দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন হয়ে গেল এখানে। চুপচাপ নিস্তরঙ্গ এই ছোট্ট জনপদটা বেশ লাগছে আমার। সবুজে ঘেরা চারপাশ। আকাশ এখানে দিনে নীল, রাতে ঘন কালো। আর যখন সেই ঘন কালো আকাশ জুড়ে সলমাজরির ফুলকারি কাজের মতো ঝিকিমিকি তারা দেখি, আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়। ছেলেবেলায় ছোটোকাকু মাঝেমাঝে আমায় এমন রাতে ছাদে নিয়ে যেত তারা চেনাতে। সপ্তর্ষিমণ্ডল, শুকতারা, ধ্রুবতারা…

এখানে এসে আবার আমার তারাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হচ্ছে। আকাশ, গাছ, পাখি, কাঠবিড়ালি— সবার সঙ্গে চেনাজানা বাড়ছে। শহরে তো শুধু ইট-কাঠ-কংক্রিট আর ব্যস্ত দৌড়ে বেড়ানো মানুষের ভিড়।

আমি খুবই সাধারণ মধ্যমেধার একজন মানুষ। কী পড়শোনা, কী অন্যকিছু, কোনও কিছুতেই তেমন ছাপ ফেলার মতো কিছু করতে পারিনি আজ অবধি। আমি যাকে বলে একটা এলেবেলে, ভিড়ে মিশে থাকা মনিষ্যি. যার ওই একটা নামই আছে শুধু।

বাবা-মা গত হয়েছেন, বোন তার সংসার নিয়ে নাজেহাল। চারপাশে সবাই কমবেশি ব্যস্ত, শুধু আমারই অখণ্ড অবসর। পৈত্রিক বাড়ির একটা অংশের ভাড়া আর বাবার রেখে যাওয়া কিছু টাকায় আমার চলেই যেত ঠিকঠাক। আসলে কোনও কাজই খুব বেশিদিন আমার ভালো লাগত না, একঘেয়ে লাগত। তাই কখনও কাজ আমায় ছাড়ত কখনও আমি কাজকে।

বন্ধুবান্ধব সবাই যে যার মতো নিজের জীবনে শিকড় গেড়ে বসেছে। তাদের কত গল্প! বউয়ে টকঝাল খুনসুটি, সন্তানের স্কুল, পরীক্ষা, ভবিষ্যৎ। নিজেদের পরকীয়া, অবদমিত যৌনতা, সুগার, প্রেশার, আমাশা, ফ্ল্যাটের ইএমআই, গাড়ির মাইলেজ, বসের শয়তানি, বকেয়া ডিএ। ওদের কত্ত বিষয় আলোচনার, যেগুলো আমার কিচ্ছু নেই। তাই ধীরে ধীরে একসময় ওদের থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। ওরা ওদের মতো আর আমি আমার মতো, একা।

তবে কি, একা থাকতে থাকতে একটা সময় বেশ ক্লান্ত লাগত। মাঝেমাঝেই মনে হতো একটা সংসার থাকলে বেশ হতো। একটা মিষ্টি মতো বউ। যার পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে সিঁদুর, দু-একটা ছেলেপিলে, কিছু দায়িত্ব, একটু ঝগড়াঝাঁটি, মান-অভিমান আর এসব জড়ানো অনেকটা ভালোবাসা মাখানো রাশি রাশি স্বপ্ন। তারপরই হাসি পেত। আমার মতো লোকের নাকি আবার বউ, ছেলে-মেয়ে সংসার… ঠিক এমন সময়ে এই চাকরির সুযোগটা এসেছিল।

আমার ভাড়াটে ছেলেটি বেশ চৌকশ। কোথায় একটা চাকরি করে, শখের ফটোগ্রাফার আর কী সব এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত। ছটফটে মজারু ছেলে। ও একদিন হঠাৎ বলল, দাদা আজকাল কী করছেন?

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ভারি মুশকিল। যদি বলি কাজ করছি, তো কী কাজ? কোথায় অফিস? কত দেয়? হাজার প্রশ্ন! আর যদি বলি কিছু করছি না, তবে কেন করছেন না? না করলে চলছে কী করে? আরও একঝুড়ি কথা। আমার বেশি কথা বলতে ভালো লাগে না। তাই হুঁ হা করে এড়িয়ে যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু সে ছেলে ছাড়লে তো?

—একটা কাজ আছে, করবেন? আপনার ভালো লাগবে।

—এই রে, আমার মতো লোকের জন্যও কাজ?

—কেন? মানে আমাকেই বলছ কেন? কাজের লোকের তো অভাব নেই।

—না মানে, ওরা একজন পিছুটানহীন লোক চাইছেন, তাই…

সত্যিই তো। এভাবে তো ভাবিনি। আমার এই জীবনটা নিয়ে আমি যা খুশি করতে পারি। আমার পথ চেয়ে কেউ বসে থাকার নেই। আমারও কারও কাছে কোনও দায় নেই। আমার না আছে শিকড় না নিজস্ব পরিসর। আমি সত্যিই পিছুটানহীন। তা এহেন আত্মপোলব্ধিতে অন্যের কী হতো জানি না, আমার বেশ মজাই লেগেছিল।

রাজি হবার সময় সত্যি ভাবতে পারিনি এরকম একটা জায়গায় থেকে কাজ করতে হবে আমায়। শহর থেকে অনেক দূরে, শাল মহুলে ঘেরা এই ছোট্ট জনপদে একটা আবাসিক স্কুলের কেরানি এখন আমি। ছাত্ররা সবাই স্থানীয় গ্রামের। বেশির ভাগই বোর্ডিং-এ থাকে। আমার কাজ বোর্ডিং-এর খাতাপত্র লেখা, ছেলেপুলেগুলোর ওপর নজর রাখা, খাবারদাবার এর তদারকি করা এইসব। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা বোর্ডিং-এই।

আমার জন্য বরাদ্দ ছাদের ঘরটা চমৎকার। জানলা খুললেই স্কুলের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে সবুজ মাঠ পেরিয়ে দূরের গহিন জঙ্গলটা দেখা যায়, যার একটু ভিতরে একটা আদিগন্ত বিস্তৃত জলাশয় আছে। রাতে ছেলের দল খেয়েদেয়ে যখন শুয়ে পড়ে, আমি ঘর ছেড়ে ছাদে চলে আসি। দূর জঙ্গলটা থেকে তখন কতরকম শব্দ মিঠে হাওয়ায় ভেসে আসে। শনশনে হাওয়ায় ডালপালার আড়মোড়া ভাঙা, রাতচরা পাখির তীক্ষ্ন ডাক, অজানা জন্তুর গরগরানি আর সেসব ছাপিয়ে অদ্ভুত একটা ছলছলে জলের আওয়াজ ভেসে আসে। প্রশান্ত, গম্ভীর, বাঙ্ময়। যেন একটা গভীর ডাক, একটা আকুল আহ্বান। আমি একদিন যাব। আমায় যেতেই হবে ওইখানে।

আজ অকারণেই আমার মনটা খারাপ। দুপুর শেষ হতেই কিছুই যেন ভালো লাগছিল না। কাজে মন বসছিল না। কাউকে কিছু না জানিয়ে স্কুল চৌহদ্দির পিছন দিকটার ঢালু জমিটায় এসে বসেছি। এখান থেকে বড়ো বড়ো গাছগুলোর ফাঁক দিয়ে সেই জলাটা আবছা দেখা যায়।

আমার ভিতরে আজ কদিন একটা ইচ্ছে পাক খাচ্ছে। যাই চলে এই ঘাস জমি পেরিয়ে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ওই জলাশয়ে কাছে। দুদণ্ড বসি ওর পাড়ে। স্কুলের মাস্টারমশাইরা পই পই করে বারণ করেছেন জঙ্গলে যেতে। সাপ-খোপ, বুনো জন্তু কী না আছে ওখানে! বোর্ডিং-এর রান্নার মাসি একদিন বলছিল, ওই জলার নাকি মায়াটান আছে। মানুষকে ভুলিয়ে ভালিয়ে টেনে নিয়ে যেতে চায়। যতসব গ্রাম্য রটনা।

এখন দুপুর গড়িয়ে পড়ছে বিকেলের কোলে। কয়েজন গ্রাম্য নারীপুরুষ গরু ছাগলের খুঁট ধরে বেরিয়ে আসছে জঙ্গল থেকে। কারও মাথায় ঝরা শালপাতার বোঝা, কারও হাতে কাঠকুটো, ডালপালা। আপন মনে কলকল করতে করতে ওরা চলে যাচ্ছে দূর গাঁয়ে দিকে। ওদের কথা, হাসি, ছাগলগুলোর গলার ঘন্টার টুংটাং আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। মানুষ আর গরু ছাগলের পায়ে অভিঘাতে মেঠো পথে ধুলোর ঘুর্ণি উঠছে। ওদিকের বিশাল প্রাচীন গাছগুলোর মাথায় সূর‌্য আগুনরাঙা থালার মতো ধীরে নেমে আসছে। আর সেসবের মধ্যে দিয়ে আমার কানে আসছে পাড়ে মৃদু মৃদু ধাক্কা খাওয়া জলের শব্দ। ছলাৎ… ছলাৎ…। আমায় বিবশ করে ফেলছে সেই শব্দ।

হঠাৎ যেন ঘোর ভেঙে দেখি একটা ছোট্ট ছেলে, এই দশ কি বারো বছর বয়ে হবে, ঢলঢলে হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি পরা, হাতে একটা মাছ ধরার ছিপ নিয়ে হনহন করে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে। আমি তো অবাক। এই সময়ে একা একটা বাচ্চা ছেলে ওদিকে যাচ্ছে কেন?

—এই ছেলে, তুই কোথায় যাচ্ছিস রে?

ভয়ানক চমকে ছেলেটা দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি উঠে ওর কাছে গেলাম। ছেলেটা আমাকে দেখছে আমিও ওকে। একমাথা রুখুশুখু চুল, শ্যামলা মুখটায় টানা টানা দুটো চোখ। কী ভীষণ মায়া জড়ানো তাতে।

—তুমি কে?

—আমি? আমি ওই স্কুলে থাকি। শহরের লোক।

—ও, তা তুমিও জলা দেখতে যাচ্ছ?

ভারি আশ্চর্য তো! আমার জলা দেখার ইচ্ছের কথা ও জানল কী করে?

—বললি না তো তোর নাম কী?

—ছোটু।

—আরে বাঃ ভারি সুন্দর নাম তো। তা তোর প্যান্টুটা কি কোমরে ঢলঢল করছে? হাত দিয়ে ধরে আছিস যে?

—হঁ।

—আচ্ছা দাঁড়া।

আমি ওর সামনে হাঁটু মুড়ে বসলাম। তারপর প্যান্টুটা ধরে ওর কোমরের ঘুনসির মধ্যে দিয়ে গলিয়ে ওপর দিকে তুলে আবার একটু নামিয়ে দিলাম। প্যান্টটা টাইট করে আটকে রইল ওর ঘুনসিতে। একগাল হাসি উপহার দিল ছোটু।

—চলো তোমায় জলা দেখিয়ে নিয়ে আসি। আমি দুটো মাছ ধরব ওখান থেকে। মা আর আমি খাব।

—ও তা বেশ। চল…

ছেলেটা ভারি সরল আর মিশুকে তো। আমি ভাবছিলাম আমাদের শহরের বাচ্চারা অচেনা লোকের সাথে এত কথা বলত না।

—ঘরে তোরা কে কে থাকিস রে?

—আমি আর মা।

—তোর বাবা?

—বাবা নেই। চলে গেছে। আর আসে না।

আমার বুকটা হু হু করে উঠল। আহা রে, এতটুকু ছেলের বাবা নেই। কেন জানি না কীরকম একটা জ্বালা করে উঠল চোখ দুটো। ছোটু মহা উৎসাহে হাত পা নেড়ে আপনমনে বকবকম করতে করতে তরতরিয়ে হাঁটছে। আমি ওর সাথে তাল রাখতে গিয়ে হাঁফিয়ে যাচ্ছি।

—তা মাছ যে ধরবি তোর চার কোথায়?

—এই তো।

বলে পকেট থেকে ছেঁড়া কাগজে মোড়া একদলা মোটা লালচে ভাত বার করল ও।

—ও আচ্ছা।

আমরা এখন জঙ্গলে ঢুকে পড়েছি। খুব চুপচাপ চারদিক। দূরে অস্পষ্ট পাখির ডাক আর বড়ো গাছগুলোর নীচে পড়ে থাকা শুকনো পাতার ওপর দিয়ে আমাদের চলার শব্দ ছাড়া আর কোনও আওয়াজ নেই।

শুধু একটা গন্ধ। ভেজা, গহন, গভীর, প্রাচীন একটা গন্ধ ধীরে ধীরে আমার ইন্দ্রিয়কে বশ করে আনছে। কী মাদকতা এই গন্ধে। আমি অস্থির হয়ে উঠছিলাম। আরও কাছে যেতে হবে এ গন্ধের

—উই দ্যাখো গো জলা। আমরা এসে গেছি গো।

হঠাৎ যেন উঁচু গাছগুলোর মাথা থেকে ঝুপ করে দলা দলা নরম অন্ধকার নেমে এল নীচে। কুয়াশার মতো ছড়িয়ে পড়তে লাগল আমাদের ঘিরে। আমরা এখন জলের একদম কাছে এসে দাঁড়িয়েছি।

দ্রুত সন্ধে নেমে আসছে। ছোটু দেখলাম পাড়ের কাদা মাড়িয়ে পায়ে পাতা ডুবিয়ে ভাত বেঁধানো বড়শিটা জলে ছুড়ে দিল। কিছুক্ষণ সব চুপচাপ। তারপর জলে একটা আলোড়ন উঠল। আমি ছোটুর পাশে দাঁড়িয়ে দেখলাম তোলপাড় হচ্ছে জল। ছোটুর ছিপে টান পড়েছে। ও প্রাণপণে ছিপটা টেনে ধরে পাড়ের দিকে আনতে গেল কিন্তু উলটে নিজেই জলের মধ্যে নেমে যেতে লাগল।

আমি খুব উৎসাহ পেয়ে গেলাম। বড়ো কোনও রাঘব বোয়াল গেঁথেছে নির্ঘাত। ছোটুর হাতের পাশ দিয়ে চেপে ধরলাম বঁড়শিটাকে। টানতে লাগলাম পাড়ের দিকে।

পারছি না। পারছি না দুজনে। উলটে নেমে যাচ্ছি জলের গভীরে। ওটা আমাদের টেনে নিচ্ছে ভিতর পানে। আঁধার আরও গভীর হচ্ছে চারপাশে। আমার পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে শ্যাওলা। ছোটুর হাতটা ছেড়ে গেল বোধহয়। আমি শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে ছিপটায় টান দিলাম আর তখনই এক অপার্থিব দৃশ্য দেখলাম।

আমার মাথার ওপরে, চারপাশে চরাচর জোড়া মিশকালো আকাশ। সারা আকাশ জুড়ে সলমাজরির ফুলকারি কাজের মতো তারাদের ঝিকিমিকি। আমি কোমর অবধি ডুবে আছি সেই তরল কালো আকাশে! আমার চারপাশে সেই আকাশ ছাওয়া অমোঘ মায়া আমায় পিছু টানছে। চারপাশে কী যেন ভেসে বেড়াচ্ছে মাছের মতো। সরে যাচ্ছে দূরে, আবার কাছে আসছে।

আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ফিশফিশ করে বলছে আয় আয়। ডুব দে আরও গভীরে। পাড়ে কেউ নেই তোর জন্য অপেক্ষায়। আর ফিরে যাওয়ার কী দরকার? এখানে আয়। এখানে নির্জন অন্ধকার বড়ো গভীর আর শীতল। সব তাপ তোর জুড়িয়ে যাবে। আয়… আয়…

আমি অনুভব করলাম এই অমোঘ ডাক— এই টান, অস্বীকার করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি বিবশ। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি পাড়ে যাব না।

সেই গন্ধটায় চারপাশ ম’ ম’ করছে। আমি ডুবে যাচ্ছি সেই আদিম গন্ধে। হঠাৎ মনে হল ছোটুর কথা। ও কোথায়? আমি থমকে গেলাম, জোর করে নিজের মনকে সংযত করার চেষ্টা করলাম।

—ছোটু, ছোটু, কোথায় তুই?

—এই তো আমি, মাছ পেয়েছি গো।

আমি পিছু ফিরলাম। ছোটু পাড়ে দাঁড়িয়ে ওর হাতে একটা রুপোলি মাছ ছটপট করছে। ছোটুর মুখে হাসি। এমন হাসি, এত মধুর, অমলিন, স্বর্গীয় যে, আমার বুকটা হু হু করে উঠল।

আমি দেখতে পেলাম তকতকে নিকানো মাটির উনুনে, কাঠকুটো আর শুকনো ডালপালার আগুনে লোহার কড়াইয়ে মাছ ভাজা হচ্ছে। টাটকা মাছের গন্ধে ম’ ম’ করছে চারপাশ। ছোটু বসে আছে ধোঁয়া ওঠা মোটা লালচে ভাত রাখা থালার সামনে। একগোছা রেশমি চুড়ি পরা হাতে ভাজা মাছের দুটো টুকরো তুলে দিচ্ছে ওর পাতে, মাথায় ঘোমটা টানা কেউ একজন। তারপর সে আমার দিকে ফিরল।

—আসুন, এবার আপনিও বসুন।

আমি দেখলাম তার মুখে সলজ্জ হাসি। গর্জন তেল মাখানো প্রতিমার মুখের মতো চকচকে মুখ তার, কপালে সিঁদুর। সেই সিঁদুরের কমলা গুঁড়ো তার নাকের ওপর পড়েছে। তার হাতে ধরা গরম ধোঁয়া ওঠা ভাতের থালা। আমার জন্য।

আর কিছু ঠিক ঠাওর করতে পারলাম না। আমার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এসেছে, গলার কাছে দলা পাকানো কী একটা ঠেকছে।

আমি আর কিচ্ছু না ভেবে শরীরের সব শক্তি দিয়ে পিছু ফিরলাম। আমায় ফিরতে হবে। পাড়ে যেতে হবে। এক উলটো টান আমায় পাড়ের দিকে টানছে। সে টান অগ্রাহ্য করার শক্তি নেই আমার।

এখন আমার হাতে ধরা ছোটুর হাত। ওর গা মাথা আমি মুছিয়ে দিয়েছি আমার জামা দিয়ে।

ছোটু বকবক করছে। ওর গাঁয়ের গল্প, বন্ধুদের কথা, মায়ের কথা বলছে।

আমার মনে এখন অদ্ভুত এক প্রশান্তি। অথই জল ছেড়ে শুকনো ডাঙায় ওঠার নিশ্চিন্তি। ছোটুর হাতের উত্তাপ আমার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। আমি ভিতরে ভিতরে ছটফট করছি। দেখতে পাচ্ছি কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করছে গরম ধোঁয়া ওঠা ভাতের থালা নিয়ে যার পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে সিঁদুর।

আকাশের নিকষ কালো অন্ধকার কেটে যাচ্ছে। ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে ফুটফুটে একফালি চাঁদ। আমার শরীর মন জুড়ে এখন ভীষণ খিদে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...