বোন টিউমার, সফট টিস্যু টিউমার অথবা ক্যান্সার এবং বোন মেটাস্টাসিস তুলনামূলক ভাবে বিরল রোগ।সারকোমা অথবা বোন ক্যান্সার প্রাপ্ত-বয়স্কদের সমস্ত ক্যান্সারের মধ্যে প্রায় ২ শতাংশ থাকে এবং শিশুদের সমস্ত কঠিন ক্যান্সারের মধ্যে এর পরিমাণ হল ২০ শতাংশ। এর ফলে প্রায়ই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট হয়ে যায় এবং অন্যান্য অঙ্গে মেটাস্টাসিস হয়।

বোন ও সফট টিস্যু-সম্পর্কিত ক্যান্সার হল ক্যান্সার রোগের একটি অস্বাভাবিক রূপ। এই রোগটি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ক্রমবর্ধমান সংখ্যার বিষয়ে মণিপাল হসপিটাল সম্প্রতি সাংবাদিক সম্মেলনের  আয়োজন করেছিল। এর লক্ষ্য ছিল বোন ও সফট টিস্যু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে লিম্ব স্পেয়ারিং সার্জারির বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বেঙ্গালুরু-র মণিপাল হসপিটাল-এর অর্থোপেডিক অঙ্কোসার্জারি-র লিড কনস্যাল্ট্যান্ট ডা. শ্রীমন্থ বি এস প্রাথমিক অবস্থাতেই রোগ নির্ণয় ও মূল্যায়ন এবং এই মাস্কিওলোস্কেলিটাল টিউমারগুলির ব্যবস্থাপনায় সাম্প্রতিক অগ্রগতির উপর আলোকপাত করলেন। কয়েকজন বোন ক্যান্সার যোদ্ধাও তাদের পরিচর্যাকারীদের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত থেকে এই রোগকে পরাজিত করার জন্য তাদের সংগ্রাম ও সাহসের কাহিনী জানিয়েছেন।

Dr. Srimanth B S

ক্ষতিকর নয় এমন টিউমার, সফট টিস্যু ও বোনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার এবং মেটাস্টাসিক টিউমারের মতো তিন প্রকারের রোগে আক্রান্ত গড়ে ১০০-১২০ রোগীর চিকিৎসা করে (প্রতি বছর) মণিপাল হসপিটাল । এগুলি হল মাস্কিওলোস্কেলিটাল সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য বিভিন্ন ক্যান্সারের ফল।এই রোগীদের বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা করার প্রয়োজন হয়, যেমন কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি এবং অস্ত্রোপচার। এক্স-রে, এমআরআই স্ক্যান, বায়োপসি এবং পিইটি স্ক্যানের মতো বিভিন্ন স্ক্রিনিং পদ্ধতি ব্যবহার করার পাশাপাশি অন্যান্য ধরণের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত স্ক্রিনিং করার মাধ্যমে স্কেলিটাল সিস্টেমের বিভিন্ন অংশে এই টিউমারগুলির সনাক্তকরণ করা হয়। ব্যথা, ফুলে যাওয়া, এমনকি কখনও কখনও অকারণে অথবা খুব তুচ্ছ কারণে হাড় ভেঙে যাওয়া এই সমস্যাগুলি সনাক্ত করার তিনটি সবচেয়ে সাধারণ উপায়।

মাস্কিওলোস্কেলিটাল টিউমারের ব্যবস্থাপনায় সাম্প্রতিক দশকগুলিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এখন চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির মধ্যে আছে ফাংশন-প্রিজারভিং রিসেকশন এবং জটিল অঙ্গ-পুনর্গঠন। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও প্রাণহানি রোধ করতে প্রথম দিকেই এই ধরণের ক্যান্সারের সনাক্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডা. শ্রীমন্থ বি এস বোন ও সফট টিস্যু টিউমারের সম্ভাব্য নিরাময়ের ক্ষেত্রে লিম্ব স্পেয়ারিং অস্ত্রোপচারের ভূমিকার উপর জোর দেন। তিনি প্রসঙ্গত আরও জানিয়েছেন, ‘মণিপাল কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টারে আমরা একটি মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি পদ্ধতি গ্রহণ করি। এই পদ্ধতিতে ক্যান্সার কেয়ার টিম বোন টিউমার অথবা বোন মেটাস্ট্যাসিসে আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করতে একসঙ্গে কাজ করেন। তারা আক্রান্ত অঙ্গটিকে বাঁচিয়ে রোগটির নিরাময়ের জন্য অস্ত্রোপচার এবং মিনিমালি ইনভেসিভ বিকল্পের (নীচু-গ্রেডের টিউমারের ক্ষেত্রে) প্রস্তাব দেন। এর ফল হল আমরা যে বোন সারকোমাগুলি দেখতে পাই, সেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি একটি উন্নত মানের জীবন এবং বেশ কিছুটা নিরাময় দেয়। এছাড়াও, আমরা আমাদের রোগীদের ক্ষেত্রে সেরা ফলাফল নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি এবং রিহ্যাবিলিটেশন পদ্ধতিও প্রয়োগ করে থাকি।’

ডাঃ শ্রীমন্থ একটি শিশুর সেরে ওঠার কাহিনীর উল্লেখ করেছেন। এই শিশুটির ফিমার বোনের ক্যান্সার, অর্থাৎ অস্টিওসারকোমা হয়েছিল। তার লিম্ব স্পেয়ারিং অস্ত্রোপচার এবং কেমোথেরাপি করা হয়েছিল। যে হাড়টিতে ক্যান্সার হয়েছিল অস্ত্রোপচার করে সেটিকে একটি কৃত্রিম অথবা ধাতব জয়েন্ট দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পরের দিনই শিশুটি নিজেই হাঁটতে পারছিল। অস্ত্রোপচারের স্থানের ক্ষত ভালো ভাবে সেরে যাওয়ার পরে সেই শিশুটির কেমোথেরাপি করা হয়েছিল। ৬ মাসের মধ্যে রিহ্যাবিলিটেশন থেরাপি সম্পন্ন হয় এবং শিশুটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...