সকলেই জানেন ইতিমধ্যেই সিনেপ্রেমীদের মধ্যে বীভৎস সাড়া ফেলেছে বিধু বিনোদ চোপড়ার ‘টুয়েলভথ ফেইল’।সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর তার ১২তম সপ্তাহ অতিক্রম করে এসেছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এর পরই ঘটেছে মিরাকল৷ ওটিটি রিলিজের পর হঠাৎ করেই চাহিদা বেড়ে গিয়েছে সিনেমাটির। শো বাড়াতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছেন হল মালিকরা।
টুয়েলভথ ফেল সিনেমাটি তার ১২তম সপ্তাহান্ত ও ১১তম সপ্তাহে ৫৫ লাখ আয় করেছে। এদিকে ১০তম সপ্তাহে ছবির আয় ছিল ৩০ লাখ। এখনও পর্যন্ত সিনেমার আয় ৫৫.৩০ কোটি। কত বাজেটে তৈরি আর কত আয় হল এই অনুপাতে হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের অন্যতম সফল সিনেমা টুয়েলভথ ফেল।
একই সঙ্গে ওই সিনেমা ওটিটি-র দর্শকদেরও গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছে। চারদিকে প্রশংসার ঝড়। বিক্রান্ত ম্যাসি অভিনীত এই সিনেমাটি কেবল দর্শকদেরই উৎসাহিত করেনি, সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির বহু তারকাকে অনুপ্রাণিত করেছে। ফিল্ম ক্রিটিকদের থেকেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। সম্প্রতি অভিনেতা হৃতিক রোশন নিজের এক্স হ্যান্ডেল-এ লিখেছেন, ‘অবশেষে টুয়েলভথ ফেল দেখার সুযোগ পেলাম। ফিল্ম মেকিংয়ের ক্ষেত্রে এটি মাস্টারপিস। ছবির সাউন্ড এফেক্ট আমাকে মুগ্ধ করেছে, মুহূর্তগুলিকে এক কথায় অনবদ্য করে তুলেছে। দুর্দান্ত পারফরমেন্স সকলের। মিস্টার চোপড়া, কী একটা সিনেমা বানিয়েছেন! আমি সত্যিকারের অনুপ্রাণিত এই সিনেমা থেকে।’
ইতিমধ্যেই বিক্রান্তকে নিয়ে প্রশংসার সুর শোনা গিয়েছে কঙ্গনা রানাওয়াতের মুখেও। কঙ্গনাকে বলতে শোনা গেছে, ‘বিধু স্যার আমার মন জয় করলেন আবারও। বিক্রান্ত তো অনবদ্য। আগামী দিনে তিনি হয়তো ইরফান খানের শূন্যতা পূরণ করতে পারবেন। ওঁর প্রতিভাকে আমার কুর্নিশ।’
লেখক অনুরাগ পাঠকের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘টুয়েলভথ ফেল’-এর গল্প অবলম্বনে তৈরি এই ছবিটি IPS অফিসার মনোজ কুমারের জীবনকাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত। কী এই গল্প?
দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি রিয়েল লাইফ মনোজ শর্মা। বাড়ি ছাড়ার পর রাত কাটিয়েছিলেন ফুটপাথে। এক ধনীর বাড়িতে পোষ্য সারমেয়র দেখভাল থেকে শুরু করে অটো চালক হিসেবেও দিন গুজরান করেন এই IPS অফিসার। তাঁর জীবনে ছিল লড়াইয়ের ময়দান না ছাড়া এক নাছোড় জেদ। কী ভাবে পাশ করেন ভারতের অন্যতম কঠিন চাকরির পরীক্ষা UPSC?
একবারে পারেননি। ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় বারবার হোঁচট খেয়েছেন মনোজ শর্মা। কিন্তু, কখনও হাল ছাড়েননি তিনি। তাঁর জীবনের অন্যতম মন্ত্র ছিল, ‘জিততে গেলে লড়তে হবে। হারা ওহি জো লড়া নহি।’ এই আপ্তবাক্যকে সহায় করেই সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসেন তিনি।
আসলে UPSC পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন চেপে বসে মধ্য প্রদেশের এই দ্বাদশ ফেল ছেলেটির মাথায়।সেই জন্যই পাড়ি দেন গোয়ালিয়র। এরপর গোয়ালিয়র থেকে সোজা চলে যান দিল্লিতে।প্রথমটায় টেম্পো চালিয়ে, ছোটো-খাটো কাজ করে লড়াই শুরু করেন তিনি। সে সময় তাঁর মাথার উপর ছাদটুকুও ছিল না। ফুটপাথে ভিখারিদের সঙ্গে শুতে হয়েছে মনোজকে।
একবার এক পুলিশ আধিকারিক মনোজ শর্মার অটোটিকে আটক করেন। মহকুমা শাসকের অফিস থেকে অটোটিকে ছাড়িয়ে আনতে পৌঁছোন তিনি। এই একটি সাক্ষাৎ বদলে দেয় তাঁর জীবন। অটো চালানোর সময়, কথা বলতে বলতেই শুরু হয় জীবনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা। কী ভাবে UPSC পরীক্ষায় বসা যায়, কী ভাবে তার প্রস্তুতি নিতে হয় সবটাই ওই আলোচনায় উঠে আসে। মহকুমা শাসক যেন রাতারাতি তাঁর জীবনের গতিপথ বদেল দিয়েছিলেন সেদিন।
একটা সময় লাইব্রেরিতে পিয়োনের কাজ পান তিনি। কাজের সূত্রে বই পড়ার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। সেটাই তাঁকে নয়া দিশা দেখায়। ধীরে ধীরে UPSC-র জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।এরপর UPSC পরীক্ষায় তিনবার ব্যর্থ হন মনোজ শর্মা। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ অ্যাটেম্পট-এ ১২১ ব়্যাংক করেন তিনি। IPS হয়ে মহারাষ্ট্রে কাজে যোগ দেন।
IPS মনোজ কুমার শর্মার বন্ধু অনুরাগ পাঠক তাঁর বই ‘টুয়েলফথ ফেইল, হারা ওহি জো লড়া নেহি’-তে এই লড়াইয়ের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। সেটি থেকেই টুয়েলফথ ফেইল ছবিটি অনুপ্রাণিত।বাণিজ্যিক ধারার ছবি না হওয়া সত্ত্বেও হলে সাড়া ফেলেছে ছবিখানা। আসলে মানুষ ব্যর্থতা থেকে সাফল্য পাওয়ার গল্পই শুনতে চায়৷ সেটার সঙ্গেই সে একাত্ম বোধ করে৷ সেটাই এই ছবির সাফল্যের রহস্য৷