ডায়াবেটিক পায়ের আলসারে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে রোগীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত সঞ্চালন হয় অপর্যাপ্ত এবং অস্ত্রোপচার বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে সাফল্যের হারও খুব কম!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বেল ভিউ ক্লিনিক AI-নির্ভর টিস্যু পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়ায় ডায়াবেটিক ফুট আলসার সার্জারির সূচনা করেছে। এই প্রসঙ্গে বেল ভিউ ক্লিনিকের সিইও প্রদীপ টন্ডন  জানিয়েছেন, ‘এটি ডায়াবেটিক রোগী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক।’ টিস্যু পুনঃস্থাপন বিশেষজ্ঞদের একটি কোরিয়ান দলকে তিনি স্বাগত জানান, যারা এই বিষয়ে অত্যাধুনিক গবেষণায় নিয়োজিত।

এই প্রকল্পের নেতৃত্বদানকারী বিশিষ্ট প্লাস্টিক সার্জেন ডা. রাজন টন্ডন জানান, ‘4D ভিত্তিক বায়ো-প্রিন্টিং (শরীরের প্রাকৃতিক টিস্যু ব্যবহার করে এবং রোগীর দেহের চর্বি বা স্নেহকোষের সঙ্গে 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তি একত্রিত করে) ডায়াবেটিক ফুট আলসার-এর মতো একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতের চিকিৎসায় এটি একটি বাস্তব পদ্ধতি, যাতে প্রচলিত পুনর্গঠন পদ্ধতিগুলি এড়িয়ে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। কারণ প্রচলিত পদ্ধতিতে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি থাকা এবং বিভিন্ন ধরণের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

DERRIM কিটস ব্যবহার করে এই ECM বায়ো প্যাচ তৈরি করা হয়েছে ‘ন্যানোফ্যাট’ (রোগীর চর্বিযুক্ত গ্রাফ্ট থেকে প্রস্তুত) এবং বায়ো-কালিগুলি একত্রিত করে, যা Alkem Medtech দ্বারা ভারতে চালু করা হয়েছে। এই এক্সট্রা সেলুলার ম্যাট্রিক্স (ECM) হল একটি জটিল নেটওয়ার্ক যা একটি কোষ/টিস্যু-নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সংগঠিত মাল্টি-ডোমেন ম্যাক্রোমলিকুলের একটি অ্যারে সমন্বয়ে গঠিত। ইসিএম-এর উপাদানগুলি একসঙ্গে সংযুক্ত করে কাঠামোগত একটি স্থিতিশীল যৌগ গঠন করে, যা টিস্যুগুলির স্বাভাবিক কাজকর্মের বৈশিষ্ট্যগুলি বজায় রাখতে সহায়তা প্রদান করে। ভবিষ্যতে আমরা ট্রমা, ক্যান্সার এবং জন্মগত ত্রুটিগুলির চিকিৎসার চাহিদা মেটাতে রোগীর প্রয়োজনভিত্তিক যৌগিক টিস্যু পুনর্গঠনের দিকে নজর দিতে পারি।’

DFU and treatment
Dr. Rajan Tondon

ডায়াবেটিক ফুট আলসার (DFU) ডায়াবেটিসের সাধারণ সমস্যা। এই আলসার হল একটি খোলা ঘা বা ক্ষত যা প্রায় ১৫ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় এবং সাধারণত পায়ের নীচে থাকে। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের পায়ের আলসার হতে পারে। যারা ইনসুলিন ব্যবহার করেন তাদের পায়ের আলসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, যেমন ডায়াবেটিস-সম্পর্কিত কিডনি, চোখ এবং হৃদরোগের রোগীদের ক্ষেত্রে। অতিরিক্ত ওজন এবং অ্যালকোহল এবং তামাক ব্যবহারও পায়ের আলসারের বিকাশে ভূমিকা পালন করে। পায়ে অনুভূতির অভাব, দুর্বল সঞ্চালন, পায়ের বিকৃতি, জ্বালা (যেমন ঘর্ষণ বা চাপের মতো), এবং ট্রমা, সেইসঙ্গে ডায়াবেটিসের সময়কালের মতো কারণগুলির সংমিশ্রণের কারণে আলসার তৈরি হয়। বহু বছর ধরে ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীদের নিউরোপ্যাথি হতে পারে, সময়ের সঙ্গে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে, স্নায়ুর ক্ষতির কারণে পায়ে ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। স্নায়ুর ক্ষতি প্রায়শই ব্যথা ছাড়াই ঘটতে পারে এবং কেউ সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতন নাও হতে পারে। আপনার চিকিৎসক নিউরোপ্যাথির জন্য পা পরীক্ষা করতে পারেন।ভাস্কুলার রোগ পায়ের আলসারকে জটিল করে তুলতে পারে, শরীরের নিরাময়ের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা শরীরের সম্ভাব্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে এবং নিরাময়কেও পিছিয়ে দিতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের আলসার বিভিন্ন কারণে চিকিৎসা করা উচিত। সংক্রমণ এবং অঙ্গচ্ছেদ ঝুঁকি কমাতে, জীবনের মান উন্নত করতে এবং স্বাস্থ্য সেবার খরচ কমাতে। পায়ের আলসারের চিকিৎসার প্রাথমিক লক্ষ্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাময় করা। ক্ষত যত দ্রুত নিরাময় হবে, সংক্রমণের সম্ভাবনা তত কম। তবে এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা উচিত, সব আলসার সংক্রমিত হয় না। যদি চিকিৎসক সংক্রমণ নির্ণয় করেন, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক, ক্ষতের যত্ন এবং সম্ভবত হাসপাতালে ভর্তির একটি চিকিৎসা প্রোগ্রাম-এর প্রয়োজন হতে পারে।

সংক্রমণ প্রতিরোধঃ আলসার সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে–

  • রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখুন
  • আলসার পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে রাখুন
  • ড্রেসিং বা ব্যান্ডেজ ব্যবহার করে প্রতিদিন ক্ষত পরিষ্কার করুন
  • খালি পায়ে হাঁটবেন না
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...