নতুন বছরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হবে না একথা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। নতুন Resolution রাখুন যে কবজি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়া করবেন ঠিকই তবে খেয়াল রাখবেন শরীর-স্বাস্থ্যকে অবহেলা বা উপেক্ষা করে নয়। তাহলে নিশ্চয়ই ভাবছেন করণীয় কী?
নতুন বছরকে অভ্যর্থনা করতে পার্টি, পিকনিক, হই-হুল্লোড়, খাওয়াদাওয়ার এলাহি আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পিকনিক স্পটগুলি ভিড়, লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। যারা বাড়িতে আয়োজন সারতে চান তারা প্রস্তুতি শুরু করে দেন আগে থাকতেই। আয়োজনে ডিজে, নাচ-গান, ডিসকো কোনও কিছুই বাদ যায় না। কিন্তু এই আনন্দ হুল্লোড়বাজির সঙ্গে সমানতালে চলতে থাকে খানা-পিনার যুগলবন্দি। চারিদিকে যেখানে আনন্দ উত্তেজনার আবহ সেখানে মানুষ একটু বেহিসেবি হয়ে উঠবে তাতে আর আশ্চর্য কী!
নতুন বছরকে অভ্যর্থনা জানাতে অথবা যে-কোনও আনন্দানুষ্ঠানেই আমরা নিজেদের পছন্দের বিশেষ বিশেষ ভালো ভালো খাবারের ব্যবস্থা রাখার কথাই চিন্তা করি। অথচ শরীর স্বাস্থ্যর কথা একটি বারের জন্যও ভাবি না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই ধরনের অনুষ্ঠানে খাওয়াদাওয়া করে এসেই অনেকের শরীর খারাপ হয়। স্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে অতিরিক্ত তেল মশলাদার খাবার, প্রসেসড ফুড, নানা ধরনের মিষ্টান্ন সঙ্গে অ্যালকোহল সেবনের কারণে শরীরে ক্যালোরির মাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায়।
অত্যধিক ক্যালোরি মানেই ফ্যাট, সুগার, কনসেনট্রেটেড ড্রিংকস তথা অধিক লবণযুক্ত অর্থাৎ সোডিয়ামে ভরপুর খাবারের ইনটেক। এর ফলে ওজন যেমন বাড়ে তেমনি হজম সংক্রান্ত সমস্যারও মুখোমুখি হন অনেকেই যেমন অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, শরীরে জলের মাত্রা কমে যাওয়া ইত্যাদি।
এইসব কারণে এই ধরনের অনুষ্ঠানপর্বে অথবা উৎসব চলাকালীন কিছু সাবধানতা মেনে বিশেষ মুহূর্তটির আনন্দ উপভোগ করুন। আসন্ন নতুন বছরের জন্য শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখার কয়েকটি সহজ উপায় আপনাদের সুবিধার্থে এখানে জানানো হল।
খালি পেটে থাকবেন না
পুরো দিন সুস্থ এবং ব্যালেন্সড থাকতে, দিনের শুরু করুন ব্রেকফাস্ট দিয়ে ডায়েটে রাখুন দানাশস্য, লো ফ্যাট প্রোটিন, ফল ইত্যাদি। বাড়ি থেকে বেরোবার আগে পেট ভরে খেয়ে তবেই কারও সঙ্গে দেখা করতে যান, যাতে সেখানে গিয়ে আজেবাজে খাবার খেয়ে পেট ভরাতে না হয়।
বেশির ভাগ সময়ে খাওয়াদাওয়ার বিশেষ আয়োজনে, আমন্ত্রণ রক্ষা করার জন্য যাতে সেখানে গিয়ে মন ভরে, পেট পুরে খাওয়া যায় তার জন্য বাড়িতে একটা মিল অনেকেই স্কিপ করেন। ফলে খাবার সময়ে ওভারইটিং হয়ে যায়। খালি পেট হওয়ার ফলে সেরোটোনিন লেভেল কমে যায়। এর ফলে যখনই খালি পেটে দীর্ঘ সময় আমরা কাটাই, স্ট্রেস লেভেল বাড়তে থাকে আর একটানা কিছু না কিছু আমরা খেতে থাকি। ফলে প্রয়োজনের বেশি খাবার আমরা খেয়ে ফেলি।
সুতরাং ওভারইটিং রোধ করতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে নিয়মিত খাবার খান (১টি বড়ো মিল এবং ২টি স্ন্যাকস জাতীয় খাবার)।
খাবারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন
কতটা খাচ্ছেন সেটা খেয়াল রাখুন। এটাকে পোর্শন কন্ট্রোল বলা হয় কারণ পেট ভরে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর শরীর সেটা বুঝতে পারে। সেজন্য পেট সম্পূর্ণ ভরে গেছে এই উপলব্ধি না হওয়া অবধি আপনি যদি খেতে থাকেন, তাহলে সেটা ওভারইটিং হয়ে যাবে।
সুতরাং একবারে কম করে খান। ধীরে ধীরে খাবার খেলে শরীরও বুঝতে পারবে আপনি পর্যাপ্ত মাত্রায় খেয়ে নিয়েছেন, ফলে ওভারইট করবেন না।
সঠিক খাবার খান
শরীর সুস্থ রাখার এটি হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খাদ্যবস্তুর সঠিক চয়ন এবং বিকল্প বেছে নিতে পারলেই খাওয়াদাওয়া দ্বিগুন হয়ে উঠবে আনন্দ। কারণ এক্ষেত্রে আপনি স্বাস্থ্যসচেতন এবং শরীরের কোনও ক্ষতি হোক এই ভাবনার থেকে আপনি শতহস্ত দূরে।
অধিক ফাইবার-যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন
ফাইবার-যুক্ত খাবার খান কারণ এই ধরনের খাবার মনে তৃপ্তির উপলব্ধি এনে দেয়। অনেক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা মনে হয়। ফলে ওভারইটিং-এর সমস্যা হয় না এবং আহারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত করা সম্ভব হয়। দানাশস্যতে অধিক মাত্রায় পুষ্টিকর তত্ত্ব থাকে। এতে ক্যালোরির মাত্রা কম করা সম্ভব হয়।
এছাড়াও প্যাকেটের খাবার বা প্রসেসড ফুড-এর তুলনায় দানাশস্যে পেট অনেক বেশি ভরা উপলব্ধি হয়। ক্যালোরিযুক্ত মেন কোর্স মিল শুরু করার আগে কোনও একটা হেলদি ডিশ অবশ্যই খেয়ে নিন এবং কম এনার্জির খাদ্যপদার্থ যেমন স্যালাড বা ভেজিটেবল সু্পও আগে খেতে পারেন।
সবজিতে ভিটামিন, মিনারেলস, ফাইবার এবং জলের মাত্রা অধিক থাকে যার ফলে এগুলি সেবন করলে পেট অনেক বেশি ভরা মনে হয়। সুতরাং সবজি বেশি করে খেলে খাওয়ার পরিমাণ নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়।
প্রত্যেক মিলের সঙ্গে প্রোটিন নেওয়া বাঞ্ছনীয়। শরীরের টিশু মজবুত করতে যেমন প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে, তেমনি লিন বডি মাস (এলবিএম)-এর জন্যও প্রোটিন অত্যন্ত লাভজনক।
সম্প্রতি নানা রিসার্চের মাধ্যমে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, প্রত্যেক মিল-এর মাঝে ফিলার্স হিসেবে সঠিক মাত্রায় পর্যাপ্ত প্রোটিন খেলে, ব্লাডসুগার লেভেলের হঠাৎ বাড়া-কমাকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারা যায়। সুতরাং মিল-এর মাঝে মাঝে ড্রাইফ্রুটস, নানা ধরনের বীজ হেলদি স্ন্যাকস-এর বিকল্প হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।