সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য অপরিহার্য, বিশেষ করে বর্ষাকালে, যখন মানুষ বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অতএব, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বর্ষাকালে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি খাওয়া জরুরি। বাজারে বিভিন্ন ধরনের তাজা এবং মরশুমি ফল ও সবজি পাওয়া যায়, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ওজন কমানো থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ পর্যন্ত অনেক স্বাস্থ্য-উপকারিতা রয়েছে এইসব তাজা পণ্যের, তাই সেগুলি মিস করা উচিত নয়।

এখানে কিছু সবজি এবং ফলমূলের বিবরণ দেওয়া হচ্ছে, যার গুণাগুণ আপনাকে সুস্থ থাকতে এবং এই বর্ষায় আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

করলা

বাজারে অবশ্য আপনি সারা বছর করলা পাবেন, কিন্তু এটি সাধারণত জুলাই মাসে হয়। করলা রক্তে শর্করা বজায় রাখতে সাহায্য করে, এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ। এগুলিতে ক্যালশিয়ামও বেশি, এমনকী পালং শাকের চেয়েও বেশি। এটি ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ এবং টক্সিনগুলিকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। এটির স্বাদ খুব ভালো নয় বটে, তবে আধা কাপ করলার জুস বর্ষাকালে অপরিহার্য।

শিম

শিম ভারতীয় পরিবারে খুব জনপ্রিয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি এবং কে প্লাস পটাশিয়াম, আয়রন, ফোলেট ও ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ রয়েছে। এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভালো।

ঢ্যাঁড়শ

ট্যাড়শ ফলনের জন্য উষ্ণ আবহাওয়ার প্রয়োজন হয় এবং বাড়তে সময় লাগে। এটি সাধারণত বর্ষাকালে সংগ্রহ করা হয় যখন এটি সবচেয়ে সতেজ থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন সি এবং এ, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং আয়রন রয়েছে। এছাড়াও, ভাজা হলে এটি মুখরোচক!

বিটরুট

আমরা সবাই মাঝেমধ্যে কম হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অনুভব করি। সমস্ত বর্ষাকালীন সবজির মধ্যে বিটরুটই একমাত্র সবজি যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং আয়রনের মতো খনিজগুলি থাকা ছাড়াও, যাদের উচ্চ স্তরের পুষ্টির প্রয়োজন, তাদের জন্য বিটরুট একটি আদর্শ খাদ্য উৎস। রক্ত সঞ্চালন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এটি নিয়মিত ভাবে রস, স্যুপ বা স্যালাড হিসাবে খান। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকার কারণে বিটরুট বর্ষাকালে খাওয়ার জন্য আদর্শ।

লাউ

বর্ষাকালে লাউ সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর সবজি হিসাবে বিবেচিত হয়। লাউ পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, সেইসঙ্গে আছে ভিটামিন বি এবং সি, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে পরিচিত। অধিকন্তু এটি একটি কম ক্যালোরি যুক্ত সবজি, যা ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

সবুজ শাক

যে-কোনও রকম সবুজ সতেজ শাক স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। বর্ষাকালে পাওয়া যায় লাল শাক, সাদা শাক, পুঁই শাক, লেটুস শাক, মেথি শাক, কলমি শাক, শুশুনি শাক প্রভৃতি। আর এগুলি যেহেতু ফাইবার সমৃদ্ধ, তাই পেটের স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। অতএব, বর্ষাকালে অবশ্যই সবুজ-সতেজ শাকসবজি খাবেন। ব্রকোলি, মাশরুম, ক্যাপসিকাম এবং লেটুসের মতো সবজিও খাওয়া উচিত বর্ষাকালে।

আদা

আদায় রয়েছে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। এটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সর্দি-কাশি, গলাব্যথা এবং শরীরের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। চা ছাড়াও, আপনি স্যুপ এবং তরকারিতে আদা যোগ করতে পারেন।

বর্ষার ফলের গুণাগুণ

বর্ষা ভাইরাল সংক্রমণ, অ্যালার্জি এবং ম্যালেরিয়ার মতো অন্যান্য রোগ নিয়ে আসে। বাতাসের আর্দ্রতাও হজম প্রক্রিয়া ধীর করে, হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই, বর্ষায় ফল খেলে হজমের উন্নতি করতে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। তবে, বর্ষাকালে ফলগুলিকে সঠিকভাবে ধুয়ে খাওয়া উচিত। কোন কোন ফল খাবেন, রইল তার বিবরণ—

কালোজাম

কালোজামে রয়েছে ক্যালশিয়াম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপকারী। এছাড়াও, এই ফলটি পেটের সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারে। উপরন্তু, এই ফল রক্ত সঞ্চালন, লিভার ফাংশন এবং কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ফাইবার থাকার পাশাপাশি, কালোজামে রয়েছে আয়রন, যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

লিচু

ভারত লিচু চাষের জন্য আদর্শ। কারণ, এতে জলের পরিমাণ বেশি থাকে। এই ফলের রস সর্দি, অ্যাসিড রিফ্লাক্স এবং হজমের সমস্যাগুলির মতো অসুস্থতার প্রতিকার করতে পারে। লিচু হাঁপানির রোগীদেরও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া লিচু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী হিসেবে সুপরিচিত। লিচুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা অ্যাসিডিটি এবং বদহজমের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়ক। লিচুতে থাকা ভিটামিন সি সাধারণ সর্দি-কাশি প্রতিরোধ করে। এই ফলটি বর্ষার ত্বকের সমস্যা যেমন ব্রণ এবং র‍্যাশের বিরুদ্ধেও সক্রিয়।

শসা

সারা বছর ধরে শসা চাষ করা গেলেও, বর্ষাকাল হল শসা চাষের আদর্শ সময়। শীতল জলবায়ু এবং প্রচুর বৃষ্টির জল শসা গাছের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বর্ষা ঋতুতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে, শসা শরীরকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হাইড্রেশন প্রদান করে। শসা পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং ভিটামিন এ, বি, সি এবং কে সমৃদ্ধ।

খেজুর, বাদাম, আখরোট এবং কাজু

খেজুর, বাদাম, আখরোট এবং কাজু খাওয়ার জন্য যে-কোনও ঋতুই উপযুক্ত সময়। বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে এবং রিবোফ্লাভিন এবং নিয়াসিন উভয়ই সমৃদ্ধ। এগুলির অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য আপনার কোশ সুস্থ রাখে।

ডালিম

ডালিম পুষ্টি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ যা অসুস্থতা প্রতিরোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। ডালিম ফলের ভিটামিন বি লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ায় এবং রক্ত সঞ্চালন সহজ করে।

নাশপাতি

নাশপাতি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এটি বর্ষায় বিশেষ ভাবে সহায়ক কারণ, ১টি নাশপাতিতে আপনার দৈনিক ভিটামিন সি পুষ্টির চাহিদার প্রায় ১২ শতাংশ থাকে।

আপেল

আপেল ভিটামিন এ, বি, বি-টু, সি এবং ফসফরাস, আয়োডিন, ক্যালশিয়াম এবং আয়রনের মতো খনিজগুলির একটি সমৃদ্ধ উৎস। এই ফলটি সারা বছর আপনার শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের জন্য সহায়ক।

চেরি

চেরি হল মরশুমি ফল যা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ। এটি শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক করে তোলে। বর্ষাকালের ফলগুলি কাঁচা খেতে পারেন, জুস হিসাবেও খেতে পারেন কিংবা আপনি কোনও ডেজার্টে যোগ করতে পারেন।

আম

হিমসাগর, দশেরি, তোতাপুরি, কেশর, চৌসা এবং ল্যাংড়া — সব আম-ই পাওয়া যায় জুন থেকে জুলাই মাসে। ১ কাপ আমের রস আপনার দৈনিক ভিটামিন সি এর ১০০ শতাংশ সমান এবং এতে কোনও সোডিয়াম, কোলেস্টেরল বা চর্বি নেই। আমরা জানি ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।

তবে, ফুটপাথে বিক্রি হওয়া কাটা ফল এবং ফলের রস খাওয়া উচিত নয়, কারণ সেগুলি জীবাণুমুক্ত না-ও হতে পারে। এমনকী বাড়িতেও ফল কাটার পর খুব বেশি দেরি করে খাওয়া উচিত নয়।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...