সামাজিকতা রক্ষার দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া চলে না। এই পরিস্থিতিতে ভীষণ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায় নিজেকে প্রেজেন্টেবল রাখা এবং একই সঙ্গে ত্বক-কে কুলিং অ্যান্ড রিফ্রেশিং এফেক্ট দেওয়া। এছাড়া, স্কিন ড্রাইনেস-এর সমস্যারও মোকাবিলা করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে স্কিন রিফ্রেশ করার জন্য উপযোগী উপকরণ হতে পারে ফেস মিস্ট। এই বিষয়ে রইল বিস্তারিত আলোচনা।
ফেস মিস্ট আসলে কী?
ইদানীং সৌন্দর্য সচেতন মহিলাদের অত্যন্ত প্রিয় প্রসাধনী হয়ে উঠেছে ফেস মিস্ট। এটায় মজুদ উপকরণগুলি নিমেষে ক্লান্তি দূর করে ত্বকে রিফ্লেশড লুক দিতে সক্ষম। ফেস মিস্ট ইজি টু ইউজ এবং সহজে ক্যারি করা যায়— তাই কর্মরতাদের কাছেও এর চাহিদা অত্যন্ত বেশি। কিন্তু ফেস মিস্ট আসলে কী?
বস্তুত ফেস মিস্ট এক ধরনের স্প্রে, যা অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস, ভিটামিন্স, এক্সট্র্যাক্টস এবং এসেন্সিয়াল অয়েলের গুণে সমৃদ্ধ। ফলে ফেস মিস্ট-এর ব্যবহারে স্কিন সহজেই তার প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে পারে। ত্বক হাইড্রেটেড থাকে এবং এটাই ক্লান্তির ছাপ মুছে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু সঠিক ফলাফল পেতে হলে ফেস মিস্ট ব্যবহার করতে হবে ক্লিনিং ও ময়েশ্চারাইজিং-২-এর মধ্যবর্তী পর্বে। সাবান বা ফেসওয়াশ অ্যালকালাইন হওয়ার ফলে, স্কিনে একটা শুষ্ক ভাব তৈরি হয় এগুলি ব্যবহারের পরে। এই সময় ফেস মিস্ট ব্যবহার করলে ত্বকের পিএইচ লেভেল পুনরায় ভারসাম্য ফিরে পায়।
ত্বকের শুষ্কতা যাদের সারা বছর থাকে, মেক-আপ ঠিকমতো বসতে চায় না, তাদের জন্য অব্যর্থ এই ফেস মিস্ট। কারণ এটা মেক-আপ করার জন্যই নির্মিত। এর হাইড্রেটিং প্রপার্টিজ, মেক-আপের আগে স্কিনের আর্দ্রভাব ফিরিয়ে আনে। ফলে এফেক্ট হয় দুর্দান্ত।
সৌন্দর্য সচেতন নারীমাত্রেই এখন ব্যাগে ফেস মিস্ট ক্যারি করেন। তবে ব্যবহারের আগে জানতে হবে কোন ফেস মিস্ট আপনার ত্বকের জন্য সঠিক। সেই বুঝে এই প্রোডাক্ট নির্বাচন করুন।
শুষ্কতার সমস্যা রোধ করে
আপনার ত্বক যদি প্রকৃতিগত ভাবে শুষ্ক হয়, তাহলে আপনি যে-কোনও ফেস মিস্ট নির্বাচন করবেন না। আপনার এমন ফেস মিস্ট কেনা উচিত, যাতে আছে হ্যালুরোনিক অ্যাসিড, স্কোয়ালেন প্রভৃতি উপকরণ সমৃদ্ধ ফেস মিস্ট, যা স্কিন সেলসগুলি প্লাম্প করার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের শুষ্কতার সঙ্গেও লড়বে। ত্বককে হাইড্রেট করবে এবং স্কিন ড্যামেজও দূর করবে।
ত্বক যদি দীর্ঘক্ষণ সূর্যের তাপে এক্সপোজড হয়, তাহলে তা চূড়ান্ত ভাবে ড্যামেজ হতে পারে। রোদের তাপ, দূষণ এবং ঘামের কারণে ত্বকে প্রদাহ হতে পারে। স্প্রে মিস্ট-এ মজুদ অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস, ভিটামিন ও এক্সট্র্যাক্টস এবং এসেন্সিয়াল অয়েল ত্বকের ড্যামেজ রোধ করতে সক্ষম। এটি ত্বককে দিনভর সুরক্ষিত রাখে, হাইড্রেটেড রাখে। স্কিন সেন্সিটিভিটি ও এজিং-এর সমস্যায় অব্যর্থ।
স্ট্রেস–স্কিনের সমস্যা দূর করে
স্ট্রেসড-স্কিনের জন্য এমন ফেস মিস্ট চয়ন করুন যাতে, ক্যামোমাইন, জোজোবা, অয়েল, এসেন্সিয়াল অয়েল, ল্যাভেন্ডার অয়েল এবং রোজওয়াটার মজুদ রয়েছে। এটি স্কিন ডিস্ট্রেস করে এবং স্কিন সেল্সগুলিকে হেলদি করতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি এজিং উপকরণ
সব মহিলারই সুপ্ত ইচ্ছে হল, তার ত্বকের যৌবন যেন দীর্ঘায়িত হয়। ফলে স্কিনকে ইয়ং লুক দিতে হলে ব্যবহার করতে হবে সঠিক স্প্রে মিস্ট। অনেকে ভুল প্রসাধনী ও ক্ষতিকারক রাসায়নিক যুক্ত কসমেটিক্স ব্যবহার করে স্কিন ড্যামেজ করে ফেলেন। ফলে সময়ের আগেই ত্বকে এজিংয়ের ছাপ পড়ে। প্রমাণিত হয়েছে স্প্রে মিস্ট অ্যান্টি এজিংয়ের গুণে সমৃদ্ধ।
তাই যাদের ত্বকে আর্লি এজিংয়ের সমস্যা রয়েছে তারা চয়ন করুন টি এক্সট্র্যাক্টস, ভিটামিন সি, ই, পমেগ্রানেট এক্সট্র্যাক্ট, আলফা অ্যান্ড বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, গ্রেপফ্রুট এক্সট্র্যাক্ট প্রভৃতি উপকরণে সমৃদ্ধ মিস্ট। এটি অক্সিডেশন স্ট্রেস কমিয়ে, ত্বকের এজিং সমস্যা নির্মূল করে।
ব্লু–লাইট থেকে প্রোটেকশন
আপনি যদি কর্মরতা হন তাহলে দীর্ঘসময় কম্পিউটারের সামনে কাজ করার সম্ভাবনা থাকে। ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, টিভি প্রভৃতি সমস্ত গ্যাজেটেই এখন ব্লু-লাইট থেকে স্কিন প্রবলেম তৈরি হওয়ার আশঙ্কা। এই ব্লু-লাইট থেকে নির্গত ফ্রি র্যাডিকল, স্কিন ড্যামেজ করতে ক্রিয়াশীল থাকে। এই ব্লু-লাইট থেকে স্কিন-কে প্রোটেক্ট করতে হলে আপনাকে বিশেষ ফেস মিস্ট ব্যবহার করতে হবে।
পোরস মিনিমাইজ করতে হলে
একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত সিবাম (তৈলাক্ত পদার্থ) ক্ষরণের জন্য মুখে পোরস হতে পারে। কোনও মহিলার যদি সোয়েট গ্ল্যান্ড থেকে বেশি পরিমাণে তেল উৎপাদন হয়, তাহলে অয়েলি স্কিনজনিত সমস্যা শুরু হয়। এই অবস্থায় স্কিন পোরস মিনিমাইজ করার প্রয়োজন হয়, এর জন্য পাওয়ারফুল অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস-যুক্ত ফেস মিস্ট-ই আপনার প্রয়োজন।
বেস্ট ফেস মিস্ট
O ভ্যানিলা কো-ডিয়োর হাইড্রেশন ফেশিয়াল মিস্ট, যাতে রয়েছে ব্যাম্বু, লোটাস বাটার এবং নিমপাতার এক্সট্র্যাক্ট। এটি স্কিনের হাইড্রেশন লেভেল বুস্ট করতে সক্ষম।
O পাই সেঞ্চুরি ফ্লাওয়ার, লোটাস অ্যান্ড অরেঞ্জ ব্লসম সুদিং টনিক নিউট্রিয়েন্ট রিড ফেস মিস্ট। এটি ওয়াটার বেসড হওয়ার ফলে স্কিন টোন ইমপ্রুভ করতে সহায়ক। স্কিন রিফ্রেশ করে এবং সফট করে।
O ইনিসফ্রি গ্রিন টি মিস্ট, লাইটওয়েট হওয়ার কারণে ব্যবহার করতে সুবিধাজনক। এছাড়া এতে রয়েছে গ্রিন টি-এর গুণাগুণ। এটি হাইড্রেট করার পাশাপাশি স্কিন গ্লোয়িং-এর কাজেও সহায়তা করে। ত্বকের বাড়তি তেল নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম এই ফেস মিস্ট।
O ইনিসফ্রি অ্যালো রিভাইটাল স্কিন মিস্ট। ড্রাই ও পিলিং স্কিনের জন্য বেস্ট বিউটি ট্রিটমেন্ট বলে পরিচিত।
O দ্য বিউটি কোম্পানি অ্যালোভেরা মিস্ট অ্যালকোহল ফ্রি হওয়ার দরুন স্কিনকে করে সুপার হাইড্রেটেড।
O ব্যবহার করুন এসবিবোটানিকা নিউট্রিটিভা পমেগ্রানেট ফেস মিস্ট, যা অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস-এর পাওয়ার হাউস হিসাবে পরিচিত। এটি এজিং রোধ করতে সহায়ক।
O ভিটামিন সি ফেসিয়াল মিস্ট আপনার ত্বক-এর গ্লো বাড়ানোর পাশাপাশি, এজিংয়ের সমস্যাও রোধ করবে। এর অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট প্রপার্টিজ স্কিন সেল্স-এ কোলোজেন উৎপাদন করে এবং এজিংয়ের প্রক্রিয়াকে স্লো করে দেয়।
O আইএলআইএ ব্লু-লাইট প্রোটেকশন মিস্ট— স্কিন হাইড্রেট করতে অব্যর্থ। মেক-আপ সেট করতে হলে এবং ত্বক ব্লু- লাইট তথা দূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখতে হলে, এই ফেস মিস্ট ব্যবহার করুন।
O রেডিয়ান্স মিস্ট, পোরস মিনিমাইজ করতে সক্ষম। এটি স্কিনকে সমস্তরকম ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। ডেড স্কিন এক্সফোলিয়েশন-এও খুবই সহায়ক।