সারাং দর্শনের বই ‘অটলজি: কবিহৃদয়দাচে রাষ্ট্রনেত্যাচি চ্ররিতকাহানি’ থেকে অনুপ্রাণিত এই সিনেমায় বাজপেয়ীর স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে শ্রদ্ধেয় নেতা হয়ে ওঠার যাত্রা সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটি অটল বিহারী বাজপেয়ীর রাজনীতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জীবনের গভীরে ডুব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন পরিচালক। গল্পটি প্রয়াত নেতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে কভার করেছে। ‘Main Atal Hoon’ চলচ্চিত্রের পরিচালনা করেছেন জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী পরিচালক রবি যাদব, যিনি এর আগে মারাঠি ভাষায় তাঁর কাজের জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতেছিলেন। ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘ম্যায় অটল হুন’।
গোটা ছবি জুড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাজপেয়ীর আরএসএসে যোগদান, আইন নিয়ে পড়াশোনা, ভারতীয় জনতা পার্টি গঠন, সংবাদপত্রের সম্পাদনা থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠার দীর্ঘ যাত্রাপথ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার টুকরো ছবি চলচ্চিত্রে রয়েছে যা আমাদের দেশকে আকার দিয়েছে। এটি ভারতে জরুরি অবস্থা, রামজন্মভূমি, পোখরান, লাহোর বাস যাত্রা, কার্গিল এবং ভারতীয় জনতা পার্টি গঠনের মধ্য দিয়ে অটল বিহারী বাজপেয়ীর রাজনৈতিক যাত্রাকে কভার করেছে।
ছবিতে প্রচুর ভারী ভারী সংলাপ রয়েছে। গল্প শুরু হয় ত্রিশের দশকের শেষের দিকে। তারপর ৭০, ৮০ এবং ৯০-এর দশকে ঘুরে বেড়িয়েছে ক্যামেরা। কিন্তু চিত্রনাট্য নিয়ে আরও কাজ করার অবসর ছিল। আর একটা বিষয় হল ছবির গতি। ১৪২ মিনিটের সিনেমার গতি অত্যন্ত ধীর। সিনেমা দেখতে দেখতে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে না। প্রভাব ফেলে না কোনও কিছুতেই। অনেক জায়গায় গানগুলির কোনও প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয় না। মূল চরিত্রে পঙ্কজ ত্রিপাঠীর অভিনয় দেখলে বোঝা যায়, তিনি চরিত্রটিকে প্রত্যাশা মতন ফুটিয়ে তুলতে অসফল হয়েছেন। প্রসথেটিকস মেক-আপ না থাকলে মনে হতো যেন তিনি তাঁর কোনও সিনেমার অন্য একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন। ছবিটা দেখতে দেখতে মনে হয় পঙ্কজ ত্রিপাঠী মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একজন গোষ্ঠীপতির চরিত্রে অভিনয় করছেন। অভিনয়ের বিস্তৃত পরিসরের ক্ষমতাবান এই অভিনেতা দুঃখজনকভাবে এই ছবিতে তাঁর পূর্ববর্তী ছবির চরিত্রগুলিরই ব্যারিটোন এবং উচ্চারণ বহন করেছেন। ফলতঃ বার বার মনে হয়েছে এটি তাঁকে এবং তিনি যে চরিত্রে অভিনয় করছেন, তা ব্যর্থ করেছে। পরিচালক রবি যাদব দেশপ্রেমের জোয়ার বইয়ে দেননি। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বাজপেয়ীর ইমেজ পালটাবার বা দর্শকদের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টাও করেননি তিনি। বাজপেয়ী যেমন, তাঁকে ঠিক সেভাবেই পর্দায় উপস্থাপন করেছেন পরিচালক। সিনেমা করার জন্য যতটা স্বাধীনতা নেওয়া যেতে পারে তার পুরোটারই সদ্ব্যবহার পরিচালক করেছেন। চলচ্চিত্রের মূল আমেজ তাতে নষ্ট হয়নি এতটুকু। চিত্রনাট্য ও পরিচালনার পাশাপাশি লরেন্স অ্যালেক্স-এর দুর্দান্ত সিনেমাটোগ্রাফি রয়েছে এই বায়োপিকটিতে।
ছবিতে সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি এবং প্রমোদ মহাজনের সঙ্গেও পরিচয় করানো হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সূক্ষতার সঙ্গে চরিত্রগুলি চিত্রিত করা হয়নি। চলচ্চিত্রটিতে ভারতীয় জনতা পার্টি সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কোনও উল্লেখ নেই। বাজপেয়ীর রাজনীতিকে তুলে ধরার জন্য, গল্পটি নেহরু এবং ইন্দিরা গান্ধির সেই একই পুরনো গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি বলে মনে হয় যা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার বিষয়। ছবিতে এমন কিছু শট রয়েছে যা আমাদের দেশে ঘটে যাওয়া অতীতের ঘটনাগুলির কথা মনে করিয়ে দেয়।