ওরা সবুজ, ওরা অবুঝ। ওরা উদ্দাম, ওরা চঞ্চল। ওদের বেশিরভাগ সময়টাই কাটে খেলার সামগ্রীর সঙ্গে। খেলতে খেলতেই ওদের সখ্যতা গড়ে ওঠে খেলনার সঙ্গে। খেলনাই ওদের প্রকৃত বন্ধু। খেলনার মাধ্যমেই ওদের মুখে কথা ফোটে, ভাষা নিপুণতা পায় এবং গড়ে ওঠে স্বতন্ত্র পরিচিতি। এ এক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। আর এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় গতি আনার জন্য এবং শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশের জন্য চাই খেলনা। তাই শিশুদের হাতে তুলে দিন ভালো কিছু খেলনা এবং ওদের শৈশবকে মজবুত করতে সাহায্য করুন।

শিশুদের জীবনে প্রথম পাঁচ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই সময়েই ভিত তৈরি হয়। বলা যায়, এই প্রথম পাঁচ বছরেই মস্তিষ্কের প্রায় ৮৫ শতাংশ বিকাশ সম্পূর্ণ হয়। তাই, সন্তানের সুন্দর, স্বাভাবিক এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য সহায়ক ভূমিকা নিতে হবে মা-বাবাকেই। বয়স অনুযায়ী শিশুদের হাতে উপযুক্ত খেলনা তুলে দিয়ে ওদের সরকম বিকাশে সাহায্য করতে হবে।

একটা সময় ছিল যখন কাপড় এবং মাটির খেলনাই কেবল সুলভ ছিল। কিন্তু এখন ইলেকট্রনিক খেলনার যুগ। খুব কম দামে নানারকম ইলেকট্রনিক খেলনা পাওয়া যায় আজকাল। কিন্তু দামটাই মুখ্য নয় বরং উপযুক্ত খেলনা শিশুদের হাতে তুলে দেওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনার সন্তানের এক মাস থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত কখন কোন খেলনা ওর হাতে তুলে দেবেন, তা জেনে রাখা জরুরি।

শূন্য থেকে মাস

জন্ম থেকে ৩ মাস পর্যন্ত শিশুদের সংবেদনশীলতা শুধু দেখা এবং শোনার মধ্যে সীমিত থাকে। এই বয়সে শিশুরা বেশিরভাগ সময় ঘুমোয়। আর যখন চোখ খুলে রাখে তখন শুধু দেখে এবং নিজের মতো করে প্রতিক্রিয়া জানায়। এই সময় ওরা আকণিীয় রং দেখতে চায় এবং মিষ্টি আওয়াজ শুনতে চায়। আর এই দেখা এবং শোনার মাধ্যমেই শিশুর বোধবুদ্ধি তৈরি হতে শুরু করে। তাই, এই বয়সে ওদের জানা চাই সুন্দর এবং মধুর ও আওয়াজ-যুক্ত খেলনা।

থেকে মাস

৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে বাচ্চাদের দাঁত ওঠে। এই সময় সবিকছু মুখে নিন চিবোতে চায় তারা। তাই বাচ্চাদের হাতে এমন কিছু খেলার জিনিস দিতে হবে, যা ক্ষতিকারক নয় কিংবা বিপদ ঘটাবে না। প্রসঙ্গত জেনে রাখুন, বাচ্চারা মুখে দিয়ে চিবোতে পারে অথচ ক্ষতিকারক নয়, এমন কিছু খেলার জিনিস তৈরি করেছে হ্র্যান্ডেড ওষুধ কোম্পানিগুলি। অতএব এইসব খেলার জিনিস কিনে দেওয়াই সঠিক কাজ হবে।

থেকে মাস

এই বয়সে বাচ্চারা উঠে বসতে চায় এবং একটু-আধটু হাঁটতে চায়। তাই এইসময় ওদের হাতে ব্যাটারি চালিত খেলনা দেওয়া উচিত। কারণ, চলমান খেলাকে অনুসরণ করতে করতে শিশুরা হাঁটতে উদ্দীপিত হয়।

থেকে ১২ মাস

এই বয়সে বাচ্চারা টলমল পায়ে হাঁটে। তাই ওদের ওয়াকার দেওয়া উচিত। সেইসঙ্গে, বিভিন্ন রং এবং আকার-আকৃতি চেনানো যাবে এমন খেলনাই দেওয়া উচিত।

বয়স যখন দুই

এক থেকে দু-বছর বয়সের বাচ্চারা ধীরে ধীরে সবকিছু শিখতে চায়। পশু, পাখি, মুল, ফল, গাছ, গাড়ি, ঘোড়া, জন্তু-জানোয়ার সবকিছু দেখতে চায়, জানতে চায়। তাই এই সময় ওদের এই ধরনের জিনিসকে কিংবা প্রাণীকে চেনানোর জন্য মাটির কিংবা প্লাস্টিকের তৈরি পশু, পাখি প্রভৃতির খেলনা দেওয়া উচিত।

বয়স যখন তিন

তিন বছর বয়স হলে শিশুরা খুব দুরন্ত হয়ে ওঠে। ওইসময় ওরা সবকিছু ছিঁড়তে কিংবা ভেঙে জুড়তে চায়। সবসময় নতুন কিছু একটা রূপ দিতে চায় কিংবা দেখতে চায়। তাই এই বয়সের বাচ্চাদের জন্য, খুললে জোড়া দেওয়া যাবে এমন খেলনা চাই। রেলগাড়ি, ম্যাজিক বক্স, ফোল্ডিং বেবি ডল প্রভৃতি খেলনা খুব সহজেই বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। অতএব, এইসব খেলনাই দেওয়া উচিত তিন বছর বয়সি বাচ্চাদের।

বয়স যখন চার

চার বছর বয়সের শিশুরা অনেকটাই বুঝতে শিখে যায়। তাই ওদের হাতে তখন ভেবেচিন্তে খেলনা দিতে হবে। পাজেল কিংবা এডুকেশন রিলেটেড খেলনাই দেওয়া উচিত এই বয়সের শিশুদের। কারণ, মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য এই বয়সে এই ধরনের শিক্ষামূলক খেলনারই প্রয়োজন।

বয়স যখন পাঁচ

এই বয়সের বাচ্চারা খুব কৌতুহলী হয়। সবসময় নানারকম প্রশ্ন করতে থাকে। ওরা তখন সবকিছু জানতে চায়, শিখতে চায়। একই বয়সি বাচ্চারা একসঙ্গে থাকলে ‌‘ঘর-ঘর’ কিংবা ‘অফিস-অফিস’ খেলা করে। আসলে বাড়িঘরে যা দেখে কিংবা মা-বাবার কাছ থেকে তাদের অফিস সম্পর্কে যা শোনে, সেই বিষয় নিয়েই খেলতে চায় ওরা। তাই ওদের জন্য প্লাস্টিকের তৈরি ছোটো ছোটো খেলার সামগ্রী এনে দিতে হবে। এর মধ্যে রান্নাবাটি, আসবাবপত্র, বিল্ডিং সেট প্রভৃতি খেলনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাস, ট্রাম, অটো, চার চাকার গাড়ি, লরি, সাইকেল, এরোপ্লেন, জাহাজ, এমনকী চিকিৎসা সরঞ্জামও খেলার সামগ্রী হিসাবে পেতে চায় শিশুরা।

বাইরে খেলার সামগ্রী

শিশুরা চার দেয়ালের মধ্যে খেলতে খেলতে যাতে বিরক্ত না হয়, তারজন্য মাঝেমধ্যে ওদের ঘরের বাইরে নিয়ে এসে খেলতে দিন। কোনও ফাঁকা জায়গায় কিংবা খেলার মাঠে শিশুদের হাতে ব্যাট, বল, বেলুন প্রভৃতি তুলে দিন। এতে ওরা আনন্দও পাবে এবং শারীরিক ভাবে মজবুত হবে।

জরুরি পরামর্শ

  • শিশুদের ত্বক খুব নরম থাকে। তাই সফ্ট মেটেরিয়াল-এ তৈরি খেলনাই শুধু ওদের হাতে দিন, যাতে ওদের ত্বকে কোনও চোট না লাগে।
  • খেলনা যেন ধারালো না হয়। কারণ, ধারালো খেলনা বিপদ ঘটাতে পারে।
  • ভালো দোকান থেকে ব্র্যান্ডেড খেলনা কেনাই ভালো কারণ, খেলনার গুণমান ঠিক না হলে, খেলনায় ব্যবহৃত রাসায়নিক থেকে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
  • বাচ্চারা যেহেতু সবকিছু মুখে তুলে নেয়, তাই খেলনার রং যেন পাকা হয় এবং খেলনা যাতে গিলে না নিতে পারে, তারজন্য আকারে বড়ো খেলনা দিন।
  • ব্যবহৃত খেলনার মাধ্যমে যাতে শিশুর শরীরে জীবাণু বাসা বাঁধতে না পারে, তারজন্য প্রতিদিন ভালো ভাবে খেলনা ধুয়ে রাখুন।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...