হোম ডেলিভারি-র কারণে বাড়ির মহিলারা এখন বাড়িতে রান্নার পার্ট প্রায় তুলে দিতে বসেছেন। এর ফলে এমন একটা সময় আসবে, যখন খাবারের বিষয়টি পুরো অ্যাপযুক্ত হোম ডেলিভারি-র উপর নির্ভর করবে এবং রান্নাঘরের বিষয়টি আর থাকবে না। অতএব, সংসার খরচও তখন দ্বিগুন হবে।
মা কিংবা বউয়ের হাতে তৈরি খাবারের যে স্বাদ কিংবা যে ভালোবাসার বন্ধন গড়ে ওঠে, তা আগামী দিনে বিরল হয়ে যাবে হয়তো। আর যখন সবই প্রেমহীন হয়ে উঠবে, তখন পরিস্থিতিও এমন হয়ে উঠবে, যা বাড়ির ছাদ ধসে পড়ার মতো। তাই বলা যায়, প্রেমও হয়ে উঠতে চলেছে আরও বাণিজ্যিক। বাজার থেকে শুরু করে পরিবার, সবই চলে যেতে বসেছে পুঁজিপতিদের হাতে। সর্বত্রই চলছে অবাধে লুট।
অ্যাপ-বেসড যতগুলো সংস্থা আছে, তা কিছু সময় গ্রাহকদের নানারকম সুযোগ সুবিধা দিতে গিয়ে কিছু টাকা ক্ষতির শিকার হয়।এই যেমন এক ফুড হোম ডেলিভারি সংস্থা-র একবছরে ক্ষতি হয়েছে ৩,৬২৯ কোটি টাকা। অন্য এক সংস্থাও ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। এর জন্য ওই সংস্থাকে ৫৫০ কোটি টাকা সাহায্য নিতে হয়েছে এক ইনভেস্টর-এর কাছ থেকে। এক বছর আগে ওই সংস্থার ক্ষতি হয়েছিল ১,৬১৭ কোটি টাকা। এর পরেও ওই সংস্থা প্রচুর টাকা ইনভেস্ট করে এবং এক বছরের মধ্যে প্রায় দু’গুন ক্ষতির শিকার হয়৷ মজার বিষয় হল, ওই যে ক্ষতি হওয়া টাকা, তা আজ নয়তো কাল অবশ্যই উশুল করা হবে গ্রাহকদের পকেট থেকেই।কিন্তু যখন বাজার আবার ওদের হস্তগত হয়, তখন ক্ষতি হওয়া টাকার দ্বিগুন টাকা অবশ্যই তুলে নেয় ক্রেতাদের থেকে।
মনে রাখা দরকার, মহিলারা যদি বাড়িতে কোনও কাজ না করেন, তাহলে তাদের শরীর স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে না, ঠিক তেমনই অলস মস্তিষ্ক পরনিন্দা পরচর্চায় ব্যস্ত থাকবে। কিন্তু আগামী দিনে পরিবারের সকলকে সম্ভবত অ্যাপ ব্যবহার করে খাবার ব্যবস্থা করতে হবে।
লোকেরা এখন সুন্দর প্যাকিং দেখে মুগ্ধ হয়ে যান কিন্তু প্যাকেটর ভিতরে যে অস্বাস্থ্যকর খাবার থাকতে পারে, তা আর ভেবে দেখার সময় হয় না কারওর। নতুন বছরে যে-কর্মীরা ১৩ লক্ষ বাড়িতে খাবার ডেলিভারি করে ঘাম ঝরাল, তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য কিংবা আর্থিক নিরাপত্তার কথা ক’জন ভাবে! ৩,৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি শিকার করে যারা বাজার ধরল, তারা কি বিনা স্বার্থে জনসেবা করল বলে মনে হচ্ছে? একটু ভাবলে বুদ্ধিমানরা এর উত্তর পেয়ে যাবেন নিশ্চয়ই।