প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে পর্তুগিজরা এই স্থানে রাজত্ব করেন ফলে কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলে পর্তুগিজ সংস্কৃতির ছাপ স্পষ্ট। সঙ্গে রয়েছে গুজরাতি এবং মারাঠি সংস্কৃতির মিশ্রণও।

এবার পর্তুগিজ উপনিবেশ দিউ ভ্রমণ শুরু করব। দমন থেকে বেলা দ্বিপ্রহরে দিউ-এ প্রবেশ করলাম। হোটেলে ঘর ঠিক করেই আগে লাঞ্চ সারা হল। দিউকে দেখলেই মনে হয় এর চরিত্র আলাদা। যেন ঠিক আমাদের দেশের মধ্যে নয়। পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের নিদর্শন সর্বত্র। বেশ লাগছিল। আমাদের হোটেলটি একেবারে সমুদ্রের ধারে। ঘরের জানালা থেকে পথ দেখা যায় না। মনে হয়, যেন সমুদ্রের উপরেই রয়েছি। সন্ধ্যার পর সাগরের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজ, স্টিমার, নৌকোয় আলো জ্বলে উঠল। সেই আলো সাগরের বুকে ঝিকমিক করছে। মনে হচ্ছে যেন কোনও স্বপ্নপুরীতে এসে পড়েছি। আশ্চর্য সুন্দর লাগছে।

পরেরদিন ভোর পাঁচটায় উঠে তৈরি হয়ে প্রাতর্ভ্রমণে বার হলাম। চারিদিক ভরে আছে মায়াময় আঁধারে, অবশ্য পথে আলো আছে। পথ সমুদ্রের কিনারায়। আধো আলো আধো অন্ধকারে সাগর কিনারা ধরে পথ, চলা বড়ো ভালো লাগছে। পথে পড়ল অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের অফিস, টুরিস্ট লজ, কালেকটরের অফিস, হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউশন। দেখতে দেখতে অবশেষে পর্তুগিজ দুর্গের কাছে পৌঁছোলাম। ১৫৩৫ সালে নির্মিত, প্রাসাডি-দিউ-পর্তুগিজ স্মৃতিমণ্ডিত দিউ দুর্গ মুগ্ধ করল। এবার ফেরার পালা। চারিদিক ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে। তবে সূর্যদেবের দর্শন পাওয়া যাচ্ছে না। কুয়াশায় ঢাকা। পথে এক ভদ্রলোক হঠাৎ নমস্কার করে বললেন, ‘আপনারা বাঙালি?’ উনি বাঙালি। পাঁচ বছর এখানে আছেন পরিবার নিয়ে, এখানকার স্কুলের শিক্ষক।

ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়িতে ওঠা হল। গাড়ি ছুটে চলে সমুদ্রের ধার ঘেঁষে। মেঘভাঙা আলো জানাল, সূর্যদেব উঠেছেন। পথের দু’ধারে সবুজের ছয়লাপ— তাল, নারকোল, ঝাউয়ের সমারোহ। আর রয়েছে কলা, আতা, পেয়ারাগাছ। খানিক পরে সাগরবেলায় পৌঁছোলাম। সুন্দর বিচ। আমরা ঝিনুক কুড়োলাম, তারপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম সুনীল সাগরে। ঢেউ-এর সঙ্গে যুদ্ধ করে, কিছুক্ষণ পর উঠে এলাম পাড়ে। এবার হোটেলে ফিরে দ্বিতীয় দফার ভ্রমণে বার হলাম। প্রথমে ভোরে দেখা ফোর্ট। ভিতরে ঢুকে ঘণ্টাদুই ধরে ঘুরে ঘুরে পুরো কেল্লাটি দেখা হল। চারিদিকে শুধু কামান আর কামান। বোঝা যায় কেল্লাটি খুবই সুরক্ষিত ছিল। হিন্দু ও মুসলমানদের অনেক ফোর্ট দেখেছি, পর্তুগিজ ফোর্ট যেন একটু আলাদা ধরনের।

এরপর গেলাম চার্চ দেখতে। বিশাল চার্চ। পর্তুগিজ স্থাপত্যের অসাধারণ নিদর্শন। বিকেলে চার্চে বিশেষ উৎসব, তাই চোখে পড়ল তারই তোড়জোড়। এরপরের গন্তব্য এখানকার প্রাচীন চার্চ মাতরিজা গির্জা। বর্তমানে এখানে মিউজিয়াম হয়েছে। এই চার্চটিও পর্তুগিজ স্থাপত্যের একটি অনবদ্য নিদর্শন। এখানে জিশুর পুনরুত্থানের মূর্তি আছে। আর আছে বিখ্যাত সেন্টদের কাঠের তৈরি মূর্তি। মূর্তিগুলির শৈল্পিক মূল্য অপরিসীম। কাঠের স্তম্ভের উপর মূর্তিগুলি বসানো। স্তম্ভগুলির কারুকাজও অনবদ্য। এরপর যাওয়া হল গঙ্গেশ্বর বিচে। প্রচুর বিদেশির ভিড়। কেউ সমুদ্রে স্নান করছেন, কেউ বা রোদের মধ্যে শুয়ে আছেন। সিঁড়ি বেয়ে একটি টিলার উপর উঠলাম। খানিকটা জায়গা বাঁধানো উঠোনের মতো। থাক থাক সিঁড়ি করা আছে। অনেকটা গ্যালারির মতো। বাঁধানো স্থানটিতে কোনও অনুষ্ঠান হলে লোকে সিঁড়ির গ্যালারিতে বসে অনুষ্ঠান দেখতে পারে। তাছাড়া বেঞ্চও আছে বসার জন্য। এবার অন্য আর-একটি বিচে যাওয়া হল। খানিক সিঁড়ি ভেঙে একেবারে সমুদ্রের কিনারায় নেমে গেলাম। সেখানে একটা ছোটো গুহার মতো স্থানে পাঁচটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। জোয়ারের সময় শিবলিঙ্গগুলি সমুদ্রের জলে ডুবে যায়। আমরা, জোয়ার না থাকায় শিবলিঙ্গগুলিকে দর্শন করতে পারলাম।

হোটেলে ফিরে লাঞ্চের অর্ডার দেওয়া হল, তখন বেলা ৩টে বাজে। চিকেনকারির সঙ্গে ভাত ও রুটি। রান্না দারুণ। ৪.৩০ মিনিট নাগাদ আবার বেরুলাম, ঘণ্টা গেট দেখা হল। তারপর যাওয়া হল ফোর্ট ডুমার দেখতে। ফোর্টের লাল রং বলে ফোর্টটিকে লালকেল্লাও বলা হয়। কেল্লার বিশাল গেট। গেট পেরিয়ে কেল্লার প্রাচীরের মধ্যে দিউ-এর বিশাল জনবসতি। সামনেই খেলার মাঠ। অনেকগুলি স্বর্ণকারের দোকান দেখলাম। হস্তশিল্পের প্রস্তুতকারকরা বাড়িতেই দোকান করেছেন। কচ্ছপের খোলার ব্যাঙ্গেল, দুল ও লকেট প্রভৃতি বিক্রি হচ্ছিল। সুন্দর দেখতে। দিউ-এর বাসিন্দাদের কাছে কচ্ছপের খোলা খুবই শুভ। তাদের বিশ্বাস কচ্ছপের খোলা যেমন কচ্ছপকে ঢেকে রাখে, তেমনি কচ্ছপের খোলা অঙ্গে থাকলে তা সব অমঙ্গল থেকে শরীরকে  সুরক্ষিত রাখবে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ অ্যাংলো-পর্তুগিজ। এরপর আমরা গেলাম গঙ্গেশ্বর বিচে সূর্যাস্ত দেখতে। কিন্তু সূর্যদেব মেঘের অন্তরালেই অস্ত গেলেন। তবে মেঘছেঁড়া রাঙা রং আকাশকে রঙিন করল। আমরা সাগরবেলায় বসে সেই অপরূপ রঙের খেলা দেখলাম বেশ কিছুক্ষণ। তারপর হোটেলে ফিরে চা খেতে খেতে সাগরের উপর দীপাবলির রোশনাই চাক্ষুস করতে লাগলাম।

পরেরদিন ভোর পাঁচটায় উঠে তৈরি হওয়া। ৬.৩০ মিনিট নাগাদ যখন হোটেল ছাড়লাম, তখনও সূর্যোদয় হয়নি। চারিদিকে ভোরের নরম আলো। ঘণ্টা গেটে এসে চা খাওয়া হল। ৭টায় দিউ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। আগে গোয়াও গিয়েছি, কিন্তু দমন ও দিউ আমার কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয় মনে হল।

আমরা আহমেদাবাদ থেকে গুজরাট টুরিজমের সঙ্গে কচ্ছ ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছিলাম। এই ভ্রমণে টুরিজম আমাদের থাকার ব্যবস্থা করেছিল মাণ্ডবির সাগর কিনারায় একটি রিসর্টে। আহমেদাবাদ থেকে সকাল ৬টায় টুরিজমের বাসে রওনা হলাম মাণ্ডবির উদ্দেশে। ১২টা নাগাদ সমুদ্রের ব্যাকওয়াটারে প্রস্তুত নুনের কারখানা দেখলাম, আর ব্যাকওয়াটারের অগভীর জলে চোখে পড়ল প্রচুর পাখির মেলা। খুব ভালো লাগছিল দেখতে। পথে প্রচুর উট, ভেড়া, গরু, ছাগলের দল চোখে পড়ল। ৩টে নাগাদ ভদ্রেশ্বরের জৈন মন্দির পৌঁছোলাম। মন্দিরে জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ ও মহাবীরের মূর্তি রয়েছে। পার্শ্বনাথের সারা অঙ্গ সোনায় মোড়া। দুটি দেবীমূর্তিও স্বর্ণালংকারে ভূষিতা। মন্দিরটির স্থাপত্য নজরকাড়া। ৫১টি ছোটো মন্দির, প্রধান মন্দিরকে ঘিরে রেখেছে।

সূর্যাস্তের রাঙা আলো চোখে নিয়ে মাণ্ডবির সঙ্গে সাক্ষাৎ। দূর থেকে দেখা গেল সমুদ্রের সুনীল জলরাশির উপর সূর্যাস্তের রঙের রঙিন আলপনা। আর দেখলাম মাণ্ডবির বিশাল কেল্লার প্রাচীর, শেষ আর হয় না। ক্রমে গেট দেখা গেল। তারপরই কেলেঙ্কারি, আমরা পথ হারালাম। রিসর্টটি একেবারে নতুন হয়েছে, ড্রাইভার এবং গাইড কেউই চেনে না। অবশেষে অনেক ঘোরাঘুরির পর রাত ৮টা নাগাদ রিসর্ট খুঁজে পাওয়া গেল। কেউ তাঁবুতে ঢুকলেন, আমাদের দল প্লাস্টিকের তৈরি ঘর পেল। ব্যবস্থা মন্দ নয়। দেখতে খুবই ভালো, অ্যাটাচ বাথ। যাইহোক, সেদিনের মতো স্নান সেরে চা খেয়ে ঘুম।

পরের দিন ৪.৩০ মিনিটে ঘুম ভাঙল। ঘুরে ঘুরে আমাদের রিসর্টটাকে দেখলাম। বেশ সুন্দর, বাগানে ঘেরা প্লাস্টিকের তৈরি ঘরের সারি। তাছাড়া বাগানে তাঁবুও পড়েছে, সামনেই সমুদ্র। সমুদ্রের ধারে গেলাম, হালকা অন্ধকারে সমুদ্রের সাদা ফেনার ঝিলিক মনকে মোহমুগ্ধ করল। ঠিক ৮টায় গাড়ি ছাড়ল। বাসে বসেই দেখা হল একটি ছোটো টিলার উপর যক্ষের মন্দির। তার কিছুক্ষণ পর বেশ উঁচু পাহাড়ের উপর ছিন্দুয়ারি মাতার মন্দির। এই পাহাড়ই এখানকার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। তারপর শুরু হল সেই মহাপ্রান্তর ‘রণ অফ কচ’। কাঁটাঝোপে ভরা বালুকাময় ধূ ধূ প্রান্তর। তবে তারও অপূর্ব সৌন্দর্য আছে। ১১টা নাগাদ আশাপুরা দেবীর মন্দিরে পৌঁছোলাম। দেবী দর্শন করে আবার বাসে ওঠা। ১২.৩০ মিনিট নাগাদ নারায়ণ সরোবর। ১টায় মন্দির বন্ধ হয়ে যায়। বিশাল প্রাচীরে ঘেরা মন্দির প্রাঙ্গণ অনেকটা দুর্গের মতো। প্রধান মন্দিরে নারায়ণের মূর্তি, দ্বারকাধীশের অনুরূপ। এই মন্দিরের সামনে আরও দুটি মন্দির। এরপর যাওয়া হল সরোবর দেখতে, বিশাল সরোবরে টলটল করছে জলরাশি। ভারতের চারটি পবিত্র সরোবরের মধ্যে এটি একটি। এখানকার ধর্মশালায় আমরা সুস্বাদু প্রসাদ খেলাম, পয়সা লাগে না। তবে ডোনেশন ঐচ্ছিক।

অবশেষে পৌঁছোলাম ভারতের শেষ সীমান্তে, সমুদ্রের কিনারায় কোটেশ্বর শিব মন্দির দর্শন করতে। সমুদ্রের অপর কিনারায় পাকিস্তানের করাচি শহর। এই স্থানেই সিন্ধুনদ সমুদ্রে এসে মিলিত হয়েছিল। এখন নদের জলধারা শুকিয়ে গেছে তবে সমুদ্র দর্শন হল। সমুদ্রের ধারে নেমে গেলাম। একেবারে সমুদ্রের উপরেই মন্দির, সত্যি অপরূপ মন্দিরের অবস্থান। কোটেশ্বর শিবলিঙ্গ ছোটো, তবে ফুল দিয়ে অপরূপ করে সাজানো, ইনি হিংলাজ মাতার ভৈরব। কোটেশ্বর মন্দিরের পাশে অন্য একটি মন্দিরে বিশাল শিবলিঙ্গ দর্শন করলাম।

এবার ফেরার পালা। বেলা ৩টে নাগাদ লখপদ কেল্লায় আমাদের গাড়ি ঢুকল। বিশাল প্রাচীর। তবে ভিতরে সামান্য জনপদ ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। সর্বধর্মের মিলন এই কেল্লার মধ্যে একটি মন্দির, একটি গুরুদোয়ারা ও একটি দরগা আছে। কথিত আছে, এই গুরুদোয়ারায় একদা গুরু নানক এসেছিলেন। কেল্লার প্রাচীরের উপর উঠলাম, দূরে সমুদ্রের নীল রেখা দেখা যাচ্ছে। রাত্রি ৮টা নাগাদ মাণ্ডবিতে ফেরা।

রাত ৪টের সময় ঘুম ভেঙে গেল, উঠে পড়লাম, তারপর অন্ধকার রাস্তা ধরে সমুদ্রের ধারে গেলাম। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, আকাশভরা তারার ঝিকমিক, ঠান্ডা বাতাস বইছে। সাগরের কিনারা ধরে হেঁটে চলেছি, সমুদ্র দেখা যাচ্ছিল না, শুধু তার গর্জন কানে আসছে। খুব ভালো লাগছিল।

৬.৩০ নাগাদ সময় অন্ধকার থাকতেই আমাদের বাস ছাড়ল। ঘণ্টাখানেক পর হামিরঘর লেকের কাছে বাস থামল। তখন সূর্যদেব আকাশে সবে হামা দেওয়া শুরু করেছেন। লেকের কাছে রাজাদের বেশ কয়েকটি ছত্রী। তার মধ্যে রাজা লখপতজির ছত্রীটি সব থেকে বড়ো। ছত্রীগুলির শিল্পশোভা তুলনাবিহীন। একটা গম্বুজে মিনার কাজ অনবদ্য। এবার পৌঁছোলাম ভুজের প্রাচীন কেল্লার কাছে। বিশাল প্রাচীর, অনেকগুলি ছোটো ছোটো পাহাড় নিয়ে বিশাল কেল্লা। এখানে নাকি ভুজঙ্গ সাপ আশ্রয় নিয়েছিল, তাই এখানকার নাম ভুজ। প্রাচীন শহরের মধ্যে হাঁটতে খুব ভালো লাগছিল। বেনারসের মতো সরু সরু গলি, প্রচুর দোকানপাট, বহু প্রাচীন বাড়ি এবং কারুকার্যখচিত অপূর্ব দরজা। কিছুক্ষণ হেঁটে পৌঁছে গেলাম রাজার প্যালেসে। লখপত রায়জির প্যালেস, আয়নামহল, রানিমহল। রানিমহলে প্রবেশ নিষেধ। আয়নামহলে রাজাদের ব্যবহূত নানা বস্তুসম্ভার নিয়ে মিউজিয়াম হয়েছে। প্রাগমহল – গথিকশৈলীতে নির্মিত বিশাল প্রাসাদ। এর উপর থেকে গোটা ভুজ শহরটা দেখা যায়। অপূর্ব দৃশ্য। সন্ধ্যার সময় মাণ্ডবিতে ফিরে আসা।

পরেরদিন সকাল ৭.৩০ নাগাদ আবার বাসে চেপে বার হলাম। ভুজ ছাড়িয়ে আরও এগিয়ে চলা। পথের দু’ধারে রুখা প্রান্তর, কাঁটাগাছের ঝোপ, মাঝে মাঝে শষ্যখেতের সবুজ টিপ। অনেকক্ষণ চলার পর ক’টা বিশাল জলাভূমি পড়ল। প্রচুর পানকৌড়ি আর একসারি গোলাপি ফ্লেমিংগো ঠিক যেন একছড়া গোলাপি মুক্তোর মালার মতো দাঁড়িয়ে আছে। ক্রমে ভারতের শেষ গ্রাম খাবড়াকে পিছনে ফেলে আমাদের বাস সীমান্তের দিকে ছুটে চলল। একটা ব্রিজের কাছে পৌঁছোলাম। ব্রিজের তলায় এবং বহুদূর বিস্তৃত দুই প্রান্ত সাদা ধবধব করছে। নুন শুধু নুন। খুব খার আছে। নুনে পা দিলে পা কেটে যায়। ব্রিজের ওপাশে ভারতের সেনাদের ঘাঁটি, সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে, আমাদের যাওয়া বারণ। এবার ফিরে চলা।

মাণ্ডবি পৌঁছে এখানকার প্যালেস দেখতে যাওয়া হল। ৭০০ একর জমির উপর প্রাসাদ। প্রাসাদ ঘিরে ফলের বাগান। নীচের তলায়, অফিস ঘর, বসার ঘর, শোওয়ার ঘর, খাওয়ার ঘর, চা খাবার বারান্দা। উপরে রানিমহল। ছাদ থেকে সমুদ্র দেখা যায়, অপূর্ব দৃশ্য। প্রাসাদকে ঘিরে রয়েছে সুইমিং পুল, টেনিস গ্রাউন্ড, অতিথি নিবাস, রান্নাঘর, সারভেন্ট কোয়ার্টার।

এরপর আমরা সমুদ্রের ধারে গেলাম। সুন্দর, পরিচ্ছন্ন সমুদ্রসৈকত, তবে পৌঁছোনোর পূর্বেই পথে সূর্যদেব রক্তআবীর আকাশে ঢেলে দিয়ে অস্তাচলে চলে গেলেন। যাইহোক তবুও গোধূলির রঙে রাঙা সাগরবেলা আমাদের মুগ্ধ করল। ওখানে আমরা উটের উপর চেপে বেশ খানিকক্ষণ ঘুরলাম, দারুণ মজা লাগল, অভিনব অভিজ্ঞতা। সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে রইলাম, দূরে সমুদ্রের বুকে একটি জাহাজে আলো জ্বলে উঠল। মনে হচ্ছিল যেন আকাশের গায়ে হিরের একগাছি হার।

পরের দিন একটু দেরি করে বিছানা ছাড়লাম। ভোরের আকাশে অরুণোদয়ের রাঙা আলোর ইশারা। সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গেলাম। প্রচুর পাখি, বিশেষত সিগাল সমুদ্রের জলে খেলা করছে। জেলেদের নৌকোগুলি সমুদ্র যাত্রার আয়োজনে ব্যস্ত। কিছু নৌকো ইতিমধ্যে সমুদ্রে ভেসেও পড়েছে। একঝাঁক কালোরঙের পাখি সার বেঁধে হিরণ্ময় আকাশে উড়ে গেল। ঠান্ডা বাতাসে শীতশীত ভাব। অপরূপ দৃশ্য।

হোটেলে ফিরে ব্রেকফাস্ট সেরে বাসে ওঠা হল। শেষ হল আমাদের কচ্ছ ভ্রমণ। রাতে আহমেদাবাদ পৌঁছোলাম। পরেরদিন আহমেদাবাদ থেকে ট্রেনে কলকাতা ফেরা।

প্রয়োজনীয় তথ্য

কীভাবে যাবেন: গুজরাত টুরিজমের কলকাতার অফিসের ঠিকানা

৭তলা, চিত্রকূট বিল্ডিং, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস রোড, শ্রীপল্লি, এলগিন, কলকাতা ৭০০০২০, ফোন নম্বর – 033 2973 0409

গুজরাত বেড়ানোর জন্য গাড়ি ও থাকার ব্যবস্থা টুরিজম করে দিতে পারে। অথবা নিজেরাও করে নেওয়া যায়। সব জায়গাতেই মোটামুটি সবরকম দামের হোটেল পাওয়া যায় থাকার জন্য। গাড়ির ব্যাপারে দরাদরি করে ভাড়া ঠিক করে নেওয়া উচিত হবে। দলবদ্ধভাবে গেলে খরচ অনেক কম হয়, কারণ গাড়িভাড়া না করে গুজরাতের সর্বত্র ঘোরা প্রায় অসম্ভব। এছাড়া গুজরাত টুরিজমের সঙ্গে তাদের টুরের ব্যবস্থায় যাওয়াও ভালো হবে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...