যদি আপনি ভেবে থাকেন, ত্বকই একমাত্র মাধ্যম ডিজাইনার ট্যাটু দেখাবার, তাহলে প্রথমেই আপনার দরকার বডি আর্ট সম্পর্কিত নতুন কী ট্রেন্ড বাজারে চলছে, সে সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া। ভারতে এখন নতুন ট্রেন্ড চলছে দাঁতে ট্যাটু করাবার। ঘাড়, নাক, কান, গোড়ালি, পেট এবং পিঠকে ট্যাটু অথবা নানা রঙের পাথর দিয়ে সাজিয়ে তোলার স্টাইল এখন কোনও নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করে না। এসবই এখন পুরোনো। আজকের যুবক-যুবতিরা দৌড়োচ্ছে দাঁতে ট্যাটু করাবার জন্যে যা স্টাইলের এক নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। হাসিতে এক্সট্রা চমক অথবা নতুন স্টাইলের জন্য এই অভিনব পন্থা খুব একটা খারাপ আইডিয়া বলে মনে হয় না।
নিজের সাদা দাঁতের হাসি দেখে একঘেয়ে বোধ করছেন? বদলে ফেলুন নিজেকে। নিয়ে আসুন নতুন লুক। দাঁতে ট্যাটু করান। বেছে নিন নিজস্ব ডিজাইন, রং। কাছাকাছি ভালো কসমেটিক ডেন্টাল সার্জেনের সঙ্গে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে করিয়ে ফেলুন ডেন্টাল ট্যাটু।
দাঁতের ট্যাটু বস্তুত কাসটম মেড ডিজাইন, যেটা একটা দাঁতের খোলসের উপর তৈরি করে সিল করে দেওয়া হয় এবং দাঁতের সঙ্গে সেট করে দেওয়া হয়। সাধারণত সামনের দাঁতেই এটা করানো হয় যাতে সহজেই চোখে পড়ে। কেউ চাইলে অবশ্য যে-কোনও দাঁতেই ট্যাটু করানো যেতে পারে। দাঁতের ট্যাটু করাবার জন্য অনেক ডিজাইনের মধ্যে থেকে নিজের পছন্দেরটা সহজেই বেছে নিতে পারবেন। ট্যাটু করানোই হয় একনজরে সকলকে চমকে দেওয়ার জন্য এবং নিজের পরিচিত, বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে নিজেকে আলোচনার বিষয় করে তুলতে।
যন্ত্রণাদায়ক নয়
দাঁতের ট্যাটু করাতে ভয়ের কোনও কারণ নেই। এটাতে বিপদ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। দাঁত ড্রিল করাবারও কোনও প্রয়োজন হয় না। আমাদের ন্যাচারাল দাঁতের উপরেই এটাকে ফিক্স করে দেওয়া হয়। খুব সহজ পদ্ধতিতেই দাঁতের ট্যাটু করানো হয়। সময়ও বেশি লাগে না, পছন্দ না-হলে সহজে তুলেও ফেলতে পারবেন ট্যাটু এবং সবথেকে বড়ো কথা এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ যন্ত্রণাহীন।
আজ ট্যাটুর জগতে দাঁতের ট্যাটু তার নিজস্ব জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। স্টাইলের দৌড়ে দাঁতের ট্যাটু বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে। যারা দাঁতে গয়না এবং কারুকার্য করাতে চান, তাদের মধ্যে ট্যাটু করাবার একটা হিড়িক পড়ে গেছে। এই ট্যাটু করাবার সুবিধা হল যতদিন ইচ্ছে, আপনি ট্যাটু রাখতে পারেন, বিনা যত্নেই ট্যাটু অবিকৃত থাকবে। যখন মুছে ফেলতে চাইবেন দুই মিনিটে একটি স্পেশাল বার এবং পলিশিং এজেন্ট দিয়ে মুছে ফেলতে পারবেন। অনেক মেয়েই নিজেদের ‘লুক’ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসে। একই সাজে বীতশ্রদ্ধ হয়ে গিয়ে নতুন হালফিল ফ্যাশন ট্রেন্ডকে বেছে নেয়। দাঁতের ক্ষেত্রেও যদি নতুন কিছু করা যায় তাহলে মন্দ কী?
যাদের দাঁতে সিরামিক খোলস পরানো থাকে, তাদের দাঁতেও ট্যাটু করা সম্ভব। ট্যাটুর আকার, আকৃতি এবং রঙের উপর নির্ভর করে, কত টাকা আপনার লাগবে। ছোটো ছোটো ট্রান্সপারেন্ট ক্রিস্টাল, যেগুলি বিভিন্ন রং এবং আকারে পাওয়া যায়, সেগুলিও দাঁতের কোনওরকম ক্ষতি না করেই দাঁতে লাগানো যায়। যদি ভুলে কেউ গিলেও ফেলে, যদিও তার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে, তাহলেও শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। দাঁত, মাড়ি, ঠোঁট সবকিছুই প্রভাবমুক্ত থাকে।
দাঁতের ট্যাটু সরাসরি দাঁতেও করা যায় অথবা মোলার ক্যাপেও করা যায়। এক ধরনের বিশেষ কালি ব্যবহার করা হয় দাঁতের উপর আঁকা অথবা পেন্ট করবার জন্য। এর সঙ্গে ব্যবহার হয় স্পেশাল ব্র়াশ। এই পদ্ধতির পর লেড আলো এর উপর প্রয়োগ করা হয় যেটা এই ট্যাটুর ডিজাইনকে আরও মজবুত করে এবং দাঁতের উপর এটা বেশিদিন টিকে থাকতেও সাহায্য করে।
কী এই ডেন্টাল ট্যাটু?
ডেন্টাল ট্যাটু অথবা দাঁতের ট্যাটু এক ধরনের আর্টওয়ার্ক যেটা দাঁতের উপর করা হয়। এটা একটা বিশেষ ধরনের ছাপার কাজ যা দাঁতের (সামনের অথবা পিছনের) উপর করানো হয় কিছু সময়কালের জন্য বা একদম পাকাপাকি ভাবে। দাঁতের যে-কোনও ল্যাব অর্থাৎ ক্লিনিকে দাঁতের টেকনিশিয়ান, ক্লায়েন্টের পছন্দমতো ডিজাইন এবং রং এঁকে দেন ক্লায়েন্টের মোলার অথবা সামনের দাঁতে। ক্লায়েন্টরা নিজেদের পছন্দমতো দাঁতও বেছে নেন ট্যাটু করাবার জন্য। টেম্পোরারি ট্যাটুর ক্ষেত্রে এটা তুলে ফেলা সম্ভব ডেন্টিস্ট-এর কাছে গিয়ে। একটা রবারের চাকার সাহায্যে ডাক্তাররা মুহূর্তে এই ট্যাটু মুছেও দেন।
কীভাবে দাঁতের ট্যাটু করা হয়?
দাঁতে ট্যাটু করাবার নানারকম পদ্ধতি রয়েছে। এটা পুরোপুরি নির্ভর করে কী ধরনের ট্যাটু আপনি করাতে চান, অর্থাৎ টেম্পোরারি অথবা পার্মানেন্ট। টেম্পোরারি বা সাময়িক ট্যাটুর ক্ষেত্রে ডিজাইন টেমপ্লেট-এর মতো হয়, সেটাই দাঁতে আটকে দেওয়া হয়। অনেক রকমের ডিজাইন রয়েছে। তার মধ্যে বেছে নিতে পারেন। এছাড়া ডেন্টাল ল্যাবে নিজের পছন্দের ট্যাটুও বানিয়ে নিতে পারেন। ডাক্তাররা সেই ট্যাটু-ই পরে, দাঁতে আটকে দেবেন। পার্মানেন্ট ট্যাটু দাঁতে ড্রিল করে করা হয়। একবার করা হলে আর কখনও তুলে ফেলা যায় না।
দাঁতে ট্যাটু করানো কি এখনকার স্টাইল ট্রেন্ড?
হ্যাঁ, খুব দ্রুত এই স্টাইল ট্রেন্ড ছড়িয়ে পড়ছে, বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে। কলেজে যাচ্ছে এমন যুবক-যুবতি এবং ইয়ং ছেলে-মেয়ে যারাই স্টাইলের মাধ্যমে অন্যের মনে রেখাপাত করতে চায়, তারাই ডেন্টাল ট্যাটু করানো পছন্দ করছেন।
দাঁতে ট্যাটু করাবার পর কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়?
দাঁতে একবার ট্যাটু হয়ে যাওয়ার পর, দাঁতের যথাযথ যত্ন নেওয়া এবং ওরাল হাইজিন মেনে চলা খুবই প্রয়োজন। দিনে অন্তত দু’বার দাঁত মাজা উচিত। এছাড়া মাঝেমধ্যে দাঁতের ডাক্তার দিয়ে একবার দাঁতের পরীক্ষা করানোও খুব জরুরি।
দাঁতের ট্যাটু করাতে কত খরচ পড়ে?
দাঁতের ট্যাটু করাতে বিশেষ খরচা করতে হয় না। ডিজাইন, রং এবং সাময়িক অথবা পাকাপাকি ট্যাটুর উপর নির্ভর করে এর খরচ।
এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কী?
না, এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত। এই ট্যাটু প্রপার ডেন্টাল ক্লিনিকে, যথোপযোগী ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করেই করা হয়ে থাকে।
দাঁতের গয়না
আগেকার দিনে অনেকেই নিজেদের অসুন্দর দাঁত লুকোবার জন্য সোনা অথবা রুপোর খাপ তৈরি করাতেন এবং তা দাঁতে পরে থাকতেন। কিন্তু এখন ধারণা বদলেছে। দাঁতে এখন ছোট্ট একটা ক্রিস্টাল লাগিয়ে নেওয়া আধুনিক ফ্যাশন। এটা খুবই নতুন কনসেপ্ট। দাঁতে ক্রিস্টাল লাগালে সেটা টেকসইও হয়। যদি কোনও কারণে রত্নটি আলগাও হয়ে যায়, সেটা ঠিক করে আবার সেট করাতে কোনও ঝঞ্ঝাটও হয় না।
দাঁতের গয়না বলতে শুধুমাত্র ক্রিস্টালই নয়, নানারকম দামি এবং কমদামি রত্ন, মেটালের তৈরি ক্রিস্টালও হয়ে থাকে। দাঁতে গয়না এই জন্যই অনেকে লাগাতে চান, যাতে তাদের হাসির ঝলকানি হৃদয়ে গেঁথে যায়। এটা লাগানোর পদ্ধতিটাও সম্পূর্ণ সমস্যা মুক্ত এবং সময়ও লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। প্রথমে একমাস হাইজিন মেনে চলতে হয়। তারপর একধরনের ডেন্টাল আঠার সাহায্যে রত্নটি দাঁতে আটকে দেওয়া হয়। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা দাঁতের এই নতুন ফ্যাশন খুব পছন্দ করছে। হিরে লাগানোটাই সকলের বেশি পছন্দ কিন্তু রঙিন পাথরেরও চাহিদা রয়েছে। যে-দাঁতটিতে পাথরটা লাগানো হবে, সেটি আগে ডেনটিস্ট ভালো করে পরীক্ষা করেন। কোনওরকম অসুবিধা না-থাকলে তবেই ডাক্তার পাথর বসান। বাজারে এখন নানা ডিজাইনের গয়না পাওয়া যাচ্ছে। স্টার, হার্ট, ফিশ, লিপ ইত্যাদি ডিজাইনে বাজার এখন গরম। দামের পার্থক্য হয় পাথরের সাইজ, আকৃতি এবং রঙের উপর নির্ভর করে।