ভারতের পৌরাণিক ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যাবে, পিতা, পুত্রের জন্য প্রাণ দেন বা পুত্রের প্রাণ কেড়ে নেন, যাতে নিজের প্রাণ রক্ষা পায়। সম্প্রতি পুলিশ এমন এক ব্যক্তিকে ধরেছে, যে গুপ্তধন পাওয়ার আশায়, বিমাতা এবং তান্ত্রিকের নির্দেশে, ১৬ বছরের ছেলেকে বলি দিয়েছে। এই ঘটনাটি ২০১৪ সালে ঘটেছিল তামিলনাড়ুর উরেয়র-এ।

পৌরাণিক কাহিনিতেও পুত্রহত্যা, বলিদান প্রভৃতির প্রমাণ পাওয়া যায়। হিড়িম্বার পুত্র ঘটোৎকচকে একটি বিশেষ অস্ত্র দিয়ে কর্ণকে হত্যা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কারণ, সেই অস্ত্রটি অন্যথায় অর্জুনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতো।

ইংরেজি ভাষায় লেখা অনুজা রামচন্দ্রন-এর অর্জুন, যা মহাভারতের অ্যাডাপ্টেশন, তাতে এই ধরনের রাজনীতি বর্ণিত হয়েছে। ইন্দ্র কর্ণকে অপরাজেয় শক্তি-অস্ত্র দিয়েছিলেন এবং ওই অস্ত্র অর্জুনের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ঘটোৎকচের হাতে চলে যায়। আসলে এ এক অদ্ভুত যুদ্ধ-কৌশল।

ভীমের ছেলের মৃত্যু যতটাই আবশ্যক হোক না কেন, এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, আসলে অশান্তি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যেই কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। যুদ্ধ জেতার জন্য এই ধরনের কৌশল অবলম্বন করার বিষয়টিকে কখনওই সমর্থন করা যায় না। যুদ্ধে মৃত্যু ঘটে ঠিকই কিন্তু দুর্বলের উপর আক্রমণ ঠিক নয়।

যে-কোনও খারাপ জিনিসই মানুষকে আকৃষ্ট করে বেশি৷ পৌরাণিক কথায় ভালো দৃষ্টান্তমূলক ঘটনাও যেমন আছে, তেমনি আছে চক্রান্ত আর হত্যার নানা কাহিনি৷অসাধু উদ্দেশ্য নিয়ে, মহাভারতের এইসব নেতিবাচক  ঘটনা কমিক বুকস, টিভি ধারাবাহিক প্রভৃতির মাধ্যমে প্রতিদিন সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে ধূর্ততার সঙ্গে প্রয়োগ করছে এইসব রণকৌশল। আর তাই তামিলনাড়ুর ওই খুন হওয়া ছেলেটির পিতাও একই রাস্তায় হেঁটেছে।

ধর্মগ্রন্থের অনৈতিক বিষয়গুলি প্রভাবিত করে ক্ষুধার্ত মানুষকে৷তাদের অন্যায় করতে প্ররোচিত করা হয় সুযোগ বুঝে।  চেঙ্গিজ খান, তৈমুরলঙ কিংবা হিটলারের মতো লোকেরা এভাবেই দুর্বলের উপর বলপ্রয়োগ করেছেন ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। আর এই ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। ভ্লাদিমির পুতিনও বেছে নিয়েছেন এই একই অত্যাচারের পথ। একের পর এক মিসাইল আক্রমণে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন কিয়েভ শহর৷ভারতেও এর ব্যতিক্রম কিছু নেই। কোথাও ধর্মীয় ভেদাভেদ এতটাই তীব্র যে, নারী-পুরুষ এমনকী শিশুরাও অনেকেই অত্যাচারিত হয়ে চলেছে। আর সবচেয়ে দুঃখের বিষয় এই যে, অন্যায় দেখেও ভয়ে মুখ বন্ধ করে রাখেন অনেক শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের স্লোগান, ‘ দেশ কে গদ্দারো কো, গোলি মারো ’-  শোনার পরও দিল্লির উচ্চ আদালত বিষয়টিকে হালকা ভাবে নিয়েছে। আর এইসব দেখে মনে হয়, এ যেন অনুজা রামচন্দ্রনের লেখা সেই বইয়ের কাহিনির পুনরাবৃত্তি। আমাদের চেনা প্রতিহিংসার গল্প৷

নিজের সুরক্ষার জন্য কিংবা আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অনেকে এমন পথ অবলম্বন করে, যার পরিণাম ভযংকর হয়। আসলে, এও একরকম নিজের বিনাশ নিজেই ডেকে আনার ভ্রান্ত পথ। দেশে সরকারের ভ্রান্ত নীতির বিরোধিতা করা মানেই দেশদ্রোহিতা নয়, এটা মনে রাখা উচিত।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...