সন্তান জন্মের পর থেকেই তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে মায়ের সঙ্গে৷ তারপর শিশু এক এক করে পরিবারের বাকি সদস্যদের চিনতে শুরু করে৷নবজাতকরা শুরু থেকেই মায়ের সঙ্গে কথা বলার বা মনের ভাব বোঝানোর চেষ্টা করে৷ওই সময় মায়েরাও প্রকৃতিগতভাবে, instinct থেকেই বুঝে ফেলেন শিশু কী চাইছে৷ যত বেশি শিশুর সঙ্গে কথা বলা হবে, সে তত বেশি করে interactive হয়ে উঠবে৷
এরপর একটা স্টেজ আসে যখন শিশুর মুখ থেকে মা-বাবা কথা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন৷ সেটার জন্য অধৈর্য হলে কিন্তু চলবে না৷ মনে রাখতে হবে, শিশুর মুখে বুলি ফোটার প্রক্রিয়াটি শিশুর অন্যান্য শারীরিক বিকাশের তুলনায় বেশি সময় নিতে পারে। মুখে ভাষা ফোটা শিশুর সামগ্রিক বিকাশের দিকেও ইঙ্গিত করে।
কবে এবং কী ভাবে শিশু কথা বলতে শুরু করে?
শিশু জন্মানোর পর থেকেই ধীরে ধীরে কথা বলার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। শিশুরা যে শব্দ করে থাকে, সে সবই একটু বেশি বয়সে তাদের কথা বলতে সাহায্য করে।ধীর গতিতে বাচ্চার মুখে বুলি ফোটে। তাই শিশুসুলভ ভাষা, যোগাযোগ পদ্ধতি সম্পর্কে অভিভাবকদের জ্ঞান থাকা উচিত। একেকটা বাচ্চার একেক রকম৷ একেকজনের ডেভেলপমেন্ট টাইমিং একেক রকম।
যখনই সময় পাবেন প্রচুর কথা বলুন বাচ্চার সাথে৷বাচ্চা কিছু বলার চেষ্টা করলে বা গলা দিয়ে অন্যরকম আওয়াজ করলে, আপনিও তার মতো করে আওয়াজ করে কিছু বলার চেষ্টা করুন। এতে বাচ্চা মায়ের সাথে আরও কথা বলার চেষ্টা করতে থাকে এবং অনেক শব্দ বুঝতে শেখে।অপনিও তার সাথে সহজ কিছু শব্দ ব্যবহার করে কথা বলুন।সহজ শব্দের উচ্চারণ ওরা রপ্ত করে তাড়াতাড়ি৷
এছাড়া গান করুন, ছড়া শোনান, ছবি দেখান৷শিশুর সাথে কোয়ালিটি time spend করুন৷ বাচ্চারা রিদিম পছন্দ করে৷ গান শুনতে, ছন্দ মেলানো ছড়া শুনতে বা রঙিন ছবি দেখতে খুব ভালোবাসে। টিভি বা কম্পিউটারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে, নিজের গলায় বাচ্চাকে গান গেয়ে শোনান। ছড়া বলতে বলতে নানারকম অঙ্গভঙ্গি করুন। এতে বাচ্চা মজা পেয়ে আপনার দিকেই তাকিয়ে থাকবে এবং ছড়ার শব্দগুলো বোঝার চেষ্টা করবে।
৫ থেকে ২৫ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে যোগাযোগের ভাষা ব্যবহারে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত ছেলে শিশুদের তুলনায় মেয়ে শিশুরা দ্রুত কথা বলতে শেখে।কখনও বাচ্চাকে কথা বলার জন্য চাপ দেবেন না বা ভুল উচ্চারণ করতে থাকলে তাকে বকবেন না। এতে বাচ্চার মনে ভীতি তৈরি হয় এবং বাচ্চা কিছু বলতে চায় না। আবার, বাচ্চা ভুল উচ্চারণ করলে সেটা প্রশ্রয়ও দেবেন না। আধো–আধো বুলিতে ভুল উচ্চারণ খুব ভালো লাগলেও, বড়ো হওয়ার পর কিন্তু একেবারেই ভালো লাগে না।
শিশুর সামনে বারবার পরিষ্কার উচ্চারণে কথা বলুন। কিন্তু যদি কোনো শিশু ১৮ থেকে ২০ মাস পার হওয়ার পরও দিনে ১০টির কম শব্দ বলে বা ২১ থেকে ৩০ মাস পার হওয়ার পর দিনে ৫০টিরও কম শব্দ ব্যবহার করে– তাহলে তাদের ‘লেট টকিং চিলড্রেন’ হিসাবে গণ্য করা হয়।কোনও স্পিচ থেরাপিস্ট-কে কনসাল্ট করুন৷ এই সমস্যাও সলভ হয়ে যাবে৷