হ্যাঁ কেন নিজের ডায়ারির মধ্যে কোচিংয়ের কোন ইংলিশ স্যারের ছবি রেখে দিয়েছিলে। রাখোনি? ভাই নিজের চোখে তোমাদের বাড়িতে গিয়ে দেখে এসেছে! তখন আমি তোমার মুখ দেখে এতটাই অন্ধ হয়ে গেছিলাম কোনও কিছুই বিশ্বাস করিনি।

কী বলছ কি?

হ্যাঁ এখন তো সবটা না বোঝার ভান করবে। কাকা কাকিমা বাড়ি ছিল না, একদিন তুমি আর স্যার…। ছি ছি…। এখন বুঝতে পারছি নিজের কী ক্ষতি করেছি।

এতটা অবিশ্বাস নিয়ে কেন এসেছিলে তমাল?

চরম ভুল। তোমার ওই মুখ দেখে, চোখ দেখে..।

কিন্তু বু আমাদের এই সন্তান তো কোনও দোষ করেনি…।

মানি না। কিচ্ছু মানি না আমি। চলে যাও চলে যাও আমার চোখের সামনে থেকে। তোমার ওই মুখ আর দেখতে চাই না আমি।

ঠিক এই দিনটা দেখার জন্য কি তমাল ওকে হাত ধরে তুলে এনেছিল কালো ঠিকানার জগৎ থেকে? সমস্ত আঁধার মুছে, পড়তে শিখিয়েছিল ভালোবাসার রঙিন কথা? কেন…। যদি কস্তুরীকে বাকি পাঁচটা মেয়ে মতো দেখতে হতো? অজস্র ভিড়ে যদি আলাদা করে কস্তুরীকে চোখে না পড়ত তাহলে তমাল ওকে কি বাঁচাত? হাজার বাধা পেরিয়ে নিজের স্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নিত? চেতনে না হলেও অববচেতনে কি তমালও ওর রূপ দেখে…।

পৃথিবীর এই একমাত্র বিশ্বাসের সম্পর্কটা আজ বড়ো বিস্বাদ লাগছে। যে-ভাইকে নিজের আপনজন বলে মনে করত, ভাই না থাকার অভাব মিটিয়ে শুধু প্রিয মানুষের ভাই হওয়ার কারণেই নয়, নিজের আপন ভাই ভেবেছিল, সেও… একটা বড়ো প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে কস্তুরীকে আজ।

তমালের সঙ্গে সম্পর্ক এগোনোর কিছুদিন পরেই জেনেছিল তমাল ধীমান স্যারের বড়ো দাদার বড়ো ছেলে। ওদের বাড়ি নিজের কাকার বাড়ির চাইতে কিছুটা দূরে হওয়ায আর দুভাইযে পড়ার চাপ থাকায় খুব একটা আসা যাওয়া হতো না। কিন্তু কস্তুরীর সঙ্গে আলাপের পর কাকার বাড়ি দুইভাই এলেই নিজের ভাইকে ঘন ঘন কোনও না কোনও ছুতোয় কস্তুরীর বাড়িতে পাঠিয়ে যোগাযোগ রাখত। তমাল চেষ্টা করত যাতে সম্পর্কটা খুব তাড়াতাড়ি জানাজানি না হয়। পরিণতি পায় সারা জীবনের জন্য।

ভুল সবই কি ভুল? মনের মধ্যে এতটা বিষ রেখে দিয়েছিল তমাল? কী করবে কস্তুরী? কোথায় যাবে? সামনে দাঁড়ানো মানুষটা ওর চেনা নয়, সম্পূর্ণ অচেনা একটা পুরুষ। অচেনা গোটা পৃথিবীটা! কস্তুরী দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে…।

শুনতে পায় বাড়ির সকলে ভীষণরকম অসন্তোষ প্রকাশ করছে, হ্যাঁ সবাই বীতশ্রদ্ধ ওর প্রতি। ওদের সম্পর্কের প্রতি।

রাত এখন কটা? অনেক রাত! চারদিক থমথমে। একটা তারাও দেখতে পাচ্ছে না। ভীষণ শীত করছে। ঝিমঝিমে একটা কষ্ট মোচড় দিচ্ছে বুকে। মাটিতে বসে পড়ে ও, চারদিকটা বড্ড অচেনা। পাথরময় মাটি, এমনটা আগে দেখিনি। কোনওদিন নয়। কিন্তু ও তো জেগে, স্বপ্ন নয়। ফিনফিনে শরীরে কাঁপ ধরানো হাওয়াটা কানের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে, ঝিঁঝি পোকার আওয়াজটা একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে জোরালো হয়ে ছেঁকে ধরছে।

মা কোথায়?

ওর দিম্মামা…?

দিম্মামা তো কত দূরে চলে গেছে আজ ছবছর হল। কার কাছে যাবে ও? দিম্মামাকে যে ওর পেটে হাত দিয়ে বলবে ভেবেছিল দ্যাখো, দ্যাখো দিম্মামা তোমার পুতি…।

কী অসহ্য যন্ত্রণায ফেটে যাচ্ছে কপালের ভেতরের শিরা উপশিরা। মাগো…। এটাই কী সেই ভালো দিন! ভালো সময়। সেই যে কবে বলেছিল সেই জ্যোতিষী।

পাতলা একটা হাসি ফুটে ওঠে কস্তুরীর ঠোঁট ঘেঁষে। ওই তো সেই গন্ধটা। আবারও নাক ঘেঁষে আরও তীব্র হচ্ছে। কোথাও নেই। কেউ নেই। মা বাপি, দিদি ওরা তো কতদিন কথা বলে না। সেই যে তমালের বাড়ি এলো তারপর থেকেই…। ভাইও তো অবিশ্বাস করল।

কী গন্ধ। চোখ জ্বলছে। তাকাতে পারছে না। গলা বুকটাও। গন্ধটা…। হ্যাঁ ওটা তো ওরই। সবাই পাচ্ছে। সবাই ওই গন্ধে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। যেমন কস্তুরী হরিণের ওই নাভিগন্ধে মাতাল, পাগল হয় প্রাণিজগত। ঠিক সেরকম। পালাতে হবে। ওকে নিশ্চিত করে পালিয়ে যেতে হবে।

ওই তো সেই ধূর্ত পিশাচ ওর সামনে দাঁড়িয়ে ওকে ডাকছে। দুহাত বাড়িয়ে ইশারা করছে! কে ও? চোখদুটো…। হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ…। ওটা তো বুম্বা স্যার। না না জামাইবাবু। শৈবালদা…।

তমাল…। তমাল তুমি আমার কাছে আসছ না কেন? আমাকে কে ডাকত সেই যে সেই নামটা…।

হরিণ…

হরিণ…

হরিণ…

ধপ করে একটা শব্দ।

উপর থেকে কিছু একটা পড়ায় ঘুমিযে থাকা কুকুর দুটো জেগে আচমকা লাফিযে ওঠে। আর তারপরেই নাক উঁচু করে তীব্র একটা গন্ধ পেয়ে দৌড়ে মিশে যায় অন্ধকারে…

সমাপ্ত

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...