জীবন হয়তো কবিতার মতো নয়, বরং অনেকটাই গদ্যময়। তবুও জীবনকে ছন্দে বেঁধে রাখতে পারলেই অনেকটা হাসিখুশিতে থাকা যায়। কারণ জীবন কোন খাতে কখন বয়ে চলে, তা আমরা কেউই জানি না। এই যেমন ‘করোনা’ আমাদের জীবন অনেকটাই বদলে দিয়েছে। কত মানুষ তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, কত মানুষ কর্মহীন হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন, কত মানুষের আয় কমে গেছে। কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকে না, সে এগিয়ে চলে তার নিজস্ব ছন্দে। অতএব সময় এবং নদীর মতো জীবনও বহমান। তাই প্রতিকূলতা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারলেই আসবে সাফল্য। কিন্তু কীভাবে, কোন পথে, কোন কৌশলে এগোলে সাফল্যলাভ সম্ভব, তা হয়তো সবার জানা নেই।
সম্পর্ক অটুট রাখুন
জীবনকে সুন্দর করে তুলতে, বড়ো ভূমিকায় থাকে সম্পর্ক। যার সম্পর্কের বাঁধন যত মজবুত, সে জীবনে ততই সফল। মনে রাখবেন, যার যতই অর্থবল থাকুক না কেন, বিপদে পড়লে বোঝা যায় অর্থের পাশাপাশি লোকবলও কতটা প্রয়োজন। আসলে একা মানেই বেশিরভাগ সময় আমরা বোকা হয়ে যাই, বিশেষত বিপদের সময়। তখন সবকিছু জেনেও যেন কেমন অসহায় ভাবে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই। অর্থাৎ, একা থাকলে ঘাবড়ে গিয়ে সঠিক সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না অনেকসময়। শুধু তাই নয়, অসুখ হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আন্তরিক সেবাদান নিজের পরিবারের লোকজন ছাড়া প্রায় সম্ভব নয় বললেই চলে। টাকা দিয়ে লোক রেখে চব্বিশ ঘণ্টা সঠিক ভাবে সেবা নেওয়া সম্ভব হয় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।
অবশ্য শুধু এই বিষয়টি-ই নয়, আর্থিক কষ্টের দিনে কিংবা কোনও জটিল পরিস্থিতির সময় মাথা ঠান্ডা রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষের সাহায্য লাগে। তবে মনে রাখবেন, একতরফা ভালোবাসা পাওয়া যায় না। অন্যের থেকে ভালোবাসা পেতে হলে আপনাকেও আন্তরিক ভাবে ভালোবাসতে হবে অন্যকে। অন্যের বিপদের দিনে অর্থ এবং শ্রম দিয়ে নির্দ্বিধায় সাহায্য করতে হবে আপনাকেও। মনে রাখবেন, সম্পর্ক-ই সবচেয়ে বড়ো সম্পদ জীবনে। সম্পর্কের ভিত যত মজবুত হবে, জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতাও তত সহজেই দূর হয়ে যাবে।
কোনও অসাধু লোক আপনার ক্ষতি করার আগে দু’বার ভাববে এবং ভয় করবে কারণ সে জানে আপনার লোকবল আছে। শুধু তাই নয়, ভালোবাসার লোকজন থাকলে আপনার মনের জোরও অনেক বেড়ে যাবে, কোনও অসহায়তাই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তাছাড়া, সবাই মিলে কাজ করলে সবকাজই অনেক সহজ হয়ে যাবে। আর এই সম্পর্কের ভিত শক্ত করার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন সবার সঙ্গে এবং মাঝেমধ্যে দেখা করে উপহার সামগ্রীও দিন।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন কোনওরকম দূরত্ব না রেখে। সাধ্যমতো পরস্পরকে সময় দিন, ভালোমন্দ ভাগ করে নিন, মেতে থাকুন হইহুল্লোড়ে।
সঞ্চয় করুন
জীবনে সুসম্পর্কের পর সবচেয়ে বড়ো ভূমিকায় থাকে সঞ্চয়ের বিষয়টি। সম্পূর্ণ না হলেও, অনেক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে অর্থ। তাই টাকা জমান সাধ্যমতো। কর্মজীবনের পর থেকে মাথায় রাখুন অর্থ সঞ্চয়ের বিষয়টি। প্রথমে দেখে নিন আপনার মাসিক আয় কত, তারপর সেইমতো ব্যয় করুন। কোন খাতে কত খরচ করতেই হবে তা প্রথমে লিখুন। এরপর মোট খরচের সঙ্গে মিসলেনিয়াস খাতে আরও কিছু টাকা ধরে নিয়ে আয়ের পরিমাণ থেকে সেই টাকা বাদ দিয়ে দেখুন কত টাকা বাঁচাতে পারছেন। যতটুকু টাকা বাঁচাতে পারবেন, সেই টাকা বাড়িতে না রেখে ব্যাংক-এ রাখুন। কারণ, ব্যাংক-এ টাকা রাখলে তা যেমন সুরক্ষিত থাকবে অনেকটাই, ঠিক তেমনই মাসে মাসে সুদের টাকাও হবে বাড়তি পাওনা।
অবশ্য শুধু ব্যাংক-এ টাকা জমানোই নয়, সোনার গয়নাও কিনে রাখতে পারেন। বিপদের দিনে এই স্বর্ণালঙ্কার খুব কাজে লাগবে। এ প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য, কিছুদিন টাকা জমিয়ে জমি কিংবা বাড়িও কিনে রাখতে পারেন। কারণ, জমি-বাড়িও একরকম সঞ্চয়। শুধু তাই নয়, পিএফ বা পিপিএফ-ও বড়ো সঞ্চয়ের মাধ্যম। যারা চাকরি করেন, তারা এই সুবিধা নিতে পারেন। তবে শেয়ারবাজার কিংবা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে ভালো ভাবে খোঁজখবর নেওয়া উচিত।
(ক্রমশ…)