আঁচিল নিয়ে সাধারণত খুব বেশি মাথা ঘামাই না আমরা। কিন্তু অনেক সময় শোনা যায় যে, কারওর ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব না দেওয়া মামুলি আঁচিলই পরবর্তীকালে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
দেখা যায় এই আঁচিল আদতে ক্যানসারাস। তবে একথা ঠিকই যে, বেশিরভাগ আঁচিলই নন-ক্যানসারাস যা সাধারণত জন্ম থেকেই শরীরে থাকে। আবার কিছু আঁচিল কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালে হয়তো বের হয়, আবার তা কালের নিয়মে মিলিয়ে যায়। এই বিষয়ে টেকনো ইন্ডিয়া দামা হসপিটাল-এর মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডা. সৌরভ ঘোষ-এর দেওয়া পরামর্শ তুলে ধরা হচ্ছে বিশদে।
আসলে, মেলানোসাইট নামক চামড়ার এক পিগমেন্ট একসঙ্গে একত্রিত হয়ে আঁচিল বা মোল তৈরি করে। মোল বিভিন্ন রংয়ের হতে পারে, যেমন, কালো, বাদামি, গাঢ় খয়েরি, লাল প্রভৃতি। এগুলি সাধারণত মসৃণ, চ্যাপ্টা বা চামড়া থেকে সামান্য উঠে থাকে। আকার সাধারণত গোল বা ডিম্বাকৃতি হয়। এক মিলিমিটার থেকে ছয় মিলিমিটারের মধ্যে সাইজ হয় এগুলির। শরীরের যে-কোনও জায়গায় আঁচিল হতে পারে। এমনকি চোখের ভিতর কিংবা নখের নিচেও আঁচিল হতে পারে। বেশি বয়সে যে সমস্ত আঁচিল তৈরি হয় এবং যখন সেগুলি আকারে বড়ো হতে শুরু করে কিংবা আকার, রং, মাপ, গঠন ইত্যাদিতে পরিবর্তন দেখা দেয়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
এক্ষেত্রে কিছু সতর্কতামূলক উপসর্গ আমাদের মাথায় রাখা উচিত এবং সেইসঙ্গে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বিশেষ জরুরি।
অপ্রতিসম বা অ্যাসিমেট্রিকাল আকার:
সাধারণ তিলের আকার সিমেট্রিক্যাল হয়ে থাকে। অর্থাৎ মাঝে দাগ কাটলে দুই দিক সমান। সেক্ষেত্রে যদি কারও তিল অপ্রতিসম আকার ধারণ করে অর্থাৎ একদিকে বৃত্তাকার, অন্যদিক বেশি ছড়ানো, তাহলে চিন্তার বিষয়।
ধার বা বর্ডার:
আঁচিল কিন্তু মোটামুটি বৃত্তাকার হয়। কিন্তু যদি আঁচিলটি অমসৃণ বা সেটির ধার খাঁজকাটা হয়, তাহলে চিন্তার বিষয়।
আঁচিলের রং বদল:
আঁচিল সাধারণত একই রঙের হয়। যেমন, লাল বা কালো বা বাদামি ইত্যাদি। কিন্তু সেই আঁচিল যদি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রং বদলায়, অর্থাৎ হঠাৎ যদি বাদামি থেকে কালো হতে থাকে বা যদি দেখা যায় একই আঁচিলের একেক জায়গায় একেক রং, তাহলেও তা কিন্তু ক্যান্সারাস আঁচিল হতে পারে।
আঁচলের আকার:
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কি আকার বদলাচ্ছে আপনার আঁচিলটি ? তবে সতর্ক হতেই হবে। দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ভয় না পেয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।
বিবর্তন:
আঁচিল সাধারণত মসৃণই হয়। কিন্তু এর উপরের স্তর যদি খসখস করে বা চুলকোয় কিংবা রক্ত বের হয়, তাহলে একেবারেই অবহেলা করা যাবে না।
মনে রাখতে হবে, যত তাড়াতাড়ি উপসর্গ দেখে চিকিৎসকের কাছে যাবেন, তত তাড়াতাড়িই চিকিৎসা শুরু করা যাবে। হয়তো সারিয়েও ফেলা যাবে।
যদি আঁচিলে কোনও পরিবর্তন আসে বা সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে তা বায়োপসি করে নিশ্চিত করতে হবে যে, ক্যানসারাস কিনা।
ক্যানসারাস আঁচিল হলে তার আদর্শ চিকিৎসা হল সার্জারি বা অপারেশন। যদি কোনও ক্যানসারাস আঁচিল প্রাথমিক স্তরে অপারেশন করে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ক্যানসার পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
সুতরাং সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা হল, আঁচিলের আকার, রং কিংবা চরিত্রের পরিবর্তন দেখলে যত দ্রুত সম্ভব অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তেমন কিছু নয় ভেবে অবহেলা করা অনুচিৎ।