বর্ষাকালেই নানারকম জলবাহিত অসুখবিসুখ থেকে যেমন আমাদের সাবধান থাকা দরকার, তেমনি এই মরশুমে ত্বকেরও নানা সমস্যা হয়ে থাকে— যার মধ্যে খুব কমন হল ত্বকের অ্যালার্জি (Skin problems)। যেমন –

হাইপারপিগমেনটেশন

বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার ফলে মনসুন সিজন-এ হাইপারপিগমেনটেশন হওয়ার সমস্যা খুব সাধারণ ব্যাপার। এতে মুখের ত্বক নিষ্প্রভ লাগে দেখতে এবং জায়গায় জায়গায় ডার্ক প্যাচ চোখে পড়ে। রোদের সরাসরি সংস্পর্শে আসায় মেলানোসাইটস অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে যায় ফলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়।

মনসুনের মরশুমে সূর্যের তেজ কম থাকলেও অধিক মাত্রায় মেলানিন উৎপাদন হয়। এর ফলে ত্বকে হাইপারপিগমেনটেশন-এর মতো Skin Problems দেখা দেয়। যাদের ত্বক স্পর্শকাতর বা অ্যাকনে প্রোন— তাদের বর্ষায় এই সমস্যা বেড়ে যায়।

ট্রিটমেন্ট কী: সাধারণত বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে আটকাবার জন্য আমরা ভিটামিন ‘এ’ ব্যবহার করতে থাকি। অনেকেরই এটি অজানা যে, সপ্তাহে তিনদিন এটি মুখে লাগালে, হাইপার পিগমেনটেশনের সমস্যা গোড়া থেকে পুরো নির্মূল করা সম্ভব। হাইড্রোকুইনোনও পিগমেনটেশন রোধ করার খুব ভালো একটি উপাদান।

এছাড়াও ভিটামিন ‘সি’-যুক্ত ক্রিমে অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস প্রপার্টিজ থাকার ফলে কোলাজেন-এর উৎপাদন বাড়িয়ে দাগছোপ দূর করে পিগমেনটেশন রোধ করতে সাহায্য করে। এই মরশুমে লাইট ওয়েট, জেল বা ওয়াটার বেসড নন অয়েলি এবং নন কমেডোজেনিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয় কারণ এটি ত্বকের পোস আটকায় না।

যেগুলি করবেন না: রোদের সংস্পর্শে ত্বক যেন সরাসরি না আসে খেয়াল রাখুন। একান্তই বাইরে বেরোতে হলে সানস্ক্রিন লাগান এবং চোখ বাদে সম্পূর্ণ কভার করে বাইরে যান। ত্বক বারবার স্পর্শ করার অভ্যাস ত্যাগ করুন।

স্ক্যাবিস

এটি এক ধরনের সংক্রামক রোগ। যে-কেউই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে তবে বাচ্চারাই বেশি এই রোগের শিকার হয়। খুব সহজে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুদ্র আকারের এক ধরনের কীট থেকে এই রোগ আসে যার ফলে ত্বকে লাল র‍্যাশ, চুলকানি, জ্বালা করা ইত্যাদি সমস্যাগুলি হয়ে থাকে। এই রোগের কীট সোফা, ফার্নিচার ইত্যাদি জায়গাতেও ৪-৫দিন জীবিত থাকে। কেউ এর সংস্পর্শে এলেই তার মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। রাত্রে চুলকানি বেশি হয় এবং চুলকালে ওই জায়গায় ঘা হয়ে যায়, যেটা আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই রোগের লক্ষণগুলি বুঝতে পারলেই সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখানো দরকার।

ট্রিটমেন্ট কী: ডার্মাটোলজিস্ট, পামেথ্রিন ক্রিম লাগাবার পরামর্শ দেন। এটি কীট এবং তার ডিম নষ্ট করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ১ শতাংশ জিবিএইচপি ক্রিম লাগাবারও পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু নিজের ইচ্ছেমতো এটি লাগানো উচিত নয়। ডাক্তাররাই গাইড করেন, এটি কখন কোথায় কীভাবে লাগাতে হবে। নিজে চিকিৎসা করলে এই রোগ সারতে বছর শেষ হয়ে যেতে পারে।

যেগুলি করবেন না: সংক্রামিত জায়গায় হাত লাগাবেন না বা চুলকাবেন না। হাত লাগালে সঙ্গে সঙ্গে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন, যাতে হাত ছোঁয়ালে শরীরের অন্যত্র সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। নিম ট্রি এক্সট্র্যাক্ট-যুক্ত সাবান, ক্রিম এবং তেল ব্যবহার করুন। এটি কীটনাশক হিসেবে কাজ করে। এর সঙ্গে এসেনশিয়াল অয়েল যেমন ক্লোভ অয়েল বা ল্যাভেন্ডার অয়েল সংক্রামিত অংশে লাগান। এটি কীট বিনাশ করে ত্বক ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করবে। অ্যালোভেরা জেলও ত্বকের প্রদাহ এবং চুলকানি দূর করতে সহায়তা করে।

হিট র‍্যাশ

আর্দ্রতা, ঘাম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার খেয়াল ঠিকমতো না রাখলে ত্বকের পোরস বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শরীরের ভিতরে ত্বকের পরত উঠতে থাকে— যে-কারণে, ত্বকে জ্বালা, চুলকানি ইত্যাদি সমস্যা হয়ে থাকে। বাতাসে আর্দ্রতার কারণে ঘাম হলে সেটা ত্বকের সংস্পর্শে যত বেশি সময় পর্যন্ত থাকবে, ততই র‍্যাশ বাড়তে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে। এর জন্য দরকার প্রপার ট্রিটমেন্ট।

ট্রিটমেন্ট কী: বাড়িতে এসেই পোশাক ছেড়ে বিশ্রাম নিন এবং শরীরের তাপমাত্রা নর্মাল হলে ঠান্ডা জলে স্নান করুন। এরপর সেলামাইন লোশনে সামান্য অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এটি ত্বকের ইরিটেশন দূর করে র‍্যাশেজ-এর সমস্যার মোকাবিলা করবে। সবসময় সুতির পোশাক পরুন।

যেগুলি করবেন না: খুব গরমের মধ্যে বাইরে বেরোনো অ্যাভয়েড করতে হবে। এমন এক্সারসাইজ করবেন না যাতে বড়ি বেশি ওয়ার্ম হয়ে যায়। ঢিলে, কমফর্টেবল পোশাক পরার সঙ্গে সঙ্গে শরীরকে ঠান্ডা এবং হাইড্রেটেড রাখুন।

টিনিয়া ক্যাপিটিস

ফাংগাল সংক্রমণের কারণে এই রোগ সাধারণত স্ক্যাল্প, হাত এবং চোখের পাতায় হয়ে থাকে। শরীরের যেখানে যেখানে ময়েশ্চার বেশি জমে, সেখানে এই রোগের বাড়বাড়ন্ত দেখতে পাওয়া যায়। সুতরাং যে-ব্যক্তি বেশি ঘামে তাকেই সাধারণত এই রোগের শিকার হতে হয়।

এই রোগের কারণে চুল পড়ার সমস্যা হয় যার ফলে ওই জায়গায় টাক পড়ে যায়। Skin problems যেমন পুঁজযুক্ত ঘা, ফোলাভাব, ত্বকের লালচে ভাব, জ্বালা, প্যাচি স্কিন ইত্যাদি অন্য সমস্যাও এই রোগের লক্ষণ। ঠিক সময় চিকিৎসা করা না হলে দাগ পড়া থেকে শুরু করে মাথার চুল উঠে ন্যাড়া হয়ে যাওয়ার সমস্যাও হতে পারে।

ট্রিটমেন্ট কী: লাইট ওয়েট অয়েল, ময়েশ্চারাইজার যুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার লাগাবার পরামর্শ দেওয়া হয়। হাইজিনের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে কারণ এই রোগ ছোঁয়াচে। সংক্রামিত ব্যক্তির হেয়ার ব্রাশ, তোয়ালে, পার্সোনাল জিনিস অপর কেউ ব্যবহার করলে, সেই ব্যক্তিরও রোগের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...