‘বিবাহ’ শব্দের বিবিধ অর্থ হল আজীবন এক পুরুষ নারীকে তার স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সুখে দিনাতিপাত করবে। অপরদিকে নারীকে, পুরুষ অর্থাৎ স্বামীর কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে গৃহস্থালি রক্ষণাবেক্ষণ করে সংসারটিকে সুখের করে তুলতে হবে। কিন্তু আজকের আধুনিকমনস্ক দ্রুততর জীবনে, বিয়ের কনসেপ্টটাই গেছে বদলে। একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই বোঝা যায় তফাৎটা। আগে বিয়ে মানেই বাড়িতে প্যান্ডেল, নহবতখানা। ভিয়েনের ঢিমে আঁচে মিঠে মিঠে পাক করার সুবাস। সেই নহবত শব্দটাই আজকের প্রজন্মের কাছে বেশ অচেনা। গ্রামের দিকে তবুও নহবতের চল আছে। দিনভর নহবতখানায় বসে সানাইওয়ালাদের সানাই বাজানোর রেওয়াজ ছিল সচ্ছল বাড়িতে। বিয়ের দিন সকাল থেকেই শুরু হতো সানাইয়ের পোঁ। মেয়ে পক্ষ হলে বাসি বিয়ের দিন বাজত বিষাদের সুর। সেই সুর মূর্চ্ছনায় আরও বিষাদময় হয়ে উঠত কনে বিদায়ের ক্ষণটি।
নহবতখানার পরিবর্ত হয়ে উঠেছে এখন ব্যান্ড। অর্থবান বিয়েবাড়ির ক্ষেত্রে প্রফেশনাল ব্যান্ড ভাড়া করে আনা হয়। হিন্দি গানের সঙ্গে নাচেন বাড়ির ষোলো থেকে ষাট। বাঙালি বিয়েতেও অক্লেশে এখন ঢুকে পড়েছে এই ভিনপ্রদেশের ‘কালচার’। বিয়েবাড়ির প্রধান দরজায় জুঁই-চামেলির গন্ধ পাওয়া যায় না, বরযাত্রী এলে তাদের সর্বাঙ্গে গোলাপজল ছিটিয়ে দেওয়ার রীতিও নেই। তার বদলে বিয়েবাড়ির দরজা সাজানো হচ্ছে শুকনো, আর্টিফিসিয়াল ফুলে। বর্ণ আছে কিন্তু গন্ধহীন সব। এমনকী এখন সার্ভিস প্রোভাইডার-দের সঙ্গে যোগাযোগ করলে নানা প্রাদেশিক থিম মোতাবেক সাজিয়ে ফেলা যাবে বিয়ের মণ্ডপ থেকে মেনু, সবকিছুই। খোদ বাঙালি বাড়ির কেতাদুরস্ত রিসেপশনে উঠে আসছে কখনও থিম পঞ্জাব কিংবা থিম রাজস্থান।
নব্বইয়ের দশকেও বিয়ে মানে যে-তোড়জোড়, আবেগ, ব্যস্ততা কাজ করত, মাইক্রো পরিবারের কাঠামোয় এখন তা কোথায়! সবকিছুই আজ ‘আইটেম’-এ পরিণত হয়েছে। বাড়িতে ভিয়েন বসা শুনলে ছেলেমেয়েরা প্রশ্নচিহ্ন নিয়ে মুখের দিকে তাকায়। ভিয়েন কী? যেখানে সারারাত জ্যাঠামশাই, মামা, কাকারা বসে থাকতেন, মিষ্টি তৈরির সময়। আজ সে জায়গা নিয়েছে কেটারার। একটা ফোন ঘোরালেই হল। তারা আপনার সাধ আর সাধ্য মতন প্রতি প্লেটের দাম বলে দেবে। মাছ, মাংস, লুচি, রাধাবল্লভি যা যা চাই সেই অনুযায়ী দাম। খাবারের পদগুলোও সব বদলে গেছে। প্রথম পাতে লুচি, ছোলার ডাল, লম্বা ফালি করে কাটা বেগুনভাজা আর আদার আচার... লা জবাব।