বড়োদের মতো শিশুদের দাঁতের যত্ন নেওয়াও অত্যন্ত আবশ্যক। শৈশবে দাঁত বেরোনার আগে থেকেই মাড়ির যত্ন নিতে হবে এবং দাঁত ওঠার পরেও দুধের দাঁত বলে অবহেলা করলে চলবে না। শৈশবের দাঁতের যত্নই কিন্তু ভবিষ্যতে দাঁত ভালো ও সুগঠিত রাখতে সাহায্য করবে।

বিশেষজ্ঞের মত হল, গর্ভকালীন অবস্থাতেই শিশুর Teeth যত্ন নেওয়া শুরু করে দেওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় মায়েরা অনেকরকম ওষুধ খেয়ে থাকেন। এছাড়াও ঘন ঘন এক্সরে করার কারণেও এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে গর্ভস্থ শিশুর উপর।

সাধারণত শিশুর জন্মের পর ছয় মাস বয়সে প্রথম দাঁত বেরোয়। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে সময়ের সামান্য তারতম্যও ঘটে। শিশুকে ফিডিং বোতলে দুধ খাওয়ালে বোতলের নিপলের চাপে শিশুর নরম মাড়ি উঁচু হয়ে যায়। তাছাড়া বেশির ভাগ শিশুরই অভ্যাস থাকে আঙুল চোষার। এতেও দাঁত উঁচু-নীচু হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। মুখে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হতে পারে আঙুল এবং ফিডার ব্যবহার করার জন্য।

শিশুকে সবসময় দুধ খাওয়ানো হয়ে গেলেই মুখটা ভালো করে পরিষ্কার করে দিতে হবে। পরিষ্কার পাতলা সুতির কাপড় আঙুলে জড়িয়ে মাড়ি সহ মুখ ভালো করে মুছে দেওয়া বাঞ্ছনীয়। ফিডিং বোতলের বদলে ঝিনুক বা চামচে করে দুধ খাওয়ানো বেশি ভালো।

পাঁচ-ছয় মাসে যখন প্রথম, শিশুর Teeth উঠতে আরম্ভ করে তখন শিশুরা হাতের কাছে যা পায় তাই মুখে দিয়ে কামড়াবার চেষ্টা করে। এটাই সঠিক সময়, দাঁতে ব্রাশ ব্যবহার করার। বাচ্চাদের জন্য তৈরি ছোটো মোলায়েম ব্রাশ দিয়ে এইসময় দাঁত ব্রাশ করে দেওয়া উচিত। সামান্য পরিমাণ টুথপেস্ট ব্রাশে লাগিয়ে খুব আস্তে আস্তে ব্রাশ করতে হবে।

অনেক সময় দেখা যায় শিশুর দাঁতে কালো কালো দাগ পড়ে। দাঁতের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে ভেঙে যায় বা দাঁতের মধ্যে গর্ত দেখা দেয়। অনেকে বলেন দাঁতে পোকা লেগেছে। আসলে এটি দাঁতের ক্ষয়রোগ। একটু বেশি বয়সের শিশুরা এই রোগের শিকার হয়। তবে ঠিকমতো Teeth-এর যত্ন নিলে ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

শিশুর দাঁত উঠতে আরম্ভ করলেই মা-বাবার উচিত ব্রাশ করানো। অনেকেই মনে করে শিশুর দুধের Teeth ব্রাশ করানোর কোনও প্রয়োজন নেই কিন্তু ব্রাশ না করলে দাঁতের ক্ষয় হয়। বড়োদেরকেই ব্রাশ করিয়ে দিতে হবে। সফ্‌ট ব্রিসেল-যুক্ত ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। টুথপেস্ট-এর ক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণ ফ্লোরাইড-যুক্ত পেস্ট ব্যবহার করুন, যেটি দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। দাঁত ব্রাশ হয়ে গেলে বাচ্চাকে কুলকুচি করতে শেখান যাতে একটু বড়ো বাচ্চারা অতিরিক্ত টুথপেস্ট গিলে না ফেলে কুলকুচি করে ফেলে দিতে পারে। ব্রাশের উলটো পিঠ দিয়ে শিশুর জিভ এবং তালু পরিষ্কার করে দিন।

ভালো দাঁতের জন্য শিশুর খাওয়া-দাওয়ার উপরেও নজর রাখতে হবে। অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন চকোলেট, আইসক্রিম, কেক-পেস্ট্রি, ক্রিম জাতীয় খাবার, জ্যাম, জেলি, সফট ড্রিংকস প্যাকেটবন্দি ফলের রস— এগুলি খাওয়া থেকে শিশুকে বিরত করতে হবে। মিষ্টি জিনিস থেকে মুখে বেশি ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করলে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে দাঁতের চারপাশে প্লাক তৈরি করে। প্লাকের ব্যাক্টেরিয়া মিষ্টিজাতীয় খাবারকে অ্যাসিডে পরিণত করে দাঁতের ক্ষয় বৃদ্ধি করে।

বেশিরভাগ মায়েরা টিভির সামনে বাচ্চাকে বসিয়ে টিভি দেখাতে দেখাতে খাওয়ান। এর ফলে টিভি-র প্রতি আকর্ষণই বাচ্চার বেশি থাকে এবং কোনওমতে খাবার না চিবিয়ে, গিলে খাবার খাওয়ার প্রবণতাই বেশি দেখা যায়। তাই টিভি-র সামনে না খাইয়ে সকলে মিলে একসঙ্গে খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে বাচ্চার চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে এবং তাতে দাঁতও মজবুত হবে। সারাদিনে দু’বার ব্রাশ করতে শেখানো একান্ত করণীয়।

এগুলো ছাড়াও রেগুলার দাঁত ব্রাশ করার প্রতি বাচ্চার আগ্রহ বাড়াতে শিশুকে সুন্দর ও আকষর্ণীয় ব্রাশ কিনে দিন। দুই-তিন মাসের বেশি এক ব্রাশ ব্যবহার করবেন না এবং মাঝেমধ্যেই পেস্টও বদলে ব্যবহার করবেন। শিশু নিজে থেকে ব্রাশ করা আরম্ভ করলে, ঠিকমতো ব্রাশ করছে কিনা তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা অভিভাবকের দায়িত্ব। প্রতিদিন মাউথওয়াশ ও ফ্লসিং করাও শৈশব থেকে অভ্যাস করানো দরকার, যাতে দাঁত থাকে সমস্যামুক্ত।

একটি বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, শিশুর মুখে দুর্গন্ধ হলে বা দাঁতে কালো দাগ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...