সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এমন এক অবস্থা, যাতে হৃদপিণ্ডের ইলেকট্রিক সার্কিটগুলো গোলমাল করে এবং হৃদস্পন্দন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়া মানুষ আচমকা অজ্ঞান হয়ে যান। এ জিনিস যে-কোনও মানুষেরই হতে পারে যে-কোনও সময়। এমনকি, অ্যাথলিটদের মত সুস্থ সবল মানুষদেরও এমনটা হতে পারে।
হৃদপিণ্ডের ধমনীতে ব্লকেজ থাকার জন্য যে হার্ট অ্যাটাক হয়, তাতে রোগীর বুকে ব্যথা হয়, শ্বাসকষ্ট, অস্বস্তি হয়, গা গুলোয় এবং প্রচণ্ড ঘাম হয়। এমনকি তিনি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধও করতে পারেন এবং নিয়ে যাওয়ার সময়ও থাকে। কিন্তু সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এটা একেবারেই আচমকা ঘটে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে কোনও রোগের লক্ষণই দেখা যায় না। সুতরাং রোগীর চারপাশে থাকা লোকেরাই একমাত্র তার জীবন বাঁচাতে পারেন।
কারোর শ্বাস-প্রশ্বাস বা হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত এমার্জেন্সি অবস্থা দেখা দিলে যে জীবনদায়ী কৌশল কাজে আসে, তা হল কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন (CPR)। একজন রোগীকে CPR দিতে যাচ্ছেন এমন প্রশিক্ষণবিহীন ব্যক্তির প্রতি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ হল, প্যারামেডিকরা পৌঁছনো পর্যন্ত মিনিটে ১০০ থেকে ১২০ বার পর্যন্ত জোরে জোরে এবং দ্রুত বুকে চাপ দিন। যদি একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি রোগীর পালস না পান এবং নিশ্বাস পড়ছে না বোঝেন, তাহলে অবশ্যই ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ৩০ বার বুকে চাপ দিয়ে CPR করতে হবে। তারপর দুটো রেসকিউ ব্রেথ দিতে হবে। এই ব্যবস্থা প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের CPR দরকার হলে প্রযোজ্য কিন্তু নবজাতকদের (৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত) বেলায় প্রযোজ্য নয়।
এই প্রসঙ্গে অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস, কলকাতা-র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট অ্যান্ড ইলেকট্রো ফিজিওলজিস্ট ডা. আফতাব খান জানিয়েছেন, ‘হার্ট যখন হঠাৎ থেমে যায় তখন মস্তিষ্ক, যা শরীরটাকে চালানোর জন্যে সবচেয়ে জরুরি অঙ্গ, সেটা আর রক্ত পায় না। আর মস্তিষ্ক যদি ৩ মিনিটও রক্ত না পায়, তাহলেই স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, যাকে আমরা কোমা নামে চিনি। আর ১০ মিনিটের মধ্যে রোগী মারা যেতে পারেন। যেহেতু ডাক্তার ডাকা বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মত সময়ও থাকে না, সেহেতু রোগীর পাশে যারা থাকেন তাদেরই রোগীকে বাঁচানো জরুরি।’