সম্প্রতি সারা পৃথিবী জুড়ে আবার নতুন করে বাড়ছে করোনার সংক্রমন। করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়ান্ট Omicron এখন ত্রাস হয়ে উঠছে৷বলা হচ্ছে ভারতে সংক্রমণের ৭৫ শতাংশই নাকি ওমিক্রনের দ্বারা সৃষ্ট৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই ভ্যারিয়ান্ট নিয়েই এখন জেরবার।
এই নতুন ভ্যারিয়ান্টটি প্রথম সনাক্ত করা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। ধীরে ধীরে সংক্রমণের হার বাড়তে বাড়তে এখন বেশ কয়েকটি দেশে প্রবেশ করেছে এই নতুন ভ্যারিয়ান্ট । হু-হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাত The World Health Organisation নতুন এই ভ্যারিয়ান্টের বিরুদ্ধে প্রতিটি রাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে এটি খুবই উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন ভ্যারিয়ান্ট। খুব দ্রুত হারে এটি বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবনতি করতে সক্ষম।
Delta Variant -এর থেকেও ভয়ঙ্কর Omicron variant। আরও বেশি সংক্রামক এবং আরও দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ছে করোনার এই নয়া প্রজাতি৷ কিন্তু কতটা ক্ষতিকারক করোনার এই নয়া চরিত্র? কী ভাবেই বা বুঝবেন ওমিক্রন সংক্রমণ ঘটেছে আপনার শরীরে।আগে আতঙ্কিত না হয়ে বিষয়গুলি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করুন৷
Omicron Symptoms সম্পর্কে জানুন
চিকিৎসকদের মতে ওমিক্রনের কিছু লক্ষণ রয়েছে যা সাধারণ কোভিড-এর চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যদিও আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রনের লক্ষণ হালকা এবং কিছু রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিত রোগীর চরম ক্লান্তি, গলা ব্যথা, পেশী ব্যথা এবং শুকনো কাশির মতো সমস্যা রয়েছে। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে জ্বর তেমন থাকে না৷
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ Delta আক্রান্তদের মতো Omicron আক্রান্তদের কেসে এখনও পর্যন্ত স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেনি। এমনকী করোনা আক্রান্তের কেসে এতদিন সবথেকে চিন্তার বিষয় ছিল রক্তে অক্সিজেন লেভেল হঠাৎ নেমে যাওয়া, এই new variant-এর ক্ষেত্রে তাও হয়নি। এই প্রজাতির ক্ষেত্রে উপসর্গ না-ও দেখা দিতে পারে। অতএব, এতটুকু শৈথিল্যকে প্রশ্রয় না দিয়ে কঠোরভাবে কোভিডবিধি মেনে চলার কথাই বলা হচ্ছে হু-র তরফে।
ত্বকের ফুসকুড়ি কোভিড-১৯ এর সঙ্গে যুক্ত
করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রনে যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের ত্বকের নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় উপসর্গের প্রকাশ দেখা যাচ্ছে বলে একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাতের আঙুল এবং পায়ের আঙুলগুলিতে লাল এবং বেগুনি ফুসকুড়ি হতে পারে, যার সঙ্গে শরীরে প্রচন্ড ব্যথা এবং চুলকানি অনুভূত হবে। আমাদের আশেপাশে বা বাড়ির কোনও পরিজনদের মধ্যে এ ধরণের সংক্রমণ হলে অতীব সত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং করোনা টেস্ট করা উচিত।
উপরন্তু, আরও দুই ধরনের ফুসকুড়ির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছ- যা কোভিড পজিটিভ রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যাক্তির শরীরে দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের ফুসকুড়ি বা র্যাশকে বলা হয় হাইভ-টাইপ ফুসকুড়ি এবং প্রিকলি হিট টাইপ ফুসকুড়ি। যদিও প্রথমটি হঠাৎ করে বাম্পের আকারে উদ্ভূত হতে দেখা দেয় এবং দ্রুত বিবর্ণও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয়টি সাধারণত আকারে ছোটো, অধিক চুলকানি যুক্ত এবং শরীরের যে-কোনও জায়গায় হতে পারে। প্রথম প্রথম এটি হালকা লাল দাগ তৈরি করে, সূত্রপাত হয় সাধারণত কনুই, হাঁটু এবং হাত ও পায়ের পিছনে, তার পর ধীরে ধীরে এটি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
কতদিনে শরীরে দেখা দেয় ওমিক্রনের লক্ষণ?
বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, পুরনো করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে ভাইরাস প্রবেশের পর ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যেই শরীরে ফুটে উঠত এই রোগের লক্ষণ। এমনকী কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১৪ দিনের মধ্যে দেখা দিত উপসর্গ। তবে ওমিক্রনের ক্ষেত্রে ২ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই শরীরে রোগ লক্ষণ ফুটে ওঠে। এক্ষেত্রে অন্যান্য করোনা ভাইরাসের তুলনায় ওমিক্রনের উপসর্গ দেখা যায় দ্রুত।
এই ধরনের আতঙ্ক এবং বিশৃঙ্খলার মধ্যে, নিরাপদ এবং সতর্ক থাকাই আমাদের দায়িত্ব। সর্বোপরি, বাইরের কারও সঙ্গে মেলামেশা না করা, ভিড় এড়িয়ে চলা ও বিশেষ করে ওমিক্রনের লক্ষণ রয়েছে এমন কারও সংস্পর্শে না আসা ইত্যাদি বিষয়গুলি মাথায় রেখেই আমাদের সাবধানে চলতে হবে।
ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্ট এখনও পর্যন্ত ‘হালকা’ বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু আমাদের কি এই মুহূর্তেই সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে৷আমাদের এখন থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আমাদের আশেপাশে বা বাড়ির কোনও পরিজনদের মধ্যে এ ধরনের সংক্রমণ হলে অতীব সত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং করোনা টেস্ট করা উচিত।