বর্ষাকালে লং ড্রাইভে বেরিয়ে পড়া, তেলেভাজা, পকোড়া খাওয়ার মজা, বৃষ্টিতে ভিজে হইহুল্লোড়ের আনন্দ নেওয়া— এসবই আমাদের ভালোলাগা, মন ছুঁয়ে যাওয়া বাসনা। এই আনন্দ অন্য কোনও সময় আর পাওয়া যায় না। এছাড়াও গ্রীষ্মের দাবদাহ কাটিয়ে উঠে বৃষ্টির স্নিগ্ধ ঠান্ডা আবহাওয়া প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মন এবং শরীরকেও ঠান্ডা করে।
কিন্তু এই বর্ষাকালেই নানারকম জলবাহিত অসুখবিসুখ থেকে যেমন আমাদের সাবধান থাকা দরকার, তেমনি এই মরশুমে ত্বকেরও নানা সমস্যা হয়ে থাকে— যার মধ্যে খুব কমন হল ত্বকের অ্যালার্জি(Skin problems)। সুতরাং ত্বকের সঠিক যত্ন যদি এসময় আমরা না করি, তাহলে সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে।
এই সম্পর্কে আলোকপাত করলেন দিল্লির ‘এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস’-এ কর্মরত ডার্মাটোলজিস্ট অমিত ওয়াংগা।
এইসময় ত্বকে কী কী অ্যালার্জির ভয় থাকে?
বর্ষার সময় ত্বকের অ্যালার্জি একটি বড়ো সমস্যা। এইসময় ত্বকের অনেক ধরনের সংক্রমণ হয়ে থাকে। কী ধরনের Skin problems, অ্যালার্জি হয় এবং এটি রোধ করার কী উপায় তাই আজকের আলোচ্য বিষয়।
এগজিমা
খুব বেশি ঘাম হলে, শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে, ত্বকের প্রোটেক্টিভ লেয়ার ড্যামেজ হলে অথবা ত্বক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেললে ত্বকে প্রদাহ, লাল ভাব, চুলকানি, ফুলে ওঠা বা ত্বকের উপরের পরত উঠতে থাকলে রক্ত বেরোনো ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে ঘরোয়া চিকিৎসা অথবা পার্লারের সাহায্য না নিয়ে ডার্মাটোলজিস্ট দেখানো বাঞ্ছনীয়, যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয়। এগজিমা-র কারণে অসম্ভব ব্যথা এবং চুলকানি সৌন্দর্যহানিও ঘটাতে পারে। বর্ষার মরশুমে সাধারণত ডাইশিদরোটিক এগজিমা হয়ে থাকে, যার ফলে ত্বকের ভিতর অনেকগুলি পরতের সৃষ্টি হয়, যেগুলো থেকে ধীরে ধীরে ত্বক পাপড়ির মতো উঠে আসতে থাকে।
কী কী টেস্ট করা প্রয়োজন: এগজিমা হয়েছে কিনা জানতে প্যাচ টেস্ট, অ্যালার্জি টেস্ট করা হয় এবং কিছু কিছু খাবার খেতে বারণ করা হয়, যাতে অ্যালার্জির সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায়।
ট্রিটমেন্ট কী: ত্বক সর্বদা ময়েশ্চারাইজড রাখুন। ত্বকে মাইল্ড সোপ এবং ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। সোপ যাতে ত্বক ড্রাই না করে খেয়াল রাখবেন এবং সুগন্ধি বর্জিত প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ডার্মাটোলজিস্ট টেস্টেড ক্রিম লাগানোই বাঞ্ছনীয়। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধও দিয়ে থাকেন।
যেগুলি করবেন না: খুব বেশি গরমজলে স্নান করা, হার্শ সাবান, ক্রিম, ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার করবেন না। কারণ এগুলি ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নিয়ে ত্বককে আরও বেশি রুক্ষ করে তোলে। সুতরাং ত্বক সবসময় পরিষ্কার এবং ময়েশ্চারাইজড রাখুন যাতে ত্বকে ঘাম জমতে না পারে। সিন্থেটিক পোশাকের বদলে সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরুন এবং শরীরের সংক্রামিত অংশ নখ দিয়ে চুলকাবেন না।
রিংওয়ার্ম
আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে রিংওয়ার্ম অর্থাৎ দাদের মতো Skin problem খুবই কমন। কারণ বর্ষার সময় আবহাওয়ায় বেড়ে যাওয়া আর্দ্র ভাব এবং চিটচিটে ভাব ত্বকে ফাংগাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। প্রথম প্রথম ত্বকে ছোটো লাল রঙের দাগ তৈরি হয়। এটাই বারবার পোশাকের সঙ্গে ঘষা লাগতে লাগতে বড়ো ধরনের সংক্রমণের আকার ধারণ করে।
ট্রিটমেন্ট কী: ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরুন। বাইরে থেকে বাড়ি এসেই স্নান করুন যাতে বাইরের ধুলোময়লা এবং ঘাম ত্বকে থেকে না যায়। ত্বক অবশ্যই ময়েশ্চারাইজ রাখুন।
আন্ডারআর্ম-এ অ্যান্টিফাংগাল পাউডার অ্যাপ্লাই করুন। নিজের থেকে অথবা কেমিস্ট-এর সাহায্য নিয়ে এর চিকিৎসা করবেন না। কেমিস্ট-এর দেওয়া ওষুধে স্টেরয়েডস থাকতে পারে, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলতে পারে।
যেগুলি করবেন না: শরীরের যে জায়গায় সংক্রমণ হয়েছে সেখানে ইরিটেশন হলেও হাত দিয়ে রগড়াবেন না বা বারবার ছোঁবেন না। এতে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া ঘাম হলে বারবার শরীরকে পরিষ্কার করতে থাকুন, নয়তো সংক্রমণ আরও বেশি করে ছড়িয়ে যাবে। এতে সমস্যা আরও বাড়বে।