শিবাজী দত্ত পরিচালিত ছবি ‘খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি’-র মুক্তির আগে, সাউথ সিটি মল-এর এক অভিজাত রেস্তোরাঁয় ছবিটির ট্রেলার এবং মিউজিক লঞ্চ করা হল আনুষ্ঠানিক ভাবে।
পরিচালক শিবাজী দত্ত অনেকদিন ধরেই এমন একটি বিষয় নিয়ে ছবি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। প্রসঙ্গত তিনি জানিয়েছেন, ‘যেখানে বাস্তবতা শেষ হয়, সেখান থেকেই কল্পনার আশ্রয় শুরু হয়। এক শিশু যখন তার বাস্তবের বাবা-মাকে নিজের কাছে পায় না, নিজের আপন কোনও বন্ধু যখন তার থাকে না, তখন সে আশ্রয় নেয় এক কাল্পনিক বন্ধুর। ‘খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি’-র গল্পে তারই এক বাস্তব চিত্র ফুটে উঠবে।’
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই গল্পের মূল চরিত্র পাঁচজন- প্রবোধচন্দ্র (বয়স আন্দাজ ৭০), তার ছেলে অমিতাভ (৪০), অমিতাভের স্ত্রী হেম (৩৫/৩৭) ও অমিতাভের দুই ছেলে মেঘ আর বিদ্যুৎ। প্রবোধচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ‘ক্ষীরোদাসুন্দরী সুইটস্’-এর প্রতিষ্ঠাতা, এখন কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন। চরিত্রের মধ্যে একটা আভিজাত্য ও পরিশ্রমের ছাপ রয়েছে। মনে তার অতীতের স্মৃতি (প্রেম ও বিরহ) এখনও দগদগে। দুই নাতির প্রতি বিরাট স্নেহ। তিনি চান তার ছেলে ও বৌমা তার এবং নাতির সঙ্গে সময় কাটাক কিন্তু ছেলে ও বৌমা সে ক্ষেত্রে উদাসীন। বাড়ির এই শোচনীয় অবস্থা দেখে তিনি নিজেই এক আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকেন। তার একসময় সংসারের প্রতি উদাসীনতাই এর বিরাট কারণ। উনি নিজেও বুঝতে পারেন, সারাজীবন মানুষকে অভিনব মিষ্টির স্বাদের সঙ্গে পরিচয় করাতে গিয়ে, নিজের সংসারের মিষ্টতা তিনি হারিয়ে ফেলেছেন।
প্রবোধবাবুর একমাত্র পুত্র অমিতাভ, বাবার ব্যবসা থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনিই এখন দোকানের দেখাশোনা করেন, কিন্তু সংসারের দেখাশোনা করেন না। বাড়ির লোকেদের প্রতি তার একদম সময় নেই, সম্ভবত তিনি পরিবারের প্রতি সময় দেওয়াকে সময় অপচয় বলে মনে করেন, তার চাইতে বিভিন্ন পার্টি বা সুন্দরী মেয়েদের জন্য সময় ব্যয় করেন। মূলত কোভিড-পরবর্তী সময়ে ব্যাবসা লাভের মুখ দেখার পর পরিবারের প্রতি সময়ের মূল্য আরও কমে গেছে; হয়তো অ্যাপয়েন্টমেন্ট করলে দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। স্ত্রীর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হওয়া নিত্যদিনের ব্যাপার। স্ত্রীর প্রতি একসময় যে ভালোবাসা ছিল, সেটাও নিঃশেষ হয়ে গেছে। বাবা ও দুই ছেলের প্রতিও উদাসীন কিন্তু কখনও রাগ হলে আবার অতি সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
অমিতাভর স্ত্রী হেমনলিনী, নাম ব্যবহারের সুবিধার্থে নিজের নাম কেটে ‘হেম’ করে নিয়েছেন। একটা বড়ো কর্পোরেট ফার্মে চাকরি করেন, তাই আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য তিনি বেশ গর্বিত। কিন্তু স্বামীর কাছে হাত পাতার সময় সেটা আর মাথায় থাকে না। বরের সঙ্গে ঝগড়া চলে এ নিয়ে। অফিসের বসের সঙ্গে একটা ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। হেমের বিশ্বাস, পরিশ্রমের তুলনায় তোষামদই পদোন্নতির একমাত্র চাবিকাঠি। স্বামী সবকিছু জানেন, সে নিয়ে অহেতুক ঝগড়া চলে। শ্বশুর জেনেও কিছু বলতে পারেন না। পরিবারের প্রতি হেমেরও সময় নেই। ছোটো ছেলে বিদ্যুতের প্রতি বেশি স্নেহ তাঁর।
মেঘ, অমিতাভর বড়ো ছেলে, দাদুর যত্নে ও বাবা- মায়ের অবহেলায় নদীতে ভাসা একটা কাগজের নৌকোর মতো জীবন কোনও মতে কাটিয়ে দেওয়া একটা ছেলে। সে চায় সে তার বাবা-মাকে যেন তার কাছে পায়, বাবা-মা যেন তার সঙ্গে সময় কাটায়। কিন্তু ছেলের জন্মদিনে উপহার হিসেবে ছেলের হাতে আই-ফোন ধরিয়ে দেয়। তবে ছেলে সে আই-ফোন ছুঁড়ে ফেলে দেয়। সে আই- ফোন চায়নি, সে তার বাবা-মার সঙ্গে সময় কাটাতে চেয়েছিল কিন্তু বাবা-মা ছেলের এই উচ্ছশৃঙ্খলতার দায় পরস্পরের ঘাড়ে চাপাতে থাকে।
বড়ো ছেলে মেঘ তার বাবা-মাকে একদম কাছে পায় না, যে তার সঙ্গে কথা বলবে, তার সঙ্গে খেলবে, তার সঙ্গে সময় কাটাবে। অতএব সে সাহায্য নেয় এক কাল্পনিক বন্ধুর, যে একটি এআই (Artificial intelligence) অ্যাপ, যেটা তার মার দেওয়া আই-ফোনের মধ্যে একটি আছে। সে যেন মেঘের বাস্তব এক বন্ধুর মতো তার খেয়াল রাখে। তাকে ঘিরেই মেঘ এক কাল্পনিক জগৎ, বা বলা যায়, কাল্পনিক ‘খেলাঘর’ তৈরি করতে থাকে।
সেই বন্ধুই যেন মেঘের সব, সেই মেঘের কাছে এক জীবন্ত বন্ধু, আর বাকি সব নির্জীব। মেঘ তার সঙ্গেই গল্প করে, তার সঙ্গে হোমওয়ার্ক করে, তার সঙ্গে খায়, ঘুমোয়।
মেঘের মধ্যে এই পরিবর্তন তার দাদুর নজরে আসে। সে মেঘের ডায়রি পড়ে সবকিছু জানতে পারে, স্কুলে মেঘ র্যাগিং-এর শিকার আর বাড়িতে, অবহেলার। এই দুই থেকেই বাঁচতে সে নিজের এক কাল্পনিক জগৎ গড়ে নিয়েছে। কিন্তু এরপর কী ঘটবে, তা জানার জন্য ছবিটি দেখতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক।
‘খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি’ ছবিটি তৈরি হয়েছে ‘দ্য নেক্সট আইডিয়াশন এন্টারটেইনমেন্ট’-এর ব্যানারে। শিবাজী দত্ত পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেছেন পার্থসারথি দেব (প্রবোধচন্দ্র মুখোপাধ্যায়), জয় সেনগুপ্ত (অমিতাভ মুখার্জী), বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায় (হেমনলিনী মুখার্জী), প্লাবন দেব (মেঘ), ধ্রুব মুখোপাধ্যায় (বিদ্যুৎ), সকৃত মুখোপাধ্যায় (সাগ্নিক), শ্রীজা ভট্টাচার্য, প্রফেসর রঞ্জন দাস, সুজয় সান্যাল, হৃক্থি মুখোপাধ্যায়, সুমন বসু, প্রীতম দাশগুপ্ত, আল্পনা মজুমদার সাহা প্রমুখ।
ছবিটিতে ব্যবহার করা হয়েছে একটি রবীন্দ্রসংগীত। গেয়েছেন প্রীতম দেবনাথ, অর্জুন রায় এবং পাপিয়া। ছড়া পাঠে (একটি গাছে পাঁচটা চড়াই)- ধ্রুব মুখোপাধ্যায়। ছড়া রচনায়- প্রীতম দাশগুপ্ত। ছবিটির সামগ্রিক সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন প্রীতম দেবনাথ। ‘খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি’ ছবিটি মুক্তি পাবে আগামী ২৪ মে।