১৯৮০-র দশকে, সুন্দরী এবং গ্লামারাস পুনম ধিলন ফিলম-এ নিজের সাফল্যের মাধ্যমে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন। ১৬ বছর বয়সে ফিলম-এ তাঁর প্রথম আসা ত্রিশূল ছবির মাধ্যমে। এরপর নুরী অল্প বাজেটে তৈরি হলেও, ফিল্মটি হিট করে। এরপর তিনি দর্শকদের পরপর বহু হিট ফিলম উপহার দিয়েছেন। দক্ষিণি ছবিতেও তিনি কাজ করেছেন।
ফিলম-এর সাফল্য পুনমকে খ্যাতি এনে দিলেও ব্যক্তিগত জীবনে প্রেমের ক্ষেত্রে ততটা সফল হতে পারেননি এই অভিনেত্রী। তাঁর সঙ্গে রমেশ তলওয়ার, রাজ সিপ্পী এবং অশোক ঠাকরিয়ার সম্পর্ক নিয়ে বলিউডে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল একসময়। যে-কোনও কারণেই হোক প্রথম দুজনের প্রেম উপেক্ষা করে পুনম নির্মাতা অশোক ঠাকরিয়াকেই বেছে নেন এবং বিয়ে করেন। তাঁদের দুই সন্তান অনসোল এবং পালোমা। স্বামীর এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার থাকার জন্য এবং পুনমকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করার কারণে ১৯৯৭ সালে অভিনেত্রী বিবাহবিচ্ছেদ করেন এবং সন্তানদের নিজের কাছেই রাখেন।
ফিলম ছাড়াও টিভি এবং থিয়েটারেও তিনি কাজ করেছেন। ১০০-র বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ২০২১ এ ২৬ নভেম্বর তাঁর ওয়েব সিরিজ দিল বেকারার ডিজনি এবং হটস্টার-এ রিলিজ হয়েছে। প্যান্ডেমিক চলাকালীন অনেক কষ্ট করেই এর শুটিং পর্ব চলেছে। তাঁর সঙ্গে হওয়া কিছু কথাবার্তার অংশ এখানে তুলে ধরা হল।
হঠাৎ করে Web Series-টি করতে কেন রাজি হলেন জিজ্ঞেস করাতে তাঁর মত হল, প্রথমে তিনি একটু দ্বিধা করেছিলেন যে সিরিজটা কেমন হবে এবং সেখানে কাজ করাটা তাঁর ঠিক হবে কিনা। কারণ ওয়েবের দর্শকদের চাহিদা অন্যরকম হয় এবং কনটেন্টও আলাদা হয়। গত কয়েক বছরে ওয়েব সিরিজ-এর জনপ্রিয়তা খুবই বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই তিনি মনে করেন। সব থেকে বড়ো কথা এর দর্শকদের কাছে পৌঁছোবার যে-ব্যাপ্তি, তা অনেক বেশি। এছাড়াও ভালো গল্প, সেট-আপ, সঠিক নির্দেশক এবং ভালো কো-অ্যাক্টর ও অ্যাক্ট্রেস পাওয়াতে তিনি আর বেশি ভাবা বা দ্বিধা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেননি।
অতীতে এবং বর্তমানে ভালোবাসার সংজ্ঞার কি কিছু পরিবর্তন ঘটেছে জানতে চাওয়া হলে তাঁর স্পষ্ট জবাব, বিন্দুমাত্র কিছুই বদলায়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই বয়সও বাড়তে থাকে। সুতরাং কিছুটা বদল তো আসবেই। তাঁর অভিনীত ওই ওয়েব সিরিজটির কাহিনির পটভূমিকা ৮০র দশকের। সুতরাং দেশ বর্তমানে প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক এগিয়ে গেছে সেটা পুনম ভালোমতোই জানেন। বর্তমান সমাজে মোবাইল, গাড়ি, ভিডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি অনেককিছুর সঙ্গেই আজ সকলেই পরিচিত বলেই বিশ্বাস করেন পুনম। রোজই নতুন আরও আধুনিক প্রযুক্তির সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ববাসী। কিন্তু পুনম মনে করেন সম্পর্ক, ইমোশন আগের মতোই রয়ে গেছে। ভাষার কিছু পরিবর্তন হয়েছে, নতুন কিছু কিছু শব্দ সকলে ব্যবহার করছে। তবে অভিনেত্রী একটা কথা স্বীকার করলেন যে তাঁদের সময় জীবন অনেকটা সহজ ছিল। এখনকার প্রজন্ম ফোন ডায়াল করতে জানে না, ওরা বাটন প্রেস করতে পারে। কিছু জিনিস বদলায় আবার কিছু কিছু আগের মতোই থেকে যায়। পুনমের অভিযোগ, আজকের যুগে সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক কমে গেছে কারণ এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা চাকরি পরিবর্তন করার মতোই সম্পর্কও বদলাতে থাকে।
এই প্রজন্মের আচরণের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে বলেই পুনমের মনে হয়। ৮০-র দশকে কোথাও যেতে-আসতে গেলে অভিভাবকদের জানিয়ে যেতে হতো। এই ডিসিপ্লিন প্রায় সব পরিবারেই মানা হতো। পুনমের দুঃখ যে আজকের প্রজন্মেরও এই সংস্কার থাকা উচিত ছিল। তাদের বোঝা উচিত মা-বাবা সন্তানের ভালোই চায়। কোনও ব্যাপারেই বড়োদের অপমান করা বা তাদের দোষ দেওয়া অনুচিত। নিজের ব্যাক্তিগত কথা শেয়ার করতে গিয়ে পুনম জানালেন, এখনকার বাচ্চারা পড়াশোনা বা চাকরির ক্ষেত্রে মা-বাবাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যায়। তাঁর ছেলে-মেয়ে বাইরে থাকলে ফোনে তাঁকে নিশ্চিন্ত হয়ে শোয়ার পরামর্শ দেয় তারা। কিন্তু ওরা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত, পুনমের ঘুম আসে না। এই চিন্তার কারণ যে কী সেটা আজকের বাচ্চাদের বোঝালেও বোঝে না।
দিল বেকরার Web Series-টি ৮০-র দশকের কোন দিকটি দর্শকদের সামনে নিয়ে আসছে, জানতে চাওয়া হলে পুনম জানালেন, ৮০-র দশকের পলিটিক্যাল এবং সোশ্যাল ইভেন্টস কীরকম হতো, সেই সম্পর্কে মানুষের চিন্তাধারা ও দৃষ্টিকোণ কেমন ছিল এবং এই পুরো বিষয়টি নতুন প্রজন্ম কী চোখে দেখে এই পুরোটাই সিরিজে তুলে ধরা হয়েছে। এটি একটি পারিবারিক কাহিনি, যেখানে বাচ্চার বেড়ে ওঠা থেকে চাকরি, বিয়ে সবই দেখানো হয়েছে। এটি প্রতিটি পরিবারের গল্প। ৮০-র দশকের পটভূমিকা রেখে নতুন প্রজন্মের ভাবধারা প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিছু বছর আগেও রাস্তার মাঝে গাড়ি হঠাৎ আটকে গেলে, গাড়ি থেকে সকলে নেমে গাড়ি ধাক্কা দিতে লজ্জাবোধ করত না বরং গাড়ি রয়েছে বলে গর্ববোধ করত।
অনেক শিল্পী-ই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করছেন। তুলনায় অনেক দেরীতে এই প্ল্যাটফর্মে পা রাখলেন পুনম। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনেও পুনমের নিজস্ব যুক্তি আছে। তিনি ইঁদুর দৌড়ে শামিল হতে চাননি। বরং নিজের সুবিধা অনুসারে পরিবারের দেখাশোনা করে তারপর অভিনয়ে এসে কাজ করেছেন। যখনই তাঁর মনে হয়েছে, আসছে ৬ মাস ফিলম বা টিভির কাজ তিনি করতে পারবেন না, তখনই কাজ এলেও সেটার কাজ তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। এই বয়সে কারও সঙ্গে তিনি কম্পিটিশনে যেতে চান না। লাইফে কমফর্ট জরুরি বলে মনে করেন পুনম এবং তিনি নিজের খেয়াল রাখতেও ভালোবাসেন। এত বছর ধরে কাজ করছেন সুতরাং জীবনে এখন তাঁর প্রায়োরিটি অনেক আলাদা হয়ে গেছে।
পুনম খুব কম বয়সে অভিনয় শুরু করেছিলেন। এতগুলো বছরে ফিলম ইন্ডাস্ট্রি-তে অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে, পুনমের চোখে। তিনি মনে করেন এখনকার গল্প অনেক বাস্তবধর্মী, এছাড়াও এখন বায়োপিকস-এরও যুগ এসে গেছে। আগে ঐতিহাসিক চরিত্রের উপর আত্মজীবনীমূলক ফিলম তৈরি হতো। আজকাল জীবিত ব্যক্তিরও বায়োপিক তৈরি হচ্ছে। আগে এটা কেউ ভাবতেই পারত না।
তাঁর অভিনীত সমস্ত ছবির মধ্যে কোনটি তাঁর নিজের সবথেকে পছন্দের জানাতে কিছুটা অতীতে ফিরে গেলেন পুনম। জানালেন, অতীতে কাজের চাপ অত্যন্ত বেশি থাকত। ফলে হলে গিয়ে ফিলম দেখা সম্ভব হতো না। পরে ডিভিডি আসার পর কিছু কিছু ফিলম পুনম দেখলেও সেগুলি তাঁর নিজের অভিনীত নয়। তাঁর নিজের অভিনয় করা ফিলম দেখতে ভালো লাগত না। বর্তমানে অনেক সময় কেউ হয়তো বলে, টিভি-তে তাঁর কোনও ফিলম দেখানো হচ্ছে, তখন তিনি সেটা দেখার চেষ্টা করেন। একসময় পুনম মনে করতেন শুটিং, ডাবিং করার পর ফিলম থিয়েটারে রিলিজ করে গেলে, তাঁর কাজ শেষ। কিন্তু এখন তিনি বুঝতে পারেন সে-সময় নিজের কাজ নিয়ে আলোচনা করাটা খুব প্রয়োজন ছিল। তাঁর অভিনীতি সোহেনি মাহিওয়াল ছবিটি তাঁর মতে খুব ভালো ছবি এবং এটা নিয়ে নস্টালজিয়া বোধ করেন তিনি। এছাড়া নুরী ছবিটিও দর্শকের মনে এতটা প্রভাব ফেলবে পুনম তখন বুঝতে পারেননি। কারণ সেই সময় তাঁর বয়সও খুব কম ছিল। ছবিটি খুব সহজ ভাবে তৈরি করা হয়েছিল এবং এর গানগুলি এভারগ্রিন এটা সকলেই স্বীকার করবে।
দৈনন্দিন জীবনে সব হাউসওয়াইফ-দের মতন তিনিও রুটিন মেনে চলেন এবং সংসারের সবকিছু দেখাশোনা করেন। একটা সময়ে জিনিসপত্র কিনতে তাঁকে দোকানে যেতে হতো, এখন একটা ফোন করলেই বাড়িতে জিনিস পৌঁছে যায়। বাচ্চাদেরও দায়িত্ব নেওয়ার শিক্ষা দেন পুনম। এছাড়াও সময় পেলেই ওয়ার্কআউটও করেন শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে। আজকের প্রজন্মকে কিছু বলতে ইচ্ছুক পুনম। এটাই তাদের জন্য পুনমের মেসেজ, “আজকের প্রজন্মের জন্য আমার পরামর্শ হল, মহিলারা এখন বাড়ি ও অফিস দুটো একসঙ্গে সহজে সামলান। সুতরাং তাঁদের যেটা করতে ভালো লাগে, সেটাই করা উচিত।”