সম্মতি জানাই। আসলে, নিজেকে গণ্ডিবদ্ধ করতে চাই না। উজাড় করে দিতে চাই সমস্ত প্রতিভা।