সব বয়সের মানুষ খাদ্য-তালিকায় রাখতে পারেন সীফুড বা সামুদ্রিক খাবার। কারণ, সীফুড খেয়ে যেমন তৃপ্তি, ঠিক তেমনই স্বাস্থ্যকর। সীফুড চর্বিহীন এবং সহজে হজম করার মতো প্রোটিন। একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক প্রোটিনের প্রায় অর্ধেক চাহিদা পূরণ করতে পারে সামুদ্রিক খাবার।
বর্তমানে গুরুতর সমস্যাগুলির মধ্যে লাইফস্টাইল ডিজিজ অন্যতম। কিন্তু সামুদ্রিক খাবার প্রতিরোধ করতে পারে সবরকম লাইফস্টাইল ডিজিজ। তাছাড়া, সামুদ্রিক খাবারের স্বাস্থ্য উপকারিতাও প্রমাণিত হয়েছে গবেষণায়। সামুদ্রিক খাবারে এমন কার্যকরী উপাদান রয়েছে, যা স্থলজগতের জীবের মধ্যে নেই। এই উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে এন-থ্রি পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যেমন Eicosapentaenoic অ্যাসিড এবং Docosahexsaenoic অ্যাসিড, যা আর্টেরিওস্ক্লেরোটিক এবং থ্রম্বোটিক রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়াও, সামুদ্রিক খাবার বিভিন্ন পুষ্টির একটি উচ্চতর উৎস। যেমন প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ। সামুদ্রিক খাবার বর্তমানে মানুষের জন্য অপরিহার্য খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
সামুদ্রিক খাবারে উচ্চ-মানের প্রোটিন, এন-থ্রি পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (PUFA) এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন খনিজ ও ভিটামিন-এর জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এই পুষ্টিগুলি শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য অপরিহার্য। শারীরিক বৃদ্ধি, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্যও উপকারী। এরমধ্যে ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। তাছাড়া, সামুদ্রিক খাবার অনেক উন্নয়নশীল দেশে খাদ্য সংকট দূর করতে সাহায্য করেছে। শুধু তাই নয়, সীফুড বৈচিত্র্যময় এবং পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য একটি মূল্যবান পরিপূরক। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সারা বিশ্বে ধীরে ধীরে সামুদ্রিক খাবারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। মনে রাখবেন, এখন হাইপারলিপিডেমিয়া, এথেরোস্ক্লেরোসিস, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন প্রভৃতি লাইফস্টাইল-সম্পর্কিত রোগের ফলে কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ-এর (সিভিডি) প্রবণতা বাড়ছে। অনেক গবেষক প্রমাণ করেছেন যে, সামুদ্রিক খাবারের পুষ্টির বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং মন ভালো রাখে। সামুদ্রিক মাছের তেলে প্রচুর পরিমাণে ইপিএ এবং ডিএইচএ রয়েছে এবং এগুলি সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। সামুদ্রিক খাবার এবং এর থেকে প্রাপ্ত বায়োঅ্যাকটিভ উপাদানগুলি ভারসাম্যহীন খাদ্যাভ্যাস উন্নত করতে এবং জীবনধারা সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। একটি মেটা-বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে অন্তত একবার সামুদ্রিক মাছ খান, তাদের সিভিডি মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫% কম যারা মাছ খায় না তাদের তুলনায়। শৈশবে পর্যাপ্ত সামুদ্রিক খাবারের ব্যবহার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।
সামুদ্রিক খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম কম এবং এটি অনেক প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজগুলির একটি সমৃদ্ধ উৎস। সামুদ্রিক খাবারের মধ্যে রয়েছে ক্যাটফিশ, স্যামন, টুনা, ট্রাউট, চিংড়ি, কাঁকড়া, ক্লাম এবং ঝিনুক। সামুদ্রিক খাবার হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, স্থূলতা এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে পারে। সামুদ্রিক খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে। সীফুডের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন-ই, ভিটামিন বি১২, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, জিংক, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, তামা, পটাসিয়াম এবং সেলেনিয়াম। এ ছাড়া তৈলাক্ত মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-‘এ’ এবং ‘ডি’ থাকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সীফুড সেক্টরে ভারতের অসাধারণ অগ্রগতি মেলে ধরার লক্ষ্যে, মেরিন প্রডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (MPEDA) এবং সীফুড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (SEAI)-এর যৌথ উদ্যোগে এই শহরে আগামী বছরের ১৫-১৭ ফেব্রুয়ারি ২৩তম ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সীফুড শো (IISS) আয়োজিত হতে চলেছে।
এই প্রসঙ্গে MPEDA-র চেয়ারম্যান ড. কে এন রাঘবন জানিয়েছেন, ‘সীফুড সেক্টরের এই দ্বিবার্ষিকী অনুষ্ঠান কলকাতার বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গনে আয়োজিত হবে। ভারতের যে ব্যবসায়ীরা দেশের সামুদ্রিক পণ্য বিদেশে রপ্তানী করেন এবং বিদেশে যারা সেগুলি আমদানি করেন, তাদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য এটি একটি আদর্শ মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘এখানে উৎপাদক এবং পরিবেশক উভয়েই তাদের পণ্য সকলের সামনে তুলে ধরার দারুণ সুযোগ পাবেন এবং তাদের প্রসেসিং মেশিনারি, প্যাকেজিং সিস্টেম, প্রসেসিং করার উপাদান সামগ্রীর ডিলার ও কোল্ড চেন সিস্টেম ইত্যাদির জন্য ব্যবসায়িক চুক্তি করতে পারবেন। এরই পাশাপাশি, এখানে সেই সমস্ত পরিষেবা প্রদানকারীও যোগ দিতে পারবেন যারা লজিস্টিক্স এবং সার্টিফাইং অথবা টেস্টিং সম্পর্কিত কাজ করেন। এই সীফুড শো-তে ৭০০০ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে ৩৫০টিরও বেশি স্টল থাকবে। এছাড়াও থাকবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্রযুক্তিগত অধিবেশন।’