যদি বাচ্চার ডায়েটে পুষ্টিকর উপাদানের অভাব হয় তাহলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা মাথা চাড়া দিতে পারে। প্রথমে জানতে হবে আপনার বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য ডায়েটে কী কী পুষ্টিকর উপাদান রাখা জরুরি এবং তার জন্য কোন কোন খাবার বাচ্চার ডায়েটে রাখা জরুরি।
গ্রোয়িং বাচ্চার জন্য জরুরি পুষ্টিকর উপাদান
প্রোটিন: বাচ্চার বিকাশ এবং শারীরিক শক্তির জন্য ডায়েটে প্রোটিন থাকা আবশ্যক। শরীরের কোশ নির্মাণে, খাবারকে এনার্জি-তে বদলাতে, সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি পেতে এবং শরীরের অক্সিজেনের লেভেল সঠিক রাখতে সাহায্য করে প্রোটিন। ভরপুর প্রোটিন পেতে ডাল, সোয়াবিন, ডিম, মাছ, মাংস, চিকেন এবং দুগ্ধজাত সামগ্রী বাচ্চার ডায়েটে রাখা দরকর।
ক্যালসিয়াম: বাচ্চার শরীরের জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান। বাচ্চার হাড়, দাঁত মজবুত করতে প্রয়োজন হয় ক্যালসিয়ামের। ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত পিক বোন মাস তৈরি হয়। সুতরাং মজবুত হাড়ের নির্মাণের জন্য সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম সেবন করা একান্ত জরুরি। বাচ্চাকে দুধ, দই, ছানা ইত্যাদির সঙ্গে অন্যান্য ডেয়ারি প্রোডাক্টসও দেওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম মজুদ রয়েছে। সকালের রোদও শরীরে লাগানোর অভ্যাস তৈরি করুন বাচ্চার, যাতে শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি না হয়।
ফাইবার: ফাইবার শরীরের পাচনতন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শরীর ঠিকমতো খাবার থেকে পুষ্টিকর উপাদান সংগ্রহ করতে পারে। বাচ্চার ডায়েটেও ফাইবার রাখা জরুরি যেমন – ব্রোকোলি, আপেল, পেয়ারা, বাদাম, অ্যাভোকাডো, নাশপাতি ইত্যাদি৷
আয়রন: বাচ্চার সঠিক বিকাশের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান। এটি লোহিত রক্ত কণিকা বাড়াতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি শরীরের সর্বত্র অক্সিজেন পৌঁছোতেও কার্যকরী ভূমিকা নেয়। রক্তাল্পতা অনেক রকম অসুখের সূচনা করে। অন্য দিকে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকলে তা শীঘ্র রক্ত তৈরি করতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি একাগ্রতা এবং মনোযোগেও উন্নতি লক্ষ্য করা যায়।
এই কারণে বাড়ন্ত বাচ্চাদের জন্য আয়রন খুবই জরুরি। সবুজ শাক-সবজি, মাছ, ডিম, মাংস, বিট, আস্ত দানাশস্য, বিনস, বাদাম, ড্রাইফ্লুট্স বাচ্চাদের খাওয়ানো উচিত।
ভিটামিন সি: ভিটামিন সি, সর্দিকাশির সঙ্গে লড়ার ক্ষমতা যেমন রাখে তেমনি এর আরও অনেক গুণ রয়েছে। ভিটামিন সি রক্তবহনকারী শিরা-উপরিশাগুলিকে মজবুত করে, যে-কোনওরকম ঘা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। দাঁত এবং হাড়ও শক্ত করতে সহায়তা করে। বাড়ন্ত বাচ্চার গ্রোথ-এর জন্য ভিটামিন সি প্রয়োজন। যে-কোনও টক ফল, টম্যাটো, স্ট্রবেরি, আম, নাশপাতি, কমলালেবু, ব্রোকোলি, পালংশাক বাচ্চাকে খাওয়ান, শরীর যাতে ভিটামিন সি সংগ্রহ করতে পারে।
ফলেট: অনেকেই হয়তো জানেন না, ফলেট বাড়ন্ত বাচ্চাদের জন্য একটি জরুরি উপাদান। বাচ্চাদের শরীরের কোশ মজবুত করতে এটি সাহায্য করে। এই ভিটামিনের অভাবে বাচ্চারা রক্তল্পতা অর্থাৎ অ্যানিমিয়ার শিকার হতে পারে। বাচ্চাদের শরীরে ফলেট-এর মাত্রা সঠিক রাখতে দানাশস্য, দালিয়া, পালংশাক, ছোলা, মুসুরি ডাল, স্প্রাউটস ইত্যাদি খাওয়ানো দরকার।
কার্বোহাইড্রেট: বাচ্চাদের সুস্থ, স্বাভাবিক বিকাশের জন্য কার্বোহাইড্রেট একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। পেশি গঠনে এবং পেশির রক্ষণাবেক্ষণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নানা ভাবে কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, যেমন শর্করা, স্টার্চ, ফাইবার ইত্যাদি ফর্মে। কিন্তু বাচ্চাদের ফাইবার এবং স্টার্চ বেশি দিয়ে চিনির পরিমাণ কম রাখা উচিত। আলু, পাস্তা, ব্রেড, ভাত, দানাশস্য(Grains) ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে।