সন্তান আপনার। তাই, তাকে সুস্থ রাখার দায়িত্বও নিতে হবে আপনাকেই। Hygiene-এর সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। কারণ, খালি চোখে দেখা যায় না এমন রোগজীবাণু ছড়িয়ে রয়েছে চারিদিকে। একটু অসতর্ক থাকলে যা বাসা বাঁধতে পারে শিশুদের শরীরে। অতএব, আপনার সন্তান যাতে সর্বদা জীবাণুমুক্ত থাকে, তারজন্য আপনাকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

আমাদের শরীরের অঙ্গগুলির মধ্যে সবথেকে বেশি ব্যবহূত হয় হাত। এই হাত প্রতি মুহূর্তে অন্যান্য উপাদানের সংস্পর্শে আসে এবং ওইসব উপাদানে থাকা জীবাণু আশ্রয় নেয় হাতে। তাই খাওয়ার আগে, বাইরে থেকে এসে কিংবা বাথরুম থেকে বেরিয়ে হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করা প্রয়োজন। বাচ্চাদেরও এই শিক্ষা দেওয়া উচিত। সাধারণ বার সোপ দিয়ে হাত ধোওয়ার অভ্যাস না করে, মেডিকেটেড লিকুইড সোপ ব্যবহার করবেন। এক্ষেত্রে ব্র্যান্ডেড সোপ-ই ব্যবহার করা উচিত। কারণ, ব্র্যান্ডেড সোপ-এর উপর ভরসা রাখা যায় এবং এর দ্বারা অনেকটাই জীবাণুমুক্ত হওয়া যায়।

একটু বড়ো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্ব থাকে শুধু তাদের জীবাণুমুক্ত থাকার অভ্যাস গড়ে দেওয়া কিন্তু একেবারে শিশুদের ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব নিতে হয় মা-বাবাকেই। কারণ, ছোট্ট শিশু যেহেতু বিষয়টির গুরুত্ব বোঝে না কিংবা নিজে জীবাণুমুক্ত থাকতে পারে না, তাই প্রয়োজনমতো মা-বাবাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে হ্যান্ডওয়াশ করানোর পর, হাত অবশ্যই নরম তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে দেবেন। কারণ, শিশুর হাত দীর্ঘসময় ভেজা থাকলে বাতাসে ভাসমান জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে হাতে। বর্তমানে হ্যান্ডওয়াশের পাশাপাশি তাই স্যানিটাইজারেরও ব্যবহার বেড়েছে। এতে জল ব্যবহার করার দরকার হয় না।

শরীরের আরও একটি অমূল্য সম্পদ হল দাঁত। তাই দাঁতের যত্ন রাখার বিষয়েও ছোটো থেকে শিক্ষা দেওয়া উচিত বাচ্চাদের। এখন বাজারে বাচ্চাদের জন্য মেডিকেল টুথব্রাশ এবং টুথপেস্ট পাওয়া যায়। বাচ্চারা যেহেতু প্রচুর লজেন্স খায়, তাই দিনে অন্তত দু-বার বাচ্চাদের টুথ, ব্রাশ করিয়ে দেওয়া উচিত কিংবা করিয়ে নেওয়া উচিত। এতে দাঁত যেমন জীবাণুমুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে, ঠিক তেমনই মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।

শিশুকে জীবাণুমুক্ত রাখতে হলে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদেরও জীবাণুমুক্ত থাকতে হবে। অর্থাৎ, বাইরে থেকে ঘেমো গায়ে বাড়িতে ঢুকেই শিশুকে কোলে তুলে নেবেন না। এতে আপনার দ্বারা বাহিত জীবাণু শিশুর শরীরেও সংক্রমিত হতে পারে। তাই বাইরে থেকে বাড়ি ঢুকে, প্রথম নিজে মেডিকেটেড লিকুইড সোপ দিয়ে হাত ধুয়ে এবং সম্ভব হলে সম্পূর্ণ স্নান সেরে তবেই সন্তানকে কোলে তুলুন। এই অভ্যাস আপনার এবং আপনার সন্তান উভয়ের পক্ষেই লাভজনক হবে। এছাড়া, মাঝেমধ্যে ছোট্ট শিশুকেও বেবি সোপ দিয়ে সম্পূর্ণ স্নান করিয়ে দিন। ব্র্যান্ডেড বেবি সোপ শিশুর চোখে গেলেও, জ্বালা কিংবা ক্ষতি করবে না। অবশ্য শিশুকে শুধু হ্যান্ডওয়াশ কিংবা বডিওয়াশ-ই নয়, শিশু যাতে ময়লা কিংবা ক্ষতিকারক কোনও উপাদান হাত দিয়ে না ধরে কিংবা মুখে না তুলে নেয়, এ বিষয়েও মা-বাবাকেই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, শিশুর সুস্থতার জন্য এই সতর্কতা ভীষণ জরুরি। এছাড়া, বাচ্চারা মল-মূত্র ত্যাগ করার পর, জলে সামান্য জীবাণুনাশক তরল ফেলে বাচ্চার রেচনাঙ্গ ধুয়ে দেওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, শুধু বাহ্যিক নয়, শিশু যেন সম্পূর্ণ (অভ্যন্তরীণ) সুস্থ থাকে। আর এই সম্পূর্ণ Hygiene রক্ষার জন্য শিশুকে উপযুক্ত পরিমাণে শুদ্ধ জলও খাওয়াতে হবে। কারণ, মূত্রের মাধ্যমে শরীরের অনেক বর্জ্য এবং রোগজীবাণু বাইরে বেরিয়ে যায়।

শিশুদের স্নান করানোর জন্য ব্যবহূত জলে সামান্য গরমজল মিশিয়ে নিলেও ভালো। এতে চট করে যেমন ঠান্ডা লাগবে না, ঠিক তেমনই স্নানের জন্য ব্যবহূত জলকেও জীবাণুমুক্ত রাখা যাবে। কখনও যদি শিশু বৃষ্টিতে ভিজে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে হালকা গরমজলে তোয়ালে ভিজিয়ে শিশুর গা মুছে দিন। এতে বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে থাকা জীবাণু সংক্রমিত হবে না শিশুর শরীরে।

রাতে যদি বাচ্চাদের ন্যাপি পরিয়ে রাখেন, তাহলে মল-মূত্র ত্যাগ না করলেও ন্যাপি বদলে ফেলুন। কারণ, দীর্ঘ সময় হাওয়া না ঢুকলে ন্যাপিতে জীবাণু সংক্রমণ করতে পারে। বাচ্চার জন্য ব্যবহূত বিছানা এবং জামাকাপড় সাবান দিয়ে ভালো ভাবে কেচে ধুয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে নিন। এতে বিছানা এবং জামাকাপড়ে জীবাণু বাসা বাঁধতে পারবে না। যে-বোতলে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান, সেই বোতল প্রতিদিন অন্তত কুড়ি মিনিট গরমজলে ফুটিয়ে নিন। কারণ, ঠান্ডা জলে দুধের বোতল ধুলে তা পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত হয় না। এভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আপনার বাচ্চা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে এবং দীর্ঘজীবন লাভ করবে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...