বিয়ের পরে, নববধূ চায় নিজের সৌন্দর্য বজায় রাখতে। তার স্বামীর জন্য বা যে আত্মীয়রা বাড়িতে আসছেন তাদের জন্য নিজেকে সব দিক দিয়ে প্রস্তুত রাখার প্রয়োজন বোধ করে সে। বিয়ের পরেই নববধূর পার্লারে যাওয়া অনেক সময়েই সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে ঘরে বসে কীভাবে মেক-আপ করবেন, নতুন বিবাহিতার তা জেনে রাখা জরুরি, যাতে সে নিজেকে সকলের চোখে সুন্দর করে তুলতে পারে।

আসলে সবসময় খুব বেশি মেক-আপের প্রয়োজন হয় না। তবে Makeup-এর কিছু জিনিস বাড়িতে সবসময় দরকার হয়। কীভাবে একজন নববধূকে সুন্দর দেখাবে এবং তাকে যাতে সুন্দর দেখাতে পারেন সে সম্পর্কে সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ ভারতী তানেজা, নিম্নলিখিত টিপসগুলি শেয়ার করেছেন।

১. মেক-আপ করার আগে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার প্রথম ধাপ হচ্ছে, আপনার ত্বকের যত্ন নেওয়া। ত্বক সুস্থ থাকলে মেক-আপ আরও ভালো দেখাবে। মেক-আপের আগে ত্বককে ভালোভাবে প্রস্তুত করা জরুরি।

২. রাতে ঘুমানোর আগে যে-কোনও অবস্থাতেও মুখ পরিষ্কার করে তারপর ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা পুষ্টিকর ক্রিম বা তেল লাগিয়ে ঘুমাতে হবে। যদি আপনার ত্বক খুব শুষ্ক হয় তবে আপনি ভালো পুষ্টিকর ক্রিম বা তেল প্রয়োগ করতে পারেন। আপনার ত্বক খুব বেশি তৈলাক্ত মনে হলে আপনি পুষ্টিকর ময়েশ্চারাইজারও প্রয়োগ করতে পারেন।

৩. সকালে Makeup লাগানোর আগে ত্বক প্রস্তুত করুন। এজন্য প্রথমে ত্বক পরিষ্কার করুন এবং তারপর তার ওপর টোনার স্প্রে করুন। টোনারটি সর্বদা একটি স্প্রে বোতলে সংরক্ষণ করুন এবং এটি ফ্রিজে রাখুন। আপনি যখনই আপনার ত্বককে টোন করতে চান, এটি ফ্রিজ থেকে নিয়ে মুখে স্প্রে করুন। এবার এটি নিজেই শুকিয়ে যেতে দিন যাতে মুখটি ভালোভাবে টোন হয়। এরপর ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম লাগান। এমন একটি ক্রিম নিন যাতে এসপিএফ অর্থাৎ সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর রয়েছে।

৪. আপনার মেক-আপ কিটে অবশ্যই এমন কিছু জিনিস থাকতে হবে যা আপনার সঙ্গে সবসময় থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি এতে গোল্ড অয়েল রাখুন।

৫. মেক-আপের আগে হাতে ২-৩ ফোঁটা গোল্ড অয়েল নিন এবং ভালো করে মুখে লাগান। ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং তারপরে হাতে ২-৩ ফোঁটা প্রাইমার বেস নিন এবং এটি পুরো মুখে প্রয়োগ করুন। আপনার মুখ মেক-আপের জন্য প্রস্তুত।

৬. পার্লারে মেক-আপ করলে অনেক কিছুই ব্যবহার করা হয়। এখানে আপনাকে একটি বেস দেওয়া হয় এবং তারপরে পাউডার দেওয়া হয়। আপনি যদি বাড়িতে সহজেই মেক-আপ করতে চান তবে আপনার টু-ওয়ে কেক কেনা উচিত। এটি ফাউন্ডেশন এবং পাউডারের মিশ্রণ। এটি প্রয়োগ করার পরে, আপনার পাউডার প্রয়োগ করার দরকার নেই। এর ভিতরে একটি স্পঞ্জ আছে, এটি ভিজিয়ে জল চিপে নিন এবং তারপরে এটি মুখের উপর ভালোভাবে প্রয়োগ করুন। এটি খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হবে এবং আপনাকে আর কিছু করতে হবে না। কয়েক সেকেন্ড মাত্র লাগে এটি প্রয়োগ করতে, এবং চটজলদি আপনি প্রস্তুত হয়ে নিতে পারেন।

৭. আপনার চোখের নীচে ডার্ক সার্কেল বা দাগ থাকলে কনসিলার লাগাতে হবে। কনসিলার লাগানোর পরে, টু-ওয়ে কেক লাগান।

৮. সকলেই Makeup কিটে ব্লাশার রাখেন, কিন্তু যখন আপনার হাতে সময় কম বা হাতের কাছে ব্লাশার নেই, তখন এই কাজের জন্য দ্রুত আপনার লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। আপনি আঙুলে সামান্য লিপস্টিক নিয়ে এটি ব্লাশার হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হবে এবং আপনি, একটি পৃথক ব্রাশ দিয়ে ব্লাশার প্রয়োগ করার সময়ও সাশ্রয় করবেন।

৯. বিয়ের আগে আইল্যাশ এক্সটেনশন করিয়ে নেওয়াই ভালো, যাতে বিয়ের পর মাস্কারা লাগানোর প্রয়োজন না হয়। চোখের পাতা আপনার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। আপনি যদি আইল্যাশ এক্সটেনশন না করিয়ে থাকেন তবে নিজের সঙ্গে এমন মাস্কারা রাখুন যা আপনার চোখের পাতাকে ভলিউম দেবে এবং দৈর্ঘ্য দিতেও সাহায্য করবে। আপনি যদি চোখের পাতার গোড়া থেকে নিয়ে বাইরে অবধি মাস্কারা নিয়ে গিয়ে চোখের পাতা কার্লিং করা অবধি লাগান, তাহলে আপনার চোখের পাতা খুব সুন্দর লাগবে দেখতে।

১০. আপনার চোখের পাতা যদি খুব হালকা হয়, তাহলে সেই সমস্যার জন্য চোখের পাতায় একবার মাস্কারা লাগান। এরপর আঙুলে সামান্য লুজ পাউডার নিয়ে চোখের পাতার উপর ও নীচে প্রয়োগ করুন। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন এবং মাস্কারাটি ডাবল লেপ লাগান। মুহূর্তে আপনার চোখের পাতা পুরু, লম্বা এবং সুন্দর হয়ে উঠবে।

১১. আইশ্যাডো চোখের মেক-আপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্রাশে সামান্য আইশ্যাডো নিন এবং এটি আপনার চোখের উপর লাগান। ভ্রূয়ের ঠিক নীচে হাইলাইটার প্রয়োগ করুন।

১২. চোখকে গাঢ় দেখাতে চাইলে ক্রিজ লাইনের উপরে গাঢ় বা হালকা বাদামি রঙের আইশ্যাডো নিয়ে মারজ করুন। চোখ দেখতে বড়ো এবং সুন্দর লাগবে।

১৩. সহজে আইলাইনার প্রয়োগ করতে, আপনি একটি আইলাইনার প্যান কিনুন। এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আইলাইনার লাগাতে পারবেন। এটির টেক্সচার খুব স্পঞ্জি।

১৪. মাস্কারা কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে, মাস্কারা যেন মসৃণ হয়।

১৫. আপনি কিছু স্টিকার বিন্দিও কিনতে পারেন। এই শৈল্পিক বিন্দি সব ধরনের ডিজাইনে পাওয়া যায় যা আপনি সহজেই প্রয়োগ করতে পারেন।

১৬. চোখের পরে ঠোঁটের মেক-আপ করুন। লিপস্টিক লাগানোর জন্য প্রথমে ঠোঁটের পেন্সিল দিয়ে ঠোঁটের আউটলাইন আঁকুন। যদি এটি সঠিকভাবে কাজ না করে তবে ঠোঁটের পেন্সিলের উপর সামান্য ক্রিম লাগান। তখন এটি খুব মসৃণভাবে কাজ করবে। এবার লিপ লাইন তৈরি করার পর ব্রাশের সাহায্যে লিপস্টিক লাগান। লিকুইড লিপস্টিকও পাওয়া যায় যা আপনি আরও সহজে প্রয়োগ করতে পারেন। লিপস্টিককে দীর্ঘস্থায়ী করতে আপনি ম্যাট লিপস্টিক প্রয়োগ করতে পারেন।

মেক-আপটি দীর্ঘস্থায়ী করতে একটি মেক-আপ সিলার ব্যবহার করুন। এটি মুখে স্প্রে করলে মেক-আপ দীর্ঘস্থায়ী হবে। এর ফলে আপনি নিজেকে সারাদিন সুন্দর দেখাতে পারবেন। অবশেষে, একটি চমৎকার পারফিউম প্রয়োগ করুন এবং আকর্ষণীয় সৌন্দর্য পান।

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...