অনেক সময় দেখা যায়, দীর্ঘদিন চাকরি করার পরেও পদোন্নতি হচ্ছে না। কারণ খুঁজলে হয়তো দেখা যাবে, আপনার কর্মদক্ষতা, বুদ্ধি এবং কৌশলের অভাব রয়েছে। তাই, আপনার কর্মজীবনে প্রবেশের আগে আপনার স্বপ্ন কী ছিল, তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পেশাগত দুনিয়ায় আপনি কী করতে চান, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। সেই স্বপ্ন সফল করার জন্যও আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে। আর সেই অনুযায়ী কাজ করা প্রয়োজন। রইল গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ।
আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলুন
আপনার কর্মজীবনের অগ্রগতি নির্ভর করবে আপনার দক্ষতা এবং বুদ্ধি অনুযায়ী। একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার পর থেকেই আপনার তাৎপর্য এবং অবদান আপনি বুঝতে শুরু করবেন। আপনি যা দক্ষতা অর্জন করেছেন, তাতে বিশ্বাস রাখুন এবং কাজের প্রতি আপনার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ রাখুন। এটি আপনার কর্মজীবনের বিকাশ এবং ইতিবাচক কেরিয়ার গ্রাফ তৈরি করতে আপনাকে সহায়তা করবে।
আপনার বস–এর পছন্দকে গুরুত্ব দিন
কর্মক্ষেত্রে একটি গণ্ডির মধ্যে থাকা ভালো। প্রোফেশনাল স্কিল্স আপনার কাজের অঙ্গ। আপনার স্ট্রং কোয়ালিটিগুলিই বসের সামনে তুলে ধরুন। কাজ সময়ে শেষ করুন। কোনও কাজে যদি সমস্যা হয়, আপনার সমস্যার ব্যাপারে সরাসরি আপনার বসকেই সে কথা খুলে বলুন। অন্যথায় আপনার কাজ না জানার বিষয়টা সারা অফিসের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠবে। এই ধরনের কিছু ঘটার থেকে, নিজের না পারাটা আগেই স্বীকার করুন এবং বস-কে আশ্বাস দিন খুব কম সময়ের মধ্যে আপনি সেটা শিখে ফেলবেন। এরপর নিজের দক্ষতা বাড়াতে আর মোটেই দেরি করবেন না। এটা না করে যদি আপনি আপনার বসকে জানান যে, আপনার প্রজেক্ট জমা দিতে দেরি হবে, তাহলে তো তিনি তা শুনবেন না। কারণ আপনার অদক্ষতা আপনার নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এগুলো নিয়ে কখনওই অফিসের বসের সঙ্গে কথা বলা ঠিক নয়। এটার প্রভাব খারাপ হতে পারে।
আপনার Personal Skills বাড়ান
যদি আপনার কিছু পার্সোনাল স্কিল থাকে, তবে আপনার সহকর্মীদের পক্ষেও এটি লক্ষ্য করা সহজ হবে। এই দক্ষতাগুলি আপনার জুনিয়রদের মনের উপরও দীর্ঘ প্রভাব ফেলবে, যা আপনার কেরিয়ারের জন্য নতুন সুযোগও আনতে পারে।
মানুষ যা আপনাকে বলবে, আপনি তা শুধু মনোযোগ দিয়েই শুনবেন না, বরং আপনাকে একজন দক্ষ কমিউনিকেটর-ও হতে হবে। টিম পরিচালনার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ একটি গুণ। শক্তিশালী কমিউনিকেশন-এর দক্ষতা সুষ্ঠুভাবে আপনার কর্মজীবন গড়ে তুলবে এবং আপনার উন্নতির ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। আপনি যদি এগুলি বাস্তবে পরিণত করেন, তবেই আপনি নিশ্চিত থাকতে পারবেন সুফল লাভের বিষয়ে।
জীবনে সাফল্য চান প্রত্যেকেই। আবার এই সাফল্যকামী লোকেরাই, সমস্যায় পড়লে ভয় পেয়ে পিছু হঠেন। কিন্তু নিজের উপর ভরসা থাকলে, জীবনে কোনও প্রতিকূলতাই চাপে ফেলতে পারবে না, সাফল্য আসবেই। অবশ্য এর জন্য সততা, নিষ্ঠা এবং কর্মকুশলতার প্রয়োজন আছে। জীবনের প্রতিটি কাজে কীভাবে সাফল্য আসবে, সেই বিষয়েই রইল কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।
- আজকের কাজ এখনই করুন। কারণ, ‘কাল করব’ ভেবে ফেলে রাখলে সমস্যা তৈরি হতে পারে
- সময়ের মধ্যেই হাতের কাজ সম্পূর্ণ করলে নিশ্চিন্ত থাকা যায় এবং সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়া যায়
- কাজ যাইহোক না কেন, প্রত্যেক কাজই নিষ্ঠা সহকারে করা উচিত
- সবাই আপনার কাজের প্রশংসা করবে এটা ভাববেন না। কারণ, প্রত্যেকেরই দৃষ্টিকোণ আলাদা। তাছাড়া অন্যের কাজের প্রশংসা করার মতো উচ্চ মানসিকতা সবার থাকে না। তাই কাজ করুন ফলের আশা না করে। দেখবেন সাফল্য পাবেন অনায়াসে
- সমস্যা এলে ভেঙে পড়বেন না, মোকাবিলা করুন। প্রয়োজনে শুভাকাঙ্ক্ষীর পরামর্শ এবং সাহায্য নিন
- বিপদে রক্ষা করার জন্য অনেক বন্ধু থাকতে হবে এমন নয়, কিন্তু দু-তিনজন এমন বন্ধু থাকা উচিত, যারা আন্তরিক ভাবে আপনার সুখ-দুঃখে শামিল হবে
- সাফল্যলাভের জন্য কঠিন বাস্তববাদী হওয়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু আবেগকেও আয়ত্তে রাখতে হবে
- সৎ এবং বিশ্বাসী মানুষ হিসাবে নিজের পরিচিতি গড়তে হবে। তাই কোনও কাজ না পারলে আগেই ‘না’ করুন কিন্তু কাজ কিংবা দায়িত্ব হাতে নিয়ে কারও বিশ্বাসভঙ্গ করবেন না
- সমস্ত কাজেই কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, অলস থাকলে কিংবা পরিশ্রম না করলে সৌভাগ্যও বিমুখ হতে পারে কাজ করার সময় সতর্ক থাকতে হবে, যাতে দোষ, ত্রুটি এড়ানো যায়
- সুশাসক হোন ক্ষতি নেই, কিন্তু অযথা অন্যের ক্ষতি করবেন না কিংবা অন্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবেন না। কর্মক্ষেত্রে সদ্ব্যবহার বজায় রাখুন
- সবরকম ক্ষতিকারক নেশা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন
- অযথা লোভ করবেন না এবং লোভের শিকার হবেন না
- নিজের উপর ভরসা রাখুন। কখনও যদি কাজে অসফল হন, তাহলে ভেঙে পড়বেন না। অসাফল্যকে সংশোধনের প্রাথমিক ধাপ ধরে নিয়ে এগোতে হবে
- সাফল্য পেতে শুরু করলেও, অহমিকা প্রকাশ করবেন না। মনে রাখবেন, সাফল্যের শুরুতে অহমিকা প্রকাশ কিন্তু পতনের সূত্রপাত হতে পারে
- সহজে অন্যের কথা বিশ্বাস করে কোনও বড়ো ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন না। সবার মতামত এবং বক্তব্য শুনুন কিন্তু সিদ্ধান্ত নিন বিচারবিবেচনা করে
- কর্মক্ষেত্রে পরনিন্দা-পরচর্চা করবেন না এবং কারওর গোপন কথা শুনে তা অন্যের কাছে বলে বিশ্বাসভঙ্গ করবেন না। এতে অযথা সমস্যায় পড়তে পারেন
- শিক্ষার শেষ নেই। তাই প্রতি মুহূর্তে নতুন ভাবে জ্ঞান অর্জন করুন। সেইসঙ্গে, ছোটো-বড়ো সবার কাছ থেকেই ‘ভালোটা’ নেওয়ার চেষ্টা করুন
- কর্মক্ষেত্রে সর্বদা পরিষ্কার জামাকাপড় পরে যাবেন এবং মনকে পরিচ্ছন্ন রাখবেন।
- ব্যক্তিগত সমস্যা কিংবা কোনও চারিত্রিক দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দেবেন না এবং প্রকাশ করবেন না কর্মক্ষেত্রে। ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন।