কাঠের ফ্লোরিং-এ যেমন থাকে আভিজাত্যের ছোঁয়া তেমনই ইন্টিরিয়রও এর প্রয়োগে দেখতেও গ্ল্যামারাস লাগে। এমন বহু পুরোনো বাড়ি অথবা স্কুলবাড়ি, হোটেলের দেখা মেলে যা হয়তো আজ ইতিহাসের পাতাতে নিজেদের নাম লিখিয়েছে– অথচ আশ্চর্য, এই সব পুরোনো বাড়ি, হোটেল, স্কুলের কাঠের পুরোনো মেঝে, কাঠের সিঁড়ি তাদের পুরোনো ঐতিহ্য আজও বহন করে চলেছে। তাদের সৌন্দর্য এতটুকুও ম্লান হয়নি। কাঠের ফ্লোরিং-এর বিশেষত্ব এটাই।
পুরোনো দিনের এই কনসেপ্টটাই সামান্য অদলবদল করে বেছে নিচ্ছে, আজকাল যারা বাড়ি অথবা ফ্ল্যাট বানাচ্ছে। বেডরুম, ড্রয়িংরুম সাজ বদলাচ্ছে। লাল সিমেন্ট, মোজাইক, সাদা সিমেন্টের মেঝে লুপ্তপ্রায়। মার্বেল, গ্র্যানাইট, উড্ ইত্যাদির কদর বেড়ে চলেছে। কাঠের রং বাড়ির সজ্জার সঙ্গে এতটাই মানানসই হয় যে, ঘরের লুক হয় লা-জবাব।
বহু প্যাটার্নের উডেন ফ্লোরিং বাজারে আজ পাওয়া যায়। যদি কেউ মনে করেন বাড়িকে একটু অন্যভাবে সাজাবেন তাহলে অবশ্যই বাছুন কাঠের ফ্লোরিং।
কার্ভড ডিজাইনঃ কাঠের উপর এই প্যাটার্ন দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে। এটি এক ধরনের আর্ট-ফর্ম। বহুদিন পর্যন্ত এই ফ্লোরিং কোনও কিছুতেই নষ্ট হয় না। রোদে ফ্লোরিং-এর রং আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
পারকিউট প্যাটার্নঃ এই ধরনের ফ্লোরিং-এর প্যাটার্ন ঘরকে দেয় ওয়ার্ম লুক। দাবার বোর্ডের মতো বক্স ডিজাইনে এটি পাওয়া যায়। বক্সের একটির রং হালকা হলে অপরটি হয় ব্রাইট কালারের।
হিরিংবোন প্যাটার্নঃ এই ধরনের প্যাটার্ন জিগজ্যাগ ডিজাইনের হয়ে থাকে। এই ফ্লোরে সজ্জিত ঘরের একটা সৌন্দর্য চোখের পক্ষে আরামদায়ক। কাঠের ক্রিম রং-টি এতটাই সোবার হয় যে দেয়ালে ব্যবহার করলেও ঘরের মনোরম শোভা বৃদ্ধি করে।
পেরিমিটার বর্ডার প্যাটার্নঃ ঃ আপনার ঘরের ফ্লোরের বর্ডার-কে আউটলাইন করার জন্যে এই প্যাটার্নের উড সিলেক্ট করা হয়। এটি ঘরের ফর্মাল লুক নিয়ে আসে। যদি ফ্লোরের ক্ষেত্রে আপনি কোনও ডিজাইন না চান, তাহলে এই প্যাটার্নের ফ্লোরিং যথোচিত হবে বলেই মনে হয়।
খুব সহজে লাগাতে পারবনঃ এখন উডেন ফ্লোরিং-এর ট্রেন্ড চলছে। বেশিরভাগ মানুষই যারা বাড়ি অথবা ফ্ল্যাট কিনছেন, কাঠের ফ্লোর অপ্ট করছেন। কাঠের ইনসুলেশন ক্ষমতা বেশি থাকার জন্যেই কাঠের ফ্লোর খুব টেকসই হয়।
কাঠের ফ্লোর করা অনেক সহজ কারণ তিন থেকে চার ঘন্টার মধ্যেই এটি লাগিয়ে ফেলা যায়। ফ্লোরের জন্য কাঠের স্ল্যাবগুলিকে এক বিশেষ বন্ডিং-এর সাহায্যে জুড়ে ইন্টারলক সিসটেমে লাগানো হয়ে থাকে। এতে লাগানোটাও অনেক সহজ হয়ে যায়।
এটি লাগাবার জন্য অথবা লক করার জন্য ‘টাং এবং গ্রুভ’ টেকনিক অথবা আঠা জাতীয় পদার্থ বা পেরেকের প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
বাজেট যখন কমঃ ঃ সম্পূর্ণ কাঠের ফ্লোরিং করাবার জন্য ভালো পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। এতটা আর্থিক সঙ্গতি যদি নাও থাকে, তাহলেও হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। আপনিও ঘরের লুক পছন্দমতো বদলাতে পারেন।
টেকনিকে আধুনিকতা আসার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে এমন ফ্লোরিং এখন পাওয়া যাচ্ছে, যেটি কাঠের না হয়েও একই রকম দেখতে লাগে। কম খরচে এই ফ্লোরিং করিয়ে কাঠের মতোই ঘরের গ্ল্যামারাস লুক বজায় রাখা যায়। ভিনিল, ভিনায়েল ইত্যাদি নানাধরনের ফ্লোরিং মেটেরিয়াল বাজারে পাওয়া যায়, যা কাঠের মতো দেখতে হলেও দামে অনেকটাই কম।
কাঠ ছাড়া অন্য বিকল্পঃ ভিনায়েল প্ল্যাংক ফ্লোরিং, পলি ভিনায়েল ক্লোরাইড (পিভিসি) দিয়ে তৈরি হয়। এটি অত্যন্ত উন্নত ধরনের প্লাস্টিক। এর পিছনে আঠা জাতীয় পদার্থ লাগিয়ে ফ্লোরে পেস্ট করে দেওয়া হয়।
এর হাইউড ফিনিশিং থাকার সঙ্গে সঙ্গে এটি ওয়াটারপ্রুফও বটে। এতে উইপোকার কোনও সমস্যা হয় না। যারা কেবল বেডরুম অথবা ড্রয়িংরুমই নয়, বাথরুমের চেহারাও বদলাতে আগ্রহী তাদের জন্য এটি খুবই ভালো বিকল্প।
পরিচর্যাঃ ফ্লোরের ধুলোমাটি, পরিষ্কার শুকনো কাপড় দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করুন। প্ত-ছ বছর অন্তর মেঝে পালিশ করানো বাঞ্ছনীয়। মেঝের উপর যদি কোথাও কোনও দরজা জানালা দিয়ে রোদ্দুর পড়ে তাহলে সেখানে পর্দা লাগাবার ব্যবস্থা করুন। রোদ্দুরের তাপে ফ্লোরের রং হালকা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফ্লোরে জল যেন জমা না হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ জল জমলে কাঠের মেঝে খারাপ হয়ে যাবে। যা যা করণীয়ঃ যে-ঘরে কাঠের ফ্লোর থাকবে সেখানকার আসবাবপত্রের পায়ের নীচে তুলোর প্যাড অথবা ফার্নিচার প্যাড লাগাবেন যাতে ফ্লোরে স্ক্র্যাচ না পড়ে।
দরজার বাইরে পাপোশ রাখবেন এবং তা যেন নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়।
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, সফট্ ব্রাশের সঙ্গে ব্যবহার করুন।
বাড়িতে যদি কোনও গৃহপালিত পশু থাকে তাহলে খেয়াল রাখবেন, নখ দিয়ে যেন ফ্লোর না আঁচড়ায়।
ভালো কোম্পানির ফ্লোর ক্লিনার ব্যবহার করবেন।
ফ্লোর পরিষ্কার করার জন্য ভালো মপ ব্যবহার করা উচিত।
কী কী করবেন না
– ভারী জুতো অথবা হিল চপ্পল যতটা কম এই ফ্লোরের উপর ব্যবহার করবেন ততটাই ভালো।
– অ্যামোনিয়া বা অন্য কোনওরকম অ্যাসিড ব্যবহার করবেন না।
– ফ্লোর ধুতে জলের ব্যবহার করবেন না এবং ভারী আসবাবপত্র মেঝের উপর সরাবেন না।