আপনি যদি মনে মনে বদ্ধপরিকর হন যে, সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছোবেন— তাহলে পথের কোনও বাধাই আপনাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। তবে কোনও নারী একমাত্র তখনই এই সাফল্য অর্জন করতে পারে, যখন সে নিজের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে সম্পূর্ণ ভাবে সচেতন থাকে এবং লক্ষ্যের প্রতি ফোকাসড থাকে।

যে-কোনও স্টার্টআপ-এর ক্ষেত্রে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের ব্যাবসা শুরু করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আজকের মেয়েরা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, কর্মক্ষমতায় তারা পুরুষদের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। কিন্তু মহিলাদের অগ্রগতির নেপথ্যেও থাকে পুরুষদের সহযোগিতা। কন্যা হিসাবেই হোক, বা স্ত্রী হিসেবে — বাড়ির দায়িত্বশীল পুরুষ মানুষটি যদি তার কাজের মর্যাদা দেয় এবং পথ আটকে দাঁড়ানো সব বাধা অতিক্রম করতে সহযোগিতা না করে, তাহলে এই জার্নি নিশ্চিত ভাবে খুব কঠিন হতে বাধ্য।

অনেক পরিবারে মেয়েদের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় তার বাবা কিংবা দাদা। কোথাও আবার তাকে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা বললেও, অনেক রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থাকাটা মেনে নিতে পারে না পরিবারের মানুষরা। শেষ অবধি হয় পরিবার, নয় কেরিয়ার— দুটোর কোনও একটিকে বেছে নিতে হয় মেয়েটিকে।

ডাবল ইনকাম

এই ধরনের বাধা শ্বশুরবাড়িতে আসতে পারে— এই কথা ভেবেই বহু মেয়ে বিয়ে করতে দ্বিধান্বিত হয়। বিয়ে একটা বাড়তি রেসপনসিবিলিটি, যা তাকে আরও বেশি করে সংসারে আবদ্ধ করবে একথা নিশ্চিত ভাবেই জানে প্রতিটি মেয়ে। কিন্তু আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়াটা আজকের যুগে এর চেয়ে যে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও মেয়েরা বোঝে।

এছাড়া ডাবল ইনকাম অর্থাৎ তার নিজস্ব আয়ও যে তার পরিবার, বা স্বামীর ক্ষেত্রে কতটা সহায়তা করতে পারে, সেটাও তাকেই বোঝাতে হয় নিকটজনদের। কখনও কখনও পরিবার মেনে নেয় মেয়েটির কেরিয়ার তৈরির ইচ্ছা, আবার কখনও তাকে তার কেরিয়ার তৈরির সব স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয়। কিছু কিছু মেয়ে যারা ব্যবসায়ী পরিবার থেকে আসে, অনেক সময় পরিবারের সহযোগিতা পায় শ্বশুরবাড়িতে এসে। তখন তাকে অন্যরা ব্যাবসার কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু কেউ যদি এই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে না এসে, নিজে স্টার্টআপ শুরু করতে চায়— তখন সেই মেয়েটিকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় পরিবারকে এটা বোঝানোর জন্য যে, সে-ও পারে ব্যাবসায় সাফল্য অর্জন করতে।

গ্রুমিং জরুরি

কেরিয়ার কিংবা ব্যাবসা— যেটাই করুন না কেন, মেয়েদের পার্সোনাল গ্রুমিং অত্যন্ত জরুরি। নিজের অ্যাটিটিউড ও সৌন্দর্যের ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। যা-ই করুন, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখুন, টেনশন ফ্রি থাকুন, এনার্জেটিক থাকুন।

কর্মকাল দীর্ঘ করার প্রস্তুতি

যারা নিজেরা ব্যাবসা করেন, রিটায়ারমেন্ট-এর ভাবনা তাদের মাথায় স্থান দিলে হবে না। আগের প্রজন্মের বয়ঃজ্যেষ্ঠদের থেকে বুদ্ধি নিন এবং নিজের আধুনিক মনস্কতা ও কারিগরির সহায়তায় তা বাস্তবায়িত করুন। এই ভারসাম্য রাখা অত্যন্ত জরুরি। অসম্ভব ধৈর্য অধ্যবসায় লাগে নিজের ব্যাবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বদলে ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।

সাফল্যের আসল শর্তই হল মনের সন্তুষ্টি। সাফল্য অর্জন করলে মনে যেমন আনন্দ আসে, তেমনি পরিশ্রম করার ইচ্ছাও বাড়ে। আজকাল মেয়েরা যে ব্যাবসাক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করেছে, তার অন্যতম কারণ হল তাদের ধৈর্য এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা।

মহিলাদের ক্ষমতার শীর্ষে উঠতে হয়তো সময় লাগে কিন্তু একবার ক্ষমতার রাশ তারা হাতে পেলে তার অপব্যবহার করে না। বরং কর্মক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রফেশনালইজম এবং মানবিকতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সফল হয়। ফলে বস হিসাবে, বা সংস্থার উচ্চতম পদে থেকে মেয়েরা অনেক বেশি সম্মানও অর্জন করতে পারে।

সাফল্যের মন্ত্র

সাফল্যের শীর্ষে এসেও যতটা সম্ভব নিরহংকারী জীবনশৈলী অবলম্বন করুন। ফ্যাশন, গয়না, খাওয়াদাওয়া, ভ্রমণ– সবকিছুকেই গুরুত্ব দিন, সম্মান করুন। গান শুনুন, বই পড়ুন, রিল্যাক্সড থাকুন। আর পরিশ্রম করা থেকে কখনও পিছপা হবেন না। এটাই সাফল্যের শেষ কথা।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...