দীপাবলি উপলক্ষ্যে বরের কাছ থেকে কী উপহার পাবে, তা আগেই জেনে যায় মিমি। কারণ, মিমির কী চাই তা জেনে নিয়ে সেইমতো উপহার কেনে মিমির বর। কিন্তু বরের এইরকম উপহার কেনার ধরন পছন্দ হয় না মিমির। উপহার পাওয়ায় চমক থাকলেই ভালো লাগে ওর। তাই আগামী দীপাবলিতে উপহার দেওয়ার আগে যাতে জিজ্ঞেস না করে, বরকে সেই অনুরোধ করেছে মিমি।
তবে, মিমির মতো না হলেও, উপহার পাওয়ার ব্যাপারে রুবিরও অন্যরকম সমস্যা রয়েছে। বিয়ের পর প্রথম কয়েকবছর দীপাবলিতে বরের কাছ থেকে ভালো উপহার পেত রুবি। কিন্তু তারপর ব্যস্ততার কারণেই হোক কিংবা যে-কোনও কারণেই হোক, রুবিকে আর উপহার দেয়নি ওর বর। তাই প্রায় পাঁচ বছর উপহার পাওয়া বন্ধ থাকার পর হঠাৎই বরের কাছ থেকে হিরের আংটি উপহার পেয়ে কেঁদে ফেলেছিল রুবি। আর রুবির কান্নার কারণ বুঝতে পেরে ওর বর জানিয়েছিল, পাঁচবছর কোনও উপহার না দিয়ে, টাকা জমিয়ে হিরের আংটি উপহার দিতে পেরেছে সে।
আসলে, মিমি এবং রুবি এই দুই বন্ধুর উপহার পাওয়ার সুখ-দুঃখের বিষয়টিই তুলে ধরা হল মাত্র। কিন্তু উপহার পাওয়া নিয়ে এমন আরও অনেক ঘটনা ঘটে, যা নিয়ে ছোটোগল্পও লেখা যায় অনায়াসে। যেমন— ‘গিফ্ট অফ দ্য ম্যাজাই’ গল্পটির বিষয়ই ধরা যাক। স্বামী এবং স্ত্রী পরস্পরকে ভীষন ভালোবাসে। দু’জনেই চায় একে অন্যকে সেরা উপহার দিতে। কিন্তু হঠাৎ আয় কমে গিয়ে ওরা মনের ইচ্ছেপূরণ করতে পারে না। অবশেষে দুজনে নিজের মতো ভেবেচিন্তে একটা উপায় বের করে। স্বামীর সুন্দর হাতঘড়ির ছেঁড়া বেল্টের পরিবর্তে ভালো বেল্ট উপহার দিতে চায় স্ত্রী এবং স্ত্রীর সুন্দর চুলের পরিচর্যার জন্য ভালো একটা চিরুনি উপহার দিতে চায় স্বামী। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই দুটো ভালোবাসার উপহার দিতে গিয়ে স্ত্রী বিক্রি করে দিয়েছে তার মাথার অমূল্য চুল এবং স্বামী বিক্রি করে দিয়েছে তার দারুণ হাতঘড়িটা। এভাবেই উপহার নিয়ে নানা সুখ দুঃখের স্মৃতি বহন করে চলেন অনেকেই।
আসলে, একজনের সঙ্গে অন্যজনের সম্পর্কের বাঁধন দৃঢ় করে উপহার। তাই কাকে, কখন, কোন্ উপহার দেবেন— তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উপহারের রকমফের
উপহার নানা রকমের হয়। কিন্তু, এই নানারকম উপহার দেওয়া-নেওয়ার বিষয়ে অনেকে বেশ চাপে থাকেন। বিশেষ করে, দীপাবলি উপলক্ষ্যে কী উপহার দেবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না অনেকে। কিন্তু, উপহার এমন হওয়া চাই, যা সবার নজর কাড়বে এবং উপহার প্রাপকের মন জয় করবে। যেমন, স্ত্রীকে স্বামীর এমন উপহার দেওয়া উচিত, যাতে স্ত্রীর মনে খুশির বন্যা বয়ে যায়। অবশ্য শুধু নিজের ক্ষেত্রেই নয়, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে দীপাবলি অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলে কী উপহার দিলে সম্মান রক্ষা হবে এবং সম্পর্ক মজবুত হবে, সেই বিষয়েও অনেকের কপালে ভাঁজ পড়ে।
সবচেয়ে মজার কথা, সবাই চান কম টাকায় ভালো গিফ্ট কিনতে কিন্তু কী কিনবেন তা ঠিক করে উঠতে পারেন না। তবে বিবেচকদের মতে, মোটা টাকার বিনিময়ে উপহার কিনে দিয়ে দম্ভ জাহির না করে, এমন উপহার দিন, যার বিচার মূল্য দিয়ে হবে না, অন্তর ছুঁয়ে যাবে, স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সবাই জানেন, উপহারের রকমফের আছে। যেমন— শো পিস, পেন, ঘড়ি, সানগ্লাস, জামা-প্যান্ট, শাড়ি, সালোয়ার, বেডকভার, ফোটো অ্যালবাম, পুতুল, ফুলদানি, ব্যাগ, ছাতা, ফুলের তোড়া, গিফ্ট ভাউচার প্রভৃতি সাধারণ উপহারের মধ্যে পড়ে। রুচিশীল উপহারের মধ্যে রয়েছে বই, মিউজিক অ্যালবাম, বাদ্যযন্ত্র, কালার টেবিল ল্যাম্প, পেন্টিং, অ্যাকোয়ারিয়াম প্রভৃতি। আর বহুমূল্য উপহারের মধ্যে রয়েছে টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ, মিউজিক সিস্টেম, জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট, গাড়ি, ফিক্সড ডিপোজিট এমন আরও অনেক কিছু। এছাড়া রয়েছে আবেগমিশ্রিত উপহার। যেমন— মা, বাবা, ভাই, বোন কিংবা স্ত্রীর আদেশ কিংবা অনুরোধে ধূমপান কিংবা মদ্যপান ছেড়ে দেওয়া।
সেরা উপহার
প্রত্যেক মানুষই ভিন্ন স্বভাব এবং ভাবধারা নিয়ে বেড়ে ওঠেন। তাই, সবাইকে একইরকম উপহার দিয়ে সমান ভাবে খুশি করতে পারবেন না। অতএব, কে কেমন স্বভাবের এবং কী উপলক্ষ্যে উপহার দিচ্ছেন তা জেনে-দেখে নিয়ে তবেই উপহার দিন। নয়তো, সবই বিফলে গিয়ে আপনি মর্মাহত হবেন। যেমন— কেউ চায় ব্যবহার্য সামগ্রী, কেউ চায় শৌখিন জিনিস, কেউ চায় দামি কিছু, কেউবা আবার হয়তো আবেগমিশ্রিত ব্যক্তিগত কিছু ইচ্ছের বাস্তবায়ন চায় উপহারকে উপলক্ষ্য করে।
আর এই আবেগমিশ্রিত উপহারগুলির মধ্যে হয়তো মনের মানুষের দেশ-দেশান্তরে বেড়ানোর ইচ্ছেপূরণ করতে হতে পারে, তাড়াতাড়ি সন্তান চাইলে তাও দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে কিংবা ভাড়াবাড়ি ছেড়ে স্থায়ী ঠিকানার বন্দোবস্তও করতে হতে পারে। শুধু তাই নয়, ধূমপান, মদ্যপান-এর মতো ‘কুঅভ্যাস’ ত্যাগ করানোকেও অনেকে সেরা উপহার মনে করেন।
যা করা অনুচিত
- ছোটো বাচ্চাকে দামি মোবাইল কিংবা খেলনা আগ্নেয়াস্ত্র উপহার দেবেন না।
- সাধ থাকলেও, যদি সাধ্য না থাকে, তাহলে টাকা ধার করে উপহার কিনে দেবেন না।
- নগদ অর্থ উপহার দিতে চাইলে, খামে না ভরে দেবেন না।
- বাড়িতে একাধিক বাচ্চা থাকলে বিভিন্নরকম উপহার দেবেন না।
- নরম মনের মানুষকে উপহার দেওয়া নিয়ে রঙ্গ-রসিকতা করবেন না কিংবা মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেবেন না।
- উপহার পছন্দ না হলেও, মনে আঘাত দিয়ে কোনও কথা উপহারদাতাকে বলবেন না।
- উপহার দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক বিচার করবেন না।